জেফরি বাওয়ার লুনুগাঙ্গায়

লুনুগাঙ্গায় এসে এ ঘরেই কাজ করতেন জেফরি বাওয়া
ছবি: লেখক

শ্রীলঙ্কার বিশ শতকের প্রখ্যাত স্থপতি জেফরি বাওয়া (১৯১৯-২০০৩)। তাঁর স্থপতি হয়ে ওঠার গল্পও চমকপ্রদ। শুরুতে ছিলেন আইনজীবী। তারপর শখের বাড়ি গড়তে গিয়ে হয়ে ওঠেন স্থপতি। দেশটির নতুন জাতীয় সংসদ কমপ্লেক্সের নকশাকারও তিনি। জঙ্গল অক্ষত রেখে পাঁচ তারকা মানের হোটেল হেরিট্যান্স কান্দালামাসহ শ্রীলঙ্কাজুড়ে অনেক দর্শনীয় হোটেল-রিসোর্টই জেফরি বাওয়ার নকশায় গড়া।

গত ফেব্রুয়ারির কথা। বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনের আমরা ছয় সদস্য শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ গিয়েছিলাম। আমন্ত্রণ জানিয়েছিল শ্রীলঙ্কা ট্যুরিজম প্রমোশন বোর্ড। সরকারি আতিথেয়তায় নানা জায়গায় ঘুরেছি। সফরের এক দিন গেলাম জেফরি বাওয়ার আবাসস্থল লুনুগাঙ্গা এস্টেটে। এখানেই জীবনের ৫০টি বছর তিনি কাটিয়েছেন।

বেনতোতা শহরের ভেতরের দিকে ডেদুয়া হ্রদ পরিবেষ্টিত প্রায় ১৫ একর জমি নিয়ে লুনুগাঙ্গা। লুনুগাঙ্গাকে তাঁর গ্রামের বাড়ি আখ্যা দিয়েছিলেন জেফরি বাওয়া। এখন যা জনপ্রিয় পর্যটনস্থান। অনেক দেশের পর্যটকেরা এখানে আসেন। ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশদের কাছে থেকে জায়গাটা কিনেছিলেন বাওয়া। এটি তখন ছিল রাবারবাগান। তারও আগে ওলান্দাজদের আমলে এটি ছিল দারুচিনিবাগান। ইউরোপীয় স্থাপত্যরীতিতে বাগানবাড়ি বানানোর জন্য জমিটি নিয়েছিলেন জেফরি। মনের মাধুরী মিশিয়ে গড়ে তুলেছেন লুনুগাঙ্গা।

লুনুগাঙ্গা এস্টেটের দুয়ারে মেহগনিগাছ। এস্টেটের বাঁকে বাঁকে, স্থাপনায় সৃজনশীলতার ছাপ। প্রথমেই জেফরি বাওয়ার ওয়ার্কিং স্টেশনে গেলাম। মুগ্ধ করল—কাঁঠাল কাঠের সিন্দুক, পুরোনো সিলিং ফ্যান, কিছু পেইন্টিং, রুমজুড়ে চোখধাঁধানো সংগ্রহযোগ্য জিনিসপত্র। এগুলো দেখতে দেখতে আমাদের জন্য গাইডের ব্যবস্থা হয়ে গেল। ছয়জন সফরসঙ্গী ছিলাম। তবে গাইডেড ট্যুরটি আমরা দুজন নিলাম।

গাইড নিয়ে শুরু হলো রেড গার্ডেন থেকে আমাদের যাত্রা। সন্দেহ নেই বাগানের লাল মাটির জন্য এই নাম। রেড গার্ডেনের এক কোণে একটা ঘণ্টা। ঘণ্টাটি বাজানোর অর্থ ছিল বাওয়ার দুপুরের খাবারের সময় হয়েছে। ওই কোণটায় একটি কংক্রিটের টেবিল আর চারটি লোহার চেয়ার ছিল। খেতে খেতে ওখান থেকে প্রজাপতি আকৃতির পুকুর আর প্রকৃতি দেখতেন বাওয়া। কিছুটা সময় আমরাও উপভোগ করলাম।

মূল বাংলো ছাড়াও গেট হাউস বাংলো, রেড গার্ডেন বাংলোয় পর্যটকদের থাকার সুযোগ রয়েছে। সময় নিয়ে ঘুরলাম পুরো এস্টেট। সে গল্প, ছবিতে...

লুনুগাঙ্গার মূল বাংলোর বারান্দা বসে দারুচিনি উপত্যকার মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যায়
ছবি: লেখক
রেড গার্ডেনের এই টেবিলে দুপুরের খাবার খেতেন জেফরি বাওয়া
ছবি: লেখক
এস্টেটের এমন বৃক্ষতলে দাঁড়ালে প্রশান্তি এনে দেয়
ছবি: লেখক
জেফরি বাওয়ার এস্টেটে পিকক ফার্ন
ছবি: লেখক
স্থানীয় লোকজনের চলাচলের সুবিধার্থে পথ তৈরি করে দিয়েছেন জেফরি বাওয়া
ছবি: লেখক
জেফরি বাওয়ার প্রিয় গাছ কাঁঠালিচাঁপার নিচে
ছবি: সংগৃহীত