কার্যকরী ও নিরাপদ এগ শেল ক্যালসিয়াম গর্ভবতী, দুগ্ধপ্রদানকারী ও মেনোপোজ-পরবর্তী নারীদের জন্য প্রযোজ্য

ক্যালসিয়াম গর্ভবতী মায়েদের উচ্চ রক্তচাপ এবং প্রিক্ল্যাম্পসিয়া, দুটি সাধারণ গর্ভাবস্থার জটিলতার ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে

মানবদেহ গঠনে ক্যালসিয়ামের গুরুত্ব অপরিসীম। এই প্রয়োজনীয় উপাদানটি হাড় ও দাঁত মজবুত করতে এবং জরুরি মাংসপেশি গঠন, হৃদ্‌যন্ত্রের মাংসপেশির সংকোচন-প্রসারণ, স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন সংকেত আদান-প্রদান ছাড়াও বিভিন্ন হরমোন নিঃসরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

একজন স্বাভাবিক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদা ৮০০ থেকে ১ হাজার মিলিগ্রাম। আবার পোস্টমেনোপোজাল নারীদের ক্ষেত্রে ও গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ মিলিগ্রাম। সাধারণত বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে ক্যালসিয়ামের চাহিদা বাড়ে। বিশেষ করে নারীদের রজোনিবৃত্তির পর হাড়ে সঞ্চিত ক্যালসিয়াম কমে গিয়ে হাড় পাতলা ও ভঙ্গুর হয়।

ক্যালসিয়াম গর্ভবতী মায়েদের উচ্চ রক্তচাপ এবং প্রিক্ল্যাম্পসিয়া, দুটি সাধারণ গর্ভাবস্থার জটিলতার ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে। ক্যালসিয়ামের ঘাটতি গর্ভবতী মা এবং শিশু—উভয়কেই প্রভাবিত করতে পারে। যার ফলে অস্টিওপেনিয়া, কাঁপুনি, পেশি ক্র্যাম্পিং, টিটেনাস, ভ্রূণের বৃদ্ধিতে বিলম্ব, কম জন্মগত ওজন ও ভ্রূণের মধ্যে খনিজের কম পরিমাণের কারণ হতে পারে।

সাধারণভাবে ক্যালসিয়াম ঘাটতির কারণে নানা সমস্যা হয়। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে স্নায়বিক সমস্যা, পেশি সংকোচন, হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়া, দৃঢ়তাহীন, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়া, অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দন ইত্যাদি। যদি লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়, তবে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। ক্যালসিয়ামের অভাব মোকাবিলায় নিয়মিত ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার অথবা পুষ্টিকর খাবার বা চিকিৎসকের পরামর্শে ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট খাওয়া জরুরি।

বাজারে বিভিন্ন ধরনের ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট পাওয়া যায়। ক্যালসিয়ামপ্রাপ্তির যাত্রা শুরু হয় রক বা চুনাপাথর থেকে পাওয়া ক্যালসিয়ামের মাধ্যমে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের শুরুর দিকে এটিই ছিল ক্যালসিয়ামপ্রাপ্তির মূল উৎস। রক বা চুনাপাথর থেকে প্রাপ্ত ক্যালসিয়ামের শোষণমাত্রা ৩১ শতাংশ, অর্থাৎ এই উৎস থেকে প্রাপ্ত ৫০০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট থেকে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় মাত্র ১৫৫ মিলিগ্রাম। এ ছাড়া এই ক্যালসিয়াম হজমে সমস্যা হওয়ার কারণে পাকস্থলীতে অস্বস্তি এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হয়।

পরে আসে কোরাল থেকে প্রাপ্ত ক্যালসিয়াম। রক বা চুনাপাথর থেকে পাওয়া ক্যালসিয়ামের তুলনায় এর শোষণমাত্রা বেশি হলেও (৬৯ শতাংশ অর্থাৎ এই উৎস থেকে প্রাপ্ত ৫০০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট থেকে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় ৩৪৫ মিলিগ্রাম) এতে অতিরিক্ত পরিমাণ হেভি মেটাল যেমন সিসা এবং মার্কারির উপস্থিতি রয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে নিউরোনাল ড্যামেজের ঝুঁকি বেড়ে যায়, যা গর্ভাবস্থায় ব্যবহারে অদূর ভবিষ্যতে মা ও শিশুর বিভিন্ন ক্ষতি হতে পারে বলে বিভিন্ন জার্নালে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

এরপর আসে অ্যালজি (উদ্ভিদ) থেকে প্রাপ্ত ক্যালসিয়াম। এই উৎস থেকে প্রাপ্ত ৫০০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট থেকে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় ৩৭৫ মিলিগ্রাম। এ ছাড়া এই উৎস থেকে প্রাপ্ত ক্যালসিয়ামের আরও বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন অনিরাপদ মাত্রার সিসার উপস্থিতি, ক্যালসিয়াম হজমে দুর্বলতা ইত্যাদি। আর তাই, আরও ভালো ক্যালসিয়ামের উৎসের খোঁজ চলতে থাকে এবং অবশেষে পাওয়া যায় এগ শেল বা ডিমের খোসা থেকে পাওয়া ক্যালসিয়াম।

এগ শেল বা ডিমের খোসা থেকে প্রাপ্ত ক্যালসিয়াম একমাত্র অর্গানিক ক্যালসিয়াম, যার কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য এটিকে অন্যান্য ক্যালসিয়াম প্রিপারেশনের চেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। যেমন:

এগ শেল ক্যালসিয়াম অর্গানিক সোর্স থেকে পাওয়া এবং কোনো ধরনের ভারী ধাতুর উপস্থিতি থেকে মুক্ত, যা নিশ্চিত করে সর্বাধিক কার্যকারিতা এবং সর্বোচ্চ সুবিধা।

পরীক্ষায় দেখা গেছে, এটি ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত হজম হয়ে যায়। ফলে পাকস্থলীতে অস্বস্তি সৃষ্টি করে না এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের আশঙ্কা থাকে না।

এগ শেল ক্যালসিয়াম ৯০ শতাংশ শোষণমাত্রা নিশ্চিত করে। ফলে এই উৎস থেকে প্রাপ্ত ৫০০ মিলিগ্রাম ট্যাবলেট থেকে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় ৪৫০ মিলিগ্রাম। ভিটামিন ডি-৩-এর উপস্থিতির কারণে সর্বোচ্চ ক্যালসিয়াম হাড়ে সরবরাহ করে এবং মজবুত হাড় গঠনে সাহায্য করে।

·এ ছাড়া এতে প্রাকৃতিকভাবেই স্ট্রনসিয়াম আছে। এটি এক বিরল উপাদান, যা হাড়ের খনিজ ঘনত্ব বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।

গর্ভবতী নারী, দুগ্ধপ্রদানকারী মা ও মেনোপোজ-পরবর্তী নারীদের জন্য এখন পর্যন্ত অধিক কার্যকরী ও নিরাপদ ক্যালসিয়াম হচ্ছে এগ শেল বা ডিমের খোসা থেকে পাওয়া ক্যালসিয়াম। তবে অন্যান্য ক্যালসিয়ামের মতো এটি গ্রহণেও বমি বমি ভাব হতে পারে।

এরপরও থেমে নেই বিজ্ঞানীদের নতুন নতুন ক্যালসিয়ামের উৎসের খোঁজ। নিকট ভবিষ্যতে হয়তো আরও নতুন কোনো উৎস থেকে প্রাপ্ত ক্যালসিয়াম আরও অধিক সুবিধা ও কম সীমাবদ্ধতার মাধ্যমে নারীদের দৈনন্দিন জীবনের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে।