স্প্যানিশ এই দম্পতি ঢাকায় আসতেই ভয় পাচ্ছিলেন, ফেরার সময় যা বলে গেলেন

বেড়াতে আসার আগে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিদেশি পর্যটকেরা যা জেনে আসেন, বেশির ভাগ সময়ই ফেরার আগে তাঁদের সেই ধারণা অনেকটাই বদলে যায়। মানুষের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে আবার বেড়াতেও আসতে চান কেউ কেউ। এমনই একটি গল্প শোনাচ্ছেন তরুণ ট্যুর গাইড মেহেদী হাসান

তরুণ ট্যুর গাইড মেহেদী হাসানের সেলফিতে স্প্যানিশ দম্পতি পেদ্রো ব্যালেস্টেরোস তরেস ও আমালিয়া তরেস
ছবি: মেহেদী হাসানের সৌজন্যে

স্প্যানিশ দম্পতি পেদ্রো ব্যালেস্টেরোস তরেস ও আমালিয়া তরেস দুই দিনের সফরে বাংলাদেশে ঘুরতে আসেন ১৭ জুলাই। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁদের সঙ্গে প্রথম আলাপেই বুঝলাম, দুজনের মনে কী চলছে! তাঁদের চোখেমুখে কেমন যেন একটা ভয়ের ছাপ। পরে কথা বলে জানলাম, আসার আগে গণমাধ্যমে আর পরিচিতমহলে শুনে এসেছেন, ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশ খুব বিপজ্জনক। এ কারণে আমাদের প্রতিবেশী কয়েকটি দেশের জন্য যেখানে ৭ থেকে ১০ দিন করে বরাদ্দ করেছেন, বাংলাদেশের জন্য সেখানে মাত্র ২ দিন। এসব শুনে প্রথমেই তাঁদের যতটা সম্ভব অভয় দিতে চেষ্টা করলাম।

১৮ জুলাই ঢাকা শহর ঘুরতে বের হলাম। ঘুরতে ঘুরতেই তাঁদের মনোভাব পাল্টাতে থাকল। মানুষজন তাঁদের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলছে। একজন খাবার অফার করল। অনেকে তাঁদের সঙ্গে ছবি তোলার জন্য আমার কাছে অনুমতি চাইল। ব্যাপারটা তাঁরা খেয়াল করে বেশ অবাক হলো। কারণ, পাশের দেশে ছবি তোলা নিয়ে দুজনের বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছে। এসব ছোট ঘটনায় দুজনের মনের ভয় কাটতে শুরু করল।

সদরঘাটে আমালিয়া তরেস
ছবি: মেহেদী হাসান

সদরঘাট এলাকায় গিয়েই বলল, ‘ওয়াও, দিস ইজ ইনক্রেডিবল। দিস ইজ আ হ্যাপেনিং প্লেস।’ কৌতূহলী হয়ে প্রশ্ন করতে থাকল, এই মানুষেরা নৌকা পারাপার করে কেন? তারা কি প্রতিদিন এভাবে যাতায়াত করে? ছোট নৌকাগুলো কি রাতেও ঘাটে থাকে, মাঝিদের আয় কেমন, বড় লঞ্চগুলো কোথায় যায়, যেতে কত সময় লাগে...কত প্রশ্ন। তাঁদের এসব প্রশ্ন শুনে বুঝতে বাকি রইল না, সময়টা দুজন খুব উপভোগ করছেন।

সদরঘাট থেকে কেরানীগঞ্জ ডকইয়ার্ডে নিয়ে গেলাম। তখন পেদ্রোর সেকি উচ্ছ্বাস। বললেন, ‘আমার জীবনে আমি এ রকম ব্যতিক্রমী জায়গা দেখিনি।’ শ্রমিকেরা কীভাবে জাহাজ ও লঞ্চ মেরামত করছেন, কীভাবে প্রপেলার বানাচ্ছেন, এগুলো খুব কাছ থেকে দেখলেন।

আরও পড়ুন
লালবাগ কেল্লায়
ছবি: মেহেদী হাসান

দুই দিনের সফরে তাঁদের আহসান মঞ্জিল, লালবাগ কেল্লা, সংসদ ভবন, আর্মেনিয়ান চার্চ, শহীদ মিনার, কার্জন হলসহ বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক জায়গা ঘুরিয়ে দেখালাম। এর মধ্যে সদরঘাট আর ডকইয়ার্ড এলাকা তাঁদের সবচেয়ে ভালো লেগেছে। এসব জায়গা ঘুরতে ঘুরতে তাঁরা জানতে চাইলেন, কিছু মানুষ দাড়ি আর চুল কমলা রং করে কেন? ঢাকার জনসংখ্যা, মানুষের গড় বেতন, বাসের গায়ে এ রকম স্কেচ কেন ইত্যাদি।

১৯ জুলাই সফর শেষে বিমানবন্দরে নামিয়ে দিতে যাব। এমন সময় পেদ্রো বললেন, পর্যটনের ক্ষেত্রে তাঁদের দেখা সবচেয়ে আন্ডাররেটেড দেশ বাংলাদেশ। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন এখানে আছে, সেটাও তাঁদের জানা ছিল না। এরপর অন্তত সাত দিনের জন্য বাংলাদেশ সফরে আসবেন।

আরও পড়ুন