কেমন ছিল আগা খানের বিলাসী ও দানদক্ষিণার জীবন
আজ ৫ ফেব্রুয়ারি মারা গেছেন প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ ইসমাইলি মুসলিম সম্প্রদায়ের আধ্যাত্মিক নেতা যুবরাজ করিম আল হুসাইনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। ধনকুবের ও সমাজসেবী হিসেবে বিখ্যাত আগা খান বা আগা খান চতুর্থ ছিলেন হাজার কোটি ডলারের মালিক। এই ধনকুবের দানবীর হিসেবেও বিশ্বজুড়ে পরিচিত।
১. যুবরাজ করিম আগা খানের জন্ম ১৯৩৬ সালে ১৩ ডিসেম্বর, সুইজারল্যান্ডের জেনেভায়। তিনি ছিলেন ইসমাইলি মুসলিম সম্প্রদায়ের ৪৯তম ইমাম।
২. দাদা সুলতান তৃতীয় মাহমেদ শাহ আগা খানের মৃত্যুর পর, ১৯৫৭ সালে মাত্র ২০ বছর বয়সে শিয়া সম্প্রদায়ের ইসমাইলি মুসলিমদের ইমাম হন এই ধর্মীয় নেতা। প্রচলিত আছে, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর পরে ইমাম আলী (রা.) ও ফাতেমা (রা.) থেকেই তাঁর বংশের ধারা প্রবাহিত হয়েছে।
৩. দাদার মৃত্যুর পর যুবরাজ করিম আগা খান যখন ইসমাইলি সম্প্রদায়ের নেতা নির্বাচিত হন, তখন তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসের ছাত্র। দাদার মৃত্যু ও তাঁর অভিষেক শেষে প্রায় আট মাস পর তিনি যখন ক্যাম্পাসে ফেরেন, তত দিনে সহপাঠীরা তাঁকে রসিকতা করে ‘জিসাস’ (যিশু) বলে ডাকতেন।
৪. শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা দাতব্য প্রতিষ্ঠান ‘আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক’–এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন করিম আগা খান। মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে পশ্চিমা সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটাতে তিনি কাজ করে গেছেন।
৫. বিশ্বে স্থাপত্যের অন্যতম প্রতিষ্ঠিত ও মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার ‘আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার’–এর সূচনাও করেছেন তিনি। ১৯৭৭ সাল থেকে এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের একাধিক প্রকল্প এই পুরস্কার পেয়েছে বিভিন্ন সময়ে।
৬. যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও আয়ারল্যান্ডে ঘোড়দৌড়ের ঘোড়ার একজন শীর্ষস্থানীয় মালিক হিসেবে তিনি বেশ সুপরিচিত। ‘শেরগার’ নামে একসময়ের বিখ্যাত এবং সবচেয়ে মূল্যবান রেসের ঘোড়াটির প্রজনন তিনিই করিয়েছিলেন।
৭. বিশ্বের অন্যতম ধনী হওয়ার পরও রাজনীতিতে তাঁর আগ্রহের কথা তেমন শোনা যায়নি। খেলাধুলা করতে ভালোবাসতেন। এমনকি ১৯৬৪ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত ইনসব্রুক অলিম্পিক গেমসে স্কি খেলায় অংশ নিয়েছিলেন ইরানের হয়ে। এ ছাড়া ছাত্রজীবনে ফুটবল খেলতে দারুণ পছন্দ করতেন।
৮. রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের বন্ধু ছিলেন এই যুবরাজ। তাঁকে ‘হিজ হাইনেস’ বলেও সম্বোধন করা হতো, আর তা যুক্তরাজ্য সরকারের স্বীকৃত ছিল।
৯. বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্যও পরিচিত ছিলেন এই মাল্টি মিলিয়নিয়ার। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড ও পর্তুগালের পাসপোর্টধারী আগা খানের ছিল ব্যক্তিগত বিমান, বিশাল প্রমোদতরি ও ব্যক্তিগত দ্বীপ। ‘ভ্যানিটি ফেয়ার’সহ বিভিন্ন সূত্রমতে, তাঁর সম্ভাব্য সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি।
১০. আগা খান বিয়ে করেছিলেন দুবার। দুই স্ত্রীর ঘরে চার সন্তান, তিন ছেলে ও এক মেয়ে।
১১. বাংলাদেশের আগা খান একাডেমিও (আগের নাম আগা খান স্কুল ) ‘আগা খান ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক’ দ্বারা পরিচালিত।
১২. ৩০টির বেশি দেশে পরিচালিত তাঁর প্রতিষ্ঠানের কর্মীসংখ্যা লাখখানেক। এশিয়া ও আফ্রিকার দরিদ্র অঞ্চলে স্কুল, হাসপাতাল বানাতে সাহায্য করে সংস্থাটি।
সূত্র: বিবিসি, আল–জাজিরা, একেডিএন ও জেন্টলম্যানস জার্নাল