সীমান্ত পেরিয়ে এলাম কঙ্গোতে

কঙ্গোর উভিরা শহর। সামনে অপূর্ব মিতুমবা উপত্যকা।
ছবি: লেখক

পূর্ব আফ্রিকার দেশ বুরুন্ডির বুজুম্বুরা শহর থেকে কঙ্গোর পথ ধরেছিলাম ১৪ আগস্ট। সীমান্ত পেরিয়ে কঙ্গোর উভিরা প্রদেশে এসে যখন পৌঁছালাম, তখন মনে হলো এ যেন রীতিমতো এক যুদ্ধজয় করলাম। কেন যুদ্ধজয়ের কথা বললাম, তা বলছি। তার আগে বলি, কঙ্গো আমার ভ্রমণ তালিকার ১৪৬তম দেশ, বুরুন্ডি ছিল ১৪৫তম। এ দফায় ১৫০ দেশ ভ্রমণের মাইলফলক ছুঁতে চাই।

সেদিন কঙ্গো সীমান্ত থেকে একটা মোটরবাইকে যখন রওনা হলাম, মনে হলো দুই পাশের প্রকৃতি আমাকে অভিবাদন জানাচ্ছে। নতুন দেশে পা রেখে ভেতরটা আনন্দে ভরে উঠল। সেই আনন্দের রেশ নিয়ে এই কয়েক দিন থাকছি ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গোতে। তবে এখানে আসতে যে কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে গত কয়েক দিন, তার যৎসামান্য বলি।

লেক তাঙ্গানিকার পাড়ে লেখক

করোনাকালে ভ্রমণ আগের মতো যে সহজ নয়, তা অনেকের জানা। ভ্রমণ এখন অনেক কষ্টকর ও ব্যয়বহুল। যেমন বুরুন্ডির কঙ্গো দূতাবাসে প্রায় ছয় দিন হাজিরা দিতে হয়েছে ভিসা পেতে। বুরুন্ডি আর কঙ্গো পাশাপাশি দেশ। কয়েক দফা করোনা টেস্ট করে বুরুন্ডিতে এসেছিলাম। তবু কঙ্গোতে আসতে দুইবার করোনার নমুনা দিতে হলো। নমুনা দেওয়ার সময় প্রতিবারই মনে মনে বিধাতাকে ডাকতাম, যেন রিপোর্ট নেগেটিভ আসে!

নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়েই পা দিই কঙ্গোতে। তবু ইমিগ্রেশনে ধকল পোহাতে হয়েছিল। থাক সেসব কথা। বরং উভিরা প্রদেশে কেমন আছি, তা–ই বলি। সেদিন যখন উভিরায় প্রবেশ করি, তখন বিকেল গড়িয়ে এসেছে। ধুলোমাখা রাস্তাঘাট পেরিয়ে শহরে এসে সন্ধ্যা নামল। নিয়ন আলোয় কৃষ্ণসুন্দর মানুষের ভিড়। আমার অবাক দৃষ্টি তখন খুঁজে ফেরে তাদের জীবনযাত্রা।

চারদিকের পাহাড়ি প্রকৃতি যেন এই প্রদেশকে কোলে ধারণ করে আছে। সন্ধ্যার নিয়ন আলোতে পাহাড়ের বুকে ঘরগুলো দেখে মনে হলো পাহাড় যেন কতগুলো তারা বুকে ধারণ করে আছে। সারা দিনে পেটে কিছু পড়েনি তখনো, খাবারের সন্ধান করছিলাম। অবশেষে একটা রেস্তোরাঁয় কঙ্গোর ঐতিহ্যবাহী খাবার ‘ফুম্বওয়া’ খুঁজে পেলাম। সে মুহূর্তে ওই খাবারটুকু অমৃত মনে হলো।

উভিরা প্রদেশে দৈন্য মানুষকে কুক্ষিগত করে রাখলেও প্রকৃতি যেন তাদের জীবনকে অপরূপ করে রেখেছে। পাশেই বয়ে যাওয়া লেক তাঙ্গানিকার ফিরোজা রঙের পানি, তার পেছনে বয়ে যাওয়া উপত্যকা ছিল চোখজুড়ানো প্রকৃতির অসাধারণ প্রতিচ্ছবি। এখানকার মানুষ এই লেক তাঙ্গানিকার মাছের ওপর নির্ভরশীল। প্রচণ্ড খরতাপে পরিশ্রম করে খাবার জোগাড় করে তারা। বিশুদ্ধ পানির অভাবও প্রকট। তবু এই পরিব্রাজকের প্রতি তাদের দৃষ্টি হাসিখুশি আর উদারতায় ভরা। আমাকে দেখে দূর থেকেও তাকিয়ে অনেকে হেসে অভিবাদন জানিয়েছে।