বাঁশের এই ভিলায় এক রাত থাকতে কত খরচ হলো বাংলাদেশি দম্পতির

পাহাড়ের গায়ে বাঁশের তৈরি ভিলা। কোনো দেয়াল নেই, নেই দরজা-জানালা। দুজনের জন্য বানানো হলেও পরিবার নিয়ে চারজনও থাকা যায়। খোলামেলা বাড়িটাতে স্ত্রী শাহারিয়াত শারমীনকে নিয়ে এক রাত ছিলেন রেজাউল বাহার

অনিরিয়া ভিলায় সস্ত্রীক লেখক
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

বালিতে বাঁশ দিয়ে তৈরি বেশ কিছু রিসোর্ট ও প্রাইভেট ভিলা আছে। তেমনই একটি প্রাইভেট ভিলায় থাকার ইচ্ছা। বেশ কয়েক মাস আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু ভিলা দেখে তালিকা করে ফেলি। এর মধ্যে সবচেয়ে পছন্দ হয় ‘অনিরিয়া’। কিন্তু খোঁজ নিতে গিয়ে দেখি, খালি নেই। কিন্তু আমি হাল ছাড়লাম না। মাঝেমধ্যেই ঢুঁ মারতাম, যদি কোনো কারণে খালি হয়! এভাবেই বালি ভ্রমণের মাসখানেক আগে জানতে পারি, একজন বুকিং বাতিল করেছে, আমরা অনিরিয়া ভিলা পাচ্ছি।

বাঁশ দিয়ে তৈরি ভিলাটি
ছবি: লেখক

আমাদের ভ্রমণ তালিকার শততম দেশ ছিল ইন্দোনেশিয়া। মাইলফলকটি উদ্‌যাপন করতে আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল বন্ধুরা। বালি থেকে তারা যখন একে একে বিদায় নিল, আমরা দুজনে চলে গেলাম অনিরিয়া। বালি দ্বীপের পূর্ব দিকে রেনদাং অঞ্চলে এর অবস্থান। এখানে এক রাতের বুকিং খরচ প্রায় ৮৫ হাজার টাকা।

আরও পড়ুন
ভিলাটির কোনো দেয়াল নেই, নেই দরজা-জানালা
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

ড্রাইভার অনিরিয়ার মূল গেটে গাড়ি থামাতেই ভিলার লোকজন আমাদের নিয়ে গিয়ে ছোট্ট একটা কুঁড়েঘরের মতো ভিলায় বসাল। চেক-ইন করার ব্যাপারটা অন্য হোটেল বা রিসোর্টের চেয়ে একটু ভিন্ন। কাগজপত্রের প্রয়োজনীয় কাজ সেরে ম্যানেজার জানাল ভিলাবাসের নিয়মনীতি। যেমন, আমাদের মূল ভিলায় নামিয়ে আসার পর ফোন না করলে কোনো কর্মচারী সেখানে যাবে না। তবে রাতে মূল গেটে নিরাপত্তা প্রহরী থাকবে। ফোন করে বললেই কেবল রাত ও দুপুরের খাবার ব্যবস্থা করবে কর্তৃপক্ষ। আর সকালের নাশতা দেওয়া থাকবে ভিলার পক্ষ থেকে, লাগোয়া পুলে।

নির্দেশনাবলি দেখতে দেখতেই চলে আসি অনিরিয়া প্রাইভেট ভিলায়। চারপাশটা দেখে মনে হলো, অতিথিদের দেখাশোনার জন্য এখানে হয়তো ৬ থেকে ৮ জন কাজ করে। একটিই ভিলা। বালির এই এলাকা পাহাড়ের ওপরে। চারপাশ জনশূন্য। যত দূর চোখ যায়, পাহাড়ের গায়ে ধানের আবাদ। ভিলাটি দুজনে থাকার। পরিবার হলে চারজনের বন্দোবস্ত করা হয়। ভিলায় দেয়াল, দরজা, জানালা কিছু নেই বলে গোপনীয়তার দিকটা ভাবলে পরিবারের বাইরের সদস্য না যাওয়াটাই স্বাভাবিক।

আরও পড়ুন
ভিলার ভেতরটি
ছবি: লেখক

দোচালা ঘর, ওপরটা মাছের পিঠের মতো করে ছাদ দেওয়া। নিচের ফ্লোরে বসার ঘর, পাশেই ছোট রান্নাঘর, খাবারের আলাদা জায়গা, লাগোয়া ছোট পুল, বাইরে গোসলের জন্য আলাদা করে ঘর আর টয়লেট। মূল ফ্লোর থেকে বাঁশের গোলাকৃতির সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে গেলে শোবার ঘর, পানপাতার মতো করে ঘেরা আরও একটি প্রাইভেট গোসল ঘর, ওপর থেকে বাঁশের এক সাঁকো পেরোলেই আলাদা করে বাথটাব বুনোফুলে ঘেরা। ওপরটাতে ঝুলন্ত নেটের বিছানা।

বলা আছে, যারা পোকামাকড় ভয় করে তাদের জন্য এই ভিলা নয়। তবে পোকামাকড়ের আনাগোনা তেমন একটা চোখে পড়ল না।

আরও পড়ুন
ভিলার সুইমিংপুলে ভিজতে ভিজতে উপভোগ করা যায় বালির পাহাড়ি প্রকৃতি
ছবি: লেখকের সৌজন্যে

এভাবেই রাত নামে। নিজের পরিচিত আবাস ছেড়ে হাজারো মাইল দূরে আছি। হোটেলে ঘুমোতে গেলে দরজাটা ভেতর থেকে সাবধানে বন্ধ করে দিই সব সময়। এখানে তো দেয়ালই নেই, দরজা বন্ধ করব কি। চাইলে হালকা একটা কাপড়ের পর্দা টেনে দেওয়া যায়। সে–ও অপ্রয়োজন, চারপাশ জনমানবহীন। পাহাড়ের গা বেয়ে নেমেছে ধানখেত, চারপাশটা গাছপালায় ঘেরা, কয়েকটা নারকেলগাছ অবয়বের মতো দাঁড়িয়ে আছে। আমার ভয় হওয়ার কথা, হচ্ছে না। আকাশে মেঘের ফাঁকে একখণ্ড চাঁদ ভেসে আছে। মাঝেমধ্যে জোনাকি পোকা মিটমিট, এই আছে এই নেই। কারা যেন ডাকছে। শব্দগুলো কানে বাজছে। কী বলছে ঠিক বোঝা যায় না।

শহরে অন্যের কথা শোনার চেয়ে নিজের কথা অন্যকে শোনাতে ব্যতিব্যস্ত সব। জীবনে নীরবতা অন্যকে শুনতে ও বুঝতে সাহায্য করে। এ জন্যই কোলাহল ছেড়ে প্রকৃতির কাছে ফিরে যাওয়া। রাতে এখানে যারা ডাকছে, তারা আর কেউ নয়, তারাই রাতের পোকা। কী অদ্ভুত সেই ডাকাডাকি! কী বলছে তারা? ভাবনাগুলো ঘুরপাক খেতেই চোখ বুজে গেল। পোকারা হয়তো সেটাই চেয়েছিল, চেয়েছিল ঘুম পাড়িয়ে দিতে।