‘এ বছর নাহয় থাক, আগামী বছর শুরু করব’ – আপনিও কি এমনটাই ভাবেন?
এ বছর একটাও ক্লাস মিস করব না, ওজন ১০ কেজি কমাব কিংবা নতুন একটা ভাষা শিখব; এমন অনেক লক্ষ্য নিয়ে বছরটা শুরু করেও কেন আমরা পথ হারিয়ে ফেলি? ‘এ বছর নাহয় থাক, আগামী বছর শুরু করব।’ কেন প্রতিবছরই এমন ভাবনা আমাদের গতি কমিয়ে দেয়? যুক্তরাষ্ট্রের সাইকোথেরাপিস্ট জনাথন অ্যালপার্ট এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চেষ্টা করেছেন। তিনি বি ফিয়ারলেস: চেঞ্জ ইয়োর লাইফ ইন টোয়েন্টি এইট ডেজ বইয়ের লেখক। জনাথনের গবেষণালব্ধ ফলাফল নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ। নতুন বছরের ‘রেজল্যুশন’ পূরণ করতে না পারার পেছনে মূলত তিনটি কারণ তুলে ধরেছেন জনাথন। চলুন, কারণগুলো জেনে নেওয়া যাক।
খুঁটিনাটি ভেবে দেখেছেন তো?
নতুন বছরের প্রতিশ্রুতি ধরে না রাখতে পারার একটা বড় কারণ হলো পরিকল্পনাগুলো কখনোই খুব একটা বিস্তৃত হয় না। যদি ভাবেন ‘এ বছর আমি বেশি বই পড়ব’ কিংবা ‘এ বছর আমি অনেক পরিশ্রম করব’, তবে ধরে রাখুন, সেখানে পরাজয় নিশ্চিত। এ ধরনের ইচ্ছাগুলো কোনোভাবেই সারা বছরের জন্য অনুপ্রেরণার জোগান দিতে পারবে না।
অথচ যদি আরেকটু চিন্তাভাবনা করে পরিকল্পনাটা করা হয়? বেশি পড়বেন, সে আশা নিয়ে বসে না থেকে পরিকল্পনা করুন—এ বছর কোন ১০টি বই আপনার পড়তেই হবে। গবেষণায় দেখা যায়, অনিশ্চিত লক্ষ্য সামনে নিয়ে এগোলে হাল ছেড়ে দেওয়ার আশঙ্কা বেশি। কিন্তু যদি পুঙ্খানুপুঙ্খ নকশা সামনে থাকে, তবে বেশির ভাগ মানুষই অন্তত নিজের কাছে করা প্রতিশ্রুতি পূরণের চেষ্টা করেন। এ ক্ষেত্রে নিজেকে একটা সময়সীমার মধ্যে বেঁধে ফেলতে পারেন। তাহলে পরিকল্পনার ব্যাপারটা নিজে থেকেই সহজ হয়ে যাবে।
খুঁটিনাটি ভেবে দেখেছেন তো?
আমরা প্রায়ই ভুলে যাই, আমাদের প্রতিটি কথারই কিন্তু ওজন আছে। এতটাই যে এই কথার ভারেই আমাদের জীবনযাপনের ছাঁচ তৈরি হয়। মনোবিজ্ঞানের মতে, আমরা নিজেরা মনের মধ্যে যে কথাগুলো বিড়বিড় করি, তা দিয়েই আমাদের ব্যক্তিত্ব গঠিত হয়। যদি বলেন ‘আমি এ বছর বাইরের খাবার খাব না’, তাহলে কথাটি বারবার ভাবলে আপনার মন কিন্তু ওই বাইরের খাবারেই পড়ে থাকবে। যেমনটা হয় প্রেমে ব্যর্থ হওয়ার বেলায়। ‘ওকে আমি আর মনে করব না’—এমনটা মনে মনে ভাবলে সেই মানুষকে মনে পড়ে আরও বেশি। তাই ‘কী চাই না’র বদলে আমি ‘কী চাই’—এর ওপর মনোনিবেশ করা দরকার। বাইরের খাবারের কথা বাদ দিয়ে যদি নিজেকে বারবার বলেন, ‘এ বছর আমি শাকসবজি বেশি খাব’, তাহলে মনের অজান্তে হলেও স্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি কিছুটা আগ্রহ চলে আসবে।
নিজের কথা ভেবেছেন তো?
নতুন বছরের রেজল্যুশন এখন ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। শত শত ‘ওজন কমাব’ আর ‘সিজিপিএ বাড়াব’র ভিড়ে আপনার নিজস্ব ইচ্ছাটা হয়তো হারিয়ে যায়। কিন্তু প্রত্যেক মানুষেরই নিজস্ব, অনন্য কিছু বৈশিষ্ট্য ও আকাঙ্ক্ষা থাকে। ট্রেন্ডের ভিড়ে নিজস্বতা হারিয়ে ফেলাটা একেবারেই উচিত নয়। যদি আপনার লক্ষ্য হয় দেশের বাইরে গিয়ে উচ্চশিক্ষা নেওয়ার, তবে হোক না আপনার প্রতিজ্ঞা, ‘আমি এ বছর আইইএলটিএস পরীক্ষা দেব।’ ক্লাসের বন্ধু এ বছর দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে আপনাকেও যে তাঁর পিছুই নিতে হবে, এমন তো কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আপনি আপনার ক্ষমতা অনুযায়ী লক্ষ্য ঠিক করুন। পড়াশোনায় আরও ভালো করতে চাইলেই আপনি সিজিপিএ–৪ বানাতে পারবেন না, কিন্তু আগের বছরের চেয়ে ভালো নিশ্চয়ই করতে পারবেন। নিজের অনন্য বৈশিষ্ট্যগুলো বজায় রেখেই নতুন বছরের ‘রেজল্যুশন’ স্থির করুন। তাহলেই নতুন বছর হবে নতুন আপনার।