প্রতিটি মহাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ জয়ের অভিযান শুরু করছেন প্রবাল বর্মন
পৃথিবীর সাত মহাদেশের সাতটি সর্বোচ্চ পর্বতচূড়াকে বলা হয় ‘সেভেন সামিট’। এসব পর্বত জয় করতেই এবার ‘মিশন সেভেন সামিট’ শুরু করছেন বাংলাদেশি পর্বতারোহী প্রবাল বর্মন। তিনি তাঁর অভিযানের প্রথম পর্বে যাচ্ছেন আফ্রিকার সর্বোচ্চ পর্বত কিলিমানজারো চূড়ায় আরোহণ করতে।
আজ ৩১ মে রাজধানীর পান্থপথের একটি রেস্তোরাঁয় প্রবাল বর্মনের ‘মিশন সেভেন সামিট’ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে অভিযানের বিস্তারিত তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘চার বছরের লক্ষ্য নিয়ে আমি এই অভিযান শুরু করতে যাচ্ছি। অভিযানের অংশ হিসেবে প্রথমেই যাচ্ছি আফ্রিকার সর্বোচ্চ পর্বত কিলিমানজারো চূড়ায় উঠতে। এ অভিযানে আমার দুই সহযাত্রী চিন্ময় সাহা ও শায়লা শারমিন। এ লক্ষ্যে আগামী ২ জুন বাংলাদেশ থেকে তানজানিয়ায় যাব আমরা। মূল অভিযান করব ৪ জুন।’
অভিযানের পরিকল্পনা বলতে গিয়ে পর্বতারোহণের প্রতি আগ্রহ তৈরি হওয়ার গল্পটাও শোনান প্রবাল বর্মন, ‘২০২১ সালে আমি করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হই। আমার ৮০ শতাংশ ফুসফুস সংক্রমিত হয়ে পড়ে। হাসপাতালে বসে বসে ভাবতাম, নিজের অপূর্ণ ইচ্ছাগুলো পূরণ করতে হবে। তারপর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে সেই ইচ্ছার পেছনে ছুটছি।’
ডাক্তারের পরামর্শে শুরুতে ফুসফুসের সুস্থতায় হালকা ব্যায়াম করতেন প্রবাল বর্মন। তারপর দৌড়, সাইক্লিং, সাঁতারসহ নানা রোমাঞ্চকর কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়ান। দেশের দুর্গম পাহাড়ে যান, হেঁটে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ায় পৌঁছান, এভারেস্ট বেজক্যাম্প ও আইল্যান্ড পিকে অভিযান করেন, ফ্রেন্ডশিপ পিক জয় করেন, সাঁতরে পাড়ি দেন বাংলা চ্যানেল। পর্বতারোহী হওয়ার ইচ্ছাটা পূর্ণতা দিতে গত বছর ভারতের নেহরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেনিয়ারিং থেকে প্রশিক্ষণও নেন।
প্রবাল মনে করেন, ‘মানুষের স্বপ্ন দেখার সক্ষমতা শারীরিক সক্ষমতার চেয়েও শক্তিশালী।’ এই ভাবনাই তাঁকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
প্রবালের এই অভিযানে সহযোগী বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন। সংবাদ সম্মেলনে জ্যোতির্বিজ্ঞান–বিষয়ক সংগঠনটির চেয়ারম্যান মশহুরুল আমিন বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের কাজ জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ে হলেও দেশে অ্যাডভেঞ্চার কর্মকাণ্ড জনপ্রিয় করতে বিভিন্ন সময় নানা উদ্যোগ নিয়েছি। পাহাড়–পর্বতে বিভিন্ন অভিযানও পরিচালনা করেছি। বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য প্রবাল বর্মনের সেভেন সামিট অভিযানে সফলতা কামনা করি।’
সংবাদ সম্মেলনে অতিথিদের মধ্যে ছিলেন পর্বতারোহী মুজিবুর রহমান ও লালন সিদ্দিকী, আয়রনম্যান ইমতিয়াজ এলাহী প্রমুখ।
আফ্রিকার কিলিমানজারো ছাড়া সেভেন সামিটের অন্য পর্বতগুলো হলো এশিয়ার মাউন্ট এভারেস্ট, ইউরোপের মাউন্ট এলব্রুস, উত্তর আমেরিকার ডেনালি, দক্ষিণ আমেরিকার অ্যাকোংকাগুয়া, ওশেনিয়ার পুঞ্চাক জায়া ও অ্যান্টার্কটিকার মাউন্ট ভিনসন।
১৯৮৫ সালে আমেরিকান পর্বতারোহী রিচার্ড বাস প্রথম ব্যক্তি হিসেবে সেভেন সামিট চ্যালেঞ্জ সম্পন্ন করেন। বাংলাদেশের প্রথম পর্বতারোহী হিসেবে এই অভিযান করেছেন ওয়াসফিয়া নাজরীন। বাংলাদেশ অন সেভেন সামিট কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২০১১ সালে ওয়াসফিয়া তাঁর সেভেন সামিট অভিযান শুরু করেন। ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার (ওশেনিয়া) সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কারস্তনেজ পিরামিড (স্থানীয়ভাবে পুঞ্চাক জায়া নামেও পরিচিত) জয়ের মধ্য দিয়ে তা সম্পন্ন করেন।