বর্ষায় বেড়াতে যাওয়ার ৫ গন্তব্য

এই সেদিনও মনে করা হতো, বর্ষায় ভ্রমণ নাস্তি। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে, নিসর্গের যে রূপ এই সময় দেখা যায়, আর কোনো সময়ই তা পাওয়া যায় না। আর কিছু কিছু রূপ তো বর্ষা ছাড়া অন্য মৌসুমে দেখাই যায় না। বর্ষার এমনই পাঁচ গন্তব্যের খোঁজ।

বৃষ্টিমুখর সমুদ্র

বর্ষায় অনেকে ছুটে যান কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে
ছবি: মুনিয়া ইসলাম

বর্ষা মৌসুমের আগমনী সুর বাজার আগে থেকেই কক্সবাজার ও কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে পর্যটকের আনাগোনা কমতে থাকে। বৃষ্টিবাদলের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষ সমুদ্রবিলাসে তেমন একটা আগ্রহী হন না। তাই দুটি এলাকাতেই লোকসমাগম থাকে কম। পর্যটনের ভাষায় এই সময়কে বলে ‘অফ সিজন’। সেই সময়ে পর্যটক টানতে হোটেল-রিসোর্টগুলো ছাড়ও দিয়ে থাকে।

তবে বর্ষা যাঁদের প্রিয়, সমুদ্রের ঘোলা জলের জোরালো ডাক যাঁদের আন্দোলিত করে, তাঁরা ঠিকই ছুটে যান সৈকতের পাড়ে। যথেষ্ট ছাড়ে থাকা-খাওয়ার সুবিধার সঙ্গে তাঁরা পেয়ে যান কোলাহলহীন সৈকতের নির্জন রূপ।

বন

দেশের অন্যতম প্রাকৃতিক পাহাড়ি বনাঞ্চল রেমা-কালেঙ্গা
ছবি: প্রথম আলো

অনেকে বলেন, জ্যোৎস্নায় বর্ষার বনের কোনো তুলনা নেই। অমাবস্যাই-বা কম কী! বর্ষার অন্ধকার রাতে ব্যাঙের অবিশ্রান্ত ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ শুনতে শুনতে বনকোলে ঘুমিয়ে পড়াটাও হতে পারে দারুণ এক অভিজ্ঞতা। হবিগঞ্জের কালেঙ্গা, রেমা বা সাতছড়িতে নিতে পারেন এই অভিজ্ঞতা। আরেকটু দূরে যেতে চাইলে বান্দরবানের সাঙ্গু-মাতামুহুরীর বন, চট্টগ্রামের হাজারীখিল অভয়ারণ্য অথবা রাঙামাটির পাবলাখালী অভয়ারণ্য। তবে বর্ষায় বনে সাপসহ বিভিন্ন পোকামাকড়ের আনাগোনা বেড়ে যায়, এই ভ্রমণে সাবধানতার বিকল্প নেই।

 হাওরে হইচই

‘হাউসবোট’ নামে পরিচিত বিলাসবহুল এসব নৌকাঘর ভ্রমণপিপাসুদের কাছে বেশ জনপ্রিয়
ছবি: পরাগ আহমেদ

বর্ষায় জীয়নকাঠির ছোঁয়ায় যেন জেগে ওঠে হাওর। সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ বা মৌলভীবাজার—যেখানকার হাওরেই যান না কেন, এই বিপুল জলরাশি আপনাকে নিরাশ করবে না। আর এখন তো টাঙ্গুয়ার হাওরে আছে আধুনিক সুবিধা–সংবলিত বাহারি সব হাউসবোট। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওর। কয়েকটি পথ দিয়ে এই হাওরে প্রবেশ করা যায়। তবে সুনামগঞ্জ শহরের সাহেববাড়ি ঘাট ও তাহিরপুর উপজেলার নামাবাজার ঘাট পর্যটকদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয়। এই দুই ঘাটে বিলাসবহুল হাউসবোটসহ ঐতিহ্যবাহী নৌকা ভাড়া পাওয়া যায়। হাওরে ভ্রমণ আরামদায়ক করতে সেখানে যাওয়ার আগেই নৌকা ভাড়ার কাজটি সেরে ফেলতে হবে। নৌকার মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগের ঠিকানা ফেসবুকসহ নানা মাধ্যমে পেয়ে যাবেন। আর যাঁরা হাওরের আদি অভিজ্ঞতা আর অ্যাডভেঞ্চার চান, চিরায়ত সব নৌযান বা উপায়গুলো তো আছেই!

জলপ্রপাত

মৌলভীবাজারের বড়লেখার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত
ফাইল ছবি

বর্ষায় প্রাণ ফিরে পায় জলপ্রপাত, হয়ে ওঠে উচ্ছল। বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, চট্টগ্রাম, সিলেট, মৌলভীবাজারে আছে ছোট-বড় অনেক জলপ্রপাত। নাফাখুম, ধুপপানি, জাদিপাই, হামহাম—নামের মতো রূপেও জলপ্রপাতগুলো অনন্য। গহিন পাহাড়ের এই জলপ্রপাতগুলো দেখতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতেও পিছপা হন না রোমাঞ্চপ্রিয় মানুষেরা। বর্ষায় কোনো জলপ্রপাত দর্শনের পরিকল্পনা আপনিও করতে পারেন।

বর্ষায় বরিশাল

নৌকায় করে পেয়ারা নিয়ে বাজারে যাচ্ছেন একজন কৃষক
ছবি: সজীব মিয়া

বরিশাল, পিরোজপুর ও ঝালকাঠির কয়েকটি উপজেলাকে জালের মতো জড়িয়ে আছে নদ-নদী-খাল। ‘বরিশাল ব্যাকওয়াটার’ নামে পরিচিত এসব এলাকার মানুষের জীবন–জীবিকাও জলনির্ভর। বর্ষায় নৌকাই তাঁদের প্রধান বাহন, নৌকাতেই বসে নিত্যদিনের হাট, জলপথেই আসেন হাটুরেরা। এসব হাটের মধ্যে ঝালকাঠির ভীমরুলি ভাসমান পেয়ারার হাট তো সারা দেশেই পরিচিত হয়ে উঠেছে। বর্ষা মৌসুমে জলমগ্ন এলাকাটা ভিন্ন রূপ ধারণ করে। মধ্য আগস্টে পুরোপুরি জমে ওঠে এই হাট। আশপাশের এলাকার বাগান থেকে তুলে আনা পেয়ারায় সয়লাব হয়ে যায় বাজার। এ সময় পর্যটকের আনাগোনাও বেড়ে যায়। খাল বেয়ে ট্রলার আর ডিঙিনৌকায় এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় ঘুরে বেড়ান তাঁরা। বর্ষায় ঘুরে আসতে পারেন বরিশালের জলমগ্ন এলাকা।

আরও পড়ুন