সমুদ্রসৈকতে হাঁটেন আর যমজদের সঙ্গে ছবি তোলেন

এখন পর্যন্ত ১১০ জোড়া যমজের সঙ্গে ছবি তুলেছেন। এর মধ্যে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতেই তুলেছেন অর্ধশত জোড়া যমজের সঙ্গে! যমজদের সঙ্গেই কেন ছবি তোলেন? সেই অভিজ্ঞতা লিখেছেন জাহিদুল ইসলাম

সাইমন ও ইমনের সঙ্গে
ছবি: জাহিদুল ইসলামের সৌজন্যে

ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে গণিত উৎসব হবে। স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ঢাকা থেকে আমিও গেছি। খুদে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা চলছে। কক্ষ পরিদর্শনে বের হয়ে দেখি একটি ছেলে চমৎকার অঙ্ক কষছে। কিছুক্ষণ তার অঙ্ক করা দেখে পাশের কক্ষে গেলাম। সেখানে ঢুকেই আমার চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। এই একটু আগেই যে ছেলেটিকে পাশের কক্ষে দেখে এলাম, মুহূর্তে সে এ কক্ষে এল কী করে! আগের কক্ষে ফিরে গেলাম। না, ছেলেটি তার জায়গাতেই বসে আছে। আবার পাশের কক্ষে গিয়ে দেখি এই ছেলেটিও তার জায়গায় বসে পরীক্ষা দিচ্ছে। বুঝতে অসুবিধা হলো না, ওরা যমজ!

ঢাকায় জাতীয় উৎসবেও ময়মনসিংহের ওই দুই যমজের সঙ্গে দেখা। অনেক গল্পও হলো। যমজদের সঙ্গে এর আগে আমার পরিচয় ছিল না। হয়তো সেভাবে খেয়ালও করতাম না। ওদের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর যমজ ভাই–বোনদের প্রতি আগ্রহ তৈরি হলো। এরপর থেকে যমজ ভাই-বোন দেখলেই ছবি তুলতাম। এসবই ১৫ বছর আগের কথা। তখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। এখন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করছি। কক্সবাজার আমার কর্মস্থল। বছরের বেশির ভাগ সময় তাই এখানেই থাকি। এখন পর্যন্ত আমি ১১০ জোড়া যমজের সঙ্গে ছবি তুলেছি। এর মধ্যে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতেই অর্ধশত জোড়া যমজের সঙ্গে ছবি তুলেছি!

রাইসা ও রামিসার সঙ্গে দেখা হয়েছিল কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে
ছবি: জাহিদুল ইসলামের সৌজন্যে

কাউকে বিরক্ত করি না

যে যমজ ভাই–বোনদের সঙ্গে ছবি তুলি, তাদের অধিকাংশই শিশু-কিশোর। ফলে তাদের সঙ্গে অবধারিতভাবেই অভিভাবক থাকেন। তাই শুরুতে অভিভাবকের কাছে ছবি তোলার অনুমতি চাই। সেই সঙ্গে এও বলি যে যমজেরা যদি রাজি থাকে তবেই ছবি তুলব। বেশির ভাগ সময়ই ছবি তুলতে কেউ মানা করে না।

তবে ব্যতিক্রমও আছে। একবার ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় যমজ বোন পেয়ে ছবি তুলতে চাইলাম। একটি মুঠোফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন করে এই যমজ তখন ভীষণ জনপ্রিয়। ওদের মা-বাবা রাজি হয়নি। জীবনে এই একবারই ছবি তোলার অনুমতি পাইনি।

আরও একটি নিয়ম মেনে চলি। যেসব যমজ মেয়ের বয়স ১৫ বছরের বেশি, সাধারণত তাদের সঙ্গে ছবি তোলার চেষ্টাও করি না। অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছি, এই বয়সী কিশোরী মেয়েরা বিব্রত হয়। আবার বয়স ২০–এর বেশি হলে তখন সমস্যা হয় না। বুঝিয়ে বললেই আমার উদ্দেশ্য বুঝতে পারেন, ছবি তোলার জন্য নিজেরাই আগ্রহ প্রকাশ করেন। ছেলেদের ক্ষেত্রে অবশ্য এমন কোনো সমস্যা হয় না।

লামিয়া ও নাফিয়ার মতো অনেক যজমের সঙ্গে দেখা হয়েছে এই সমুদ্রসৈকতে
ছবি: জাহিদুল ইসলামের সৌজন্যে

স্মৃতি আছে, পরিকল্পনা আছে

যমজদের সঙ্গে ছবি তোলার অনেক মজার স্মৃতিই জমা আছে। বইমেলার সময় এক ডাক্তার দম্পতির যমজ সন্তানের সঙ্গে পরিচিত হলাম। ওদের নাম রেটিনা আর কর্নিয়া। এখনও দুই বোনের সঙ্গে যোগাযোগ আছে। এমন আরও ব্যতিক্রমী নামের যমজের দেখা পেয়েছি।

যমজদের সঙ্গে ছবি তুলতে তুলতে তাদের নিয়ে অনেক পরিকল্পনাও করে ফেলেছি। যেমন প্রতিবছর যমজদের নিয়ে মিলনমেলা করতে চাই। যেখানে দেশের শত শত যমজ উপস্থিত হবে। সবার পোশাক এক থাকবে। এই আয়োজনের মাধ্যমে বিশ্ব রেকর্ডও গড়ব। একটি স্কুল করারও ইচ্ছা আছে, যেখানে শুধু যমজেরা পড়াশোনা করবে। এমনকি সেই স্কুলের শিক্ষকও হবে যমজ! আর ছবি তোলা তো চালিয়ে যাবই।

এখন দেখা যাক, কত দূর কী করতে পারি!