দেখার আছে অনেক কিছু

কক্সবাজার শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে বেসরকারি পর্যটনকেন্দ্র মারমেইড বিচ রিসোর্টে রয়েছে বিশাল কচ্ছপ ভাস্কর্য l প্রথম আলো
কক্সবাজার শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে বেসরকারি পর্যটনকেন্দ্র মারমেইড বিচ রিসোর্টে রয়েছে বিশাল কচ্ছপ ভাস্কর্য l প্রথম আলো

কক্সবাজারে সমুদ্র দর্শন ছাড়াও এমন অনেক কিছু আছে যা পর্যটকদের মন ভরাতে পারে। পৃথিবীর দীর্ঘতম সৈকতে স্নান সেরে ছুটতে পারেন টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন বা রামুর পথে। পাহাড় আর অরণ্যঘেরা কক্সবাজারে রয়েছে পদে পদে রোমাঞ্চের হাতছানি। প্রকৃতি এখানে ক্ষণে ক্ষণে রূপ পাল্টায়, কোথাও শান্ত সমাহিত আবার কোথাও বন্য।

হিমছড়ি: কক্সবাজার সৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে দক্ষিণ দিকে মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে ১২ কিলোমিটার গেলে ‘হিমছড়ি ঝরনা’। ঝরনার পাশে পাকা সিঁড়ি বেয়ে হিমছড়ি পাহাড়চূড়ায় উঠলে চোখে পড়বে দিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্র।

হিমছড়ির একটু আগে দরিয়ানগর পর্যটনপল্লি। টিকিট কেটে দরিয়া নগরে প্রবেশ করতে হয় বিশাল হাঙরের মুখ দিয়ে। ভেতরে আছে উঁচু পাহাড়ের নিচে লম্বা একটি প্রাকৃতিক সুড়ঙ্গ, আদি গুহা ও ঝরনা। ইচ্ছে করলে এখানে রাত কাটানো যায়। এখানে থাকার জন্য পাহাড়চূড়ায় আছে বাংলো ও কটেজ। পুরো দরিয়ানগর ঘুরেফিরে দেখতে সময় লাগে দেড় ঘণ্টা।

পাথুরে সৈকত ইনানী: হিমছড়ি থেকে মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে ২০ কিলোমিটার গেলে পাথুরে সৈকত ইনানী। ইনানী সৈকতের মূল আকর্ষণ সারিবদ্ধ এই পাথরের স্তূপ। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট পাথরের স্তূপের কারণেই সৈকতের এমন নামকরণ। ইনানী সৈকতে রাতযাপনের জন্য আছে ভালো মানের বেশ কিছু হোটেল ও মোটেল। ইনানী থেকে দুই কিলোমিটার দক্ষিণে পাটোয়ারটেক সৈকতে তৈরি হয়েছে পাঁচ তারকা হোটেল ‘রয়েল টিউলিপ সি পার্ল বিচ রিসোর্ট’। পাটোয়ারটেক পাহাড়ের নিচে রয়েছে ৩০০ বছরের পুরোনো একটি গুহা। নাম ‘কানা রাজার গুহা’।

সেন্ট মার্টিনের পাশেই আছে আরেক প্রবাল দ্বীপ ছেড়াদিয়া। সেন্ট মার্টিন গেলে বেশির ভাগ পর্যটক ঘুরে আসেন দ্বীপটি l প্রথম আলো
সেন্ট মার্টিনের পাশেই আছে আরেক প্রবাল দ্বীপ ছেড়াদিয়া। সেন্ট মার্টিন গেলে বেশির ভাগ পর্যটক ঘুরে আসেন দ্বীপটি l প্রথম আলো

 ঐতিহাসিক মাথিনের কূপ: দেশের সর্ব দক্ষিণের সীমান্ত শহর টেকনাফ। নাফ নদীর তীরে বলে এই জনপদের এমন নামকরণ। টেকনাফ থানা প্রাঙ্গণে রয়েছে ‘মাথিনের কূপ’। মগ জমিদারকন্যা মাথিনের সঙ্গে সাহিত্যিক ও পুলিশ কর্মকর্তা ধীরাজ ভট্টাচার্যের প্রেমকাহিনির নিদর্শন এই কূপ। পুলিশের তথ্যমতে, বছরে অন্তত ছয় লাখ পর্যটক এই কূপ পরিদর্শন করেন। কূপের পাশে বাংলা ও ইংরেজিতে কূপের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস–সংবলিত ফলক স্থাপন করা হয়েছে।

মাথিনের কূপ থেকে দুই কিলোমিটার পশ্চিমে টেকনাফ সমুদ্রসৈকত। এ ছাড়া নাফ নদীর তীরে গেলে দেখতে পাবেন দেবতার পাহাড় ‘নেটং’। এ পাহাড়ে আছে ঐতিহাসিক ব্রিটিশ বাংকার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সেনারা এই বাংকারে বসে মিয়ানমারে অবস্থান নেওয়া জাপানি সেনাদের ওপর নজরদারি করত।

টেকনাফের মুছনী এলাকায় আছে প্রাকৃতিক গাছগাছালির নেচার পার্ক, হারি খেদা, কুদুম গুহা, চাকমাপল্লি, শতবর্ষী গর্জনের বন ইত্যাদি। এ ছাড়া সারিবদ্ধ নারকেল ও সুপারিবাগান, বৌদ্ধ বিহার-মন্দির, পানের বরজসহ অনেক কিছুই দেখতে পাবেন এখানে এলে।

নীল জলের প্রবাল দ্বীপ: অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন। টেকনাফ থেকে প্রায় ৩৪ কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের বুকে এই দ্বীপের অবস্থান। দ্বীপের চারদিকে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে প্রবাল, পাথর আর শামুক–ঝিনুক। দেখতে পাবেন সারি সারি নারকেল বাগান ও কেয়াগাছ, সমুদ্র উপকূলে মাছ শিকারে ব্যস্ত গাঙচিল। দ্বীপের সৈকতে দেখতে পাবেন কাঁকড়া ও কচ্ছপ।

সেন্ট মার্টিনে থাকার জন্য আছে শতাধিক হোটেল, মোটেল ও কটেজ। ভাড়া ৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকা। টেকনাফ থেকে জাহাজে করেই নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগর অতিক্রম করে সেন্ট মার্টিন যেতে হয়। আসা-যাওয়ার জাহাজ ভাড়া জনপ্রতি ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা।

রামু: চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে যাওয়ার পথে পড়ে রম্যভূমিখ্যাত রামু উপজেলা। সড়কের দুপাশে সুদৃশ্য সারি সারি রাবার বাগান। এখানে দেখতে পাবেন বৌদ্ধদের কিয়াং, রাখাইনদের মন্দির, রামকোট বনাশ্রম, তীর্থধাম, জগৎজ্যোতি শিশুসদন ও নারকেল বাগান। এখানকার পাহাড়ের চূড়ায় স্থাপন করা হয়েছে দেশের বৃহৎ ১০০ ফুট লম্বা সিংহ শয্যার গৌতমবুদ্ধ মূর্তি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা এই মূর্তি দেখতে পারেন।

 মহেশখালী: বঙ্গোপসাগরের তীরে পাহাড় আর অরণ্যঘেরা দ্বীপ মহেশখালী। কক্সবাজার শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১৫ কিলোমিটার। যেতে হয় সমুদ্র পাড়ি দিয়ে স্পিডবোট কিংবা ট্রলারে। সময় লাগে ১৫ থেকে ৪০ মিনিট। সাগরের উপকণ্ঠে মৈনাক পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আদিনাথ মন্দিরে যেতে হয় আঁকাবাঁকা সিঁড়ি দিয়ে। পাহাড়ের ওপর দাঁড়িয়ে এক নজরে পুরো মহেশখালী প্রত্যক্ষ করা যায়।