ফ্রান্সে কেন স্থূলতার হার কমছে, জানেন? সূত্রগুলো মানলে আপনিও পাবেন উপকার

স্ট্রোক, হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপের মতো বিভিন্ন জটিল রোগের অন্যতম কারণ স্থূলতা। ফলে পরোক্ষভাবে হলেও স্থূলতাকে বিশ্বে মানব মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে গণ্য করা যায়। সমস্যাটি বৈশ্বিক। পৃথিবীর প্রায় সব দেশের মানুষের মধ্যে এটি ক্রমেই বাড়ছে। কিন্তু ব্যতিক্রম হিসেবে নিজেদের অবস্থান তৈরি করেছে পশ্চিম ইউরোপের দেশ ফ্রান্স। যেখানে স্থূলতার হার কমছে। কীভাবে এটি সম্ভব হলো?

স্থূলতা হ্রাসে ফরাসিদের সাফল্যের সূত্রগুলো আপনিও অনুসরণ করতে পারেনছবি: পেক্সেলস

সম্প্রতি প্রকাশিত একটি নিবন্ধে এই সাফল্যের কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সেখানে দেখানো হয়েছে, ফরাসিদের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন প্রণালির পাশাপাশি সে দেশের সরকারি নীতিমালার সমন্বিত প্রভাবই মূলত এর পেছনের প্রধান অনুঘটক। স্থূলতা হ্রাসে ফরাসিদের সাফল্যের সূত্রগুলো একনজরে দেখে নেওয়া যাক।

অল্প পরিমাণে খাবার গ্রহণ

ফরাসিরা সাধারণত খুব অল্প পরিমাণে খায়। খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে একদমই তাড়াহুড়া করে না। বরং ধীরে ধীরে খাওয়ার মাধ্যমে খাবারের স্বাদ উপভোগ করে। পেট ভরে যাওয়ার আগেই খাওয়া বন্ধ করে দেয়। এতে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণের প্রবণতা কমে।

মূল খাবারের মধ্যবর্তী সময়ে অযথা নাশতা করবেন না
মডেল: হৃদি, ছবি: সুমন ইউসুফ

অতিরিক্ত নাশতায় ‘না’

মূল খাবারের মধ্যবর্তী সময়ে অযথা নাশতা করার প্রবণতা নেই ফরাসিদের। কেউ নাশতা করলেও সাধারণত তা হয়ে থাকে ফল, দই বা হালকা কোনো স্বাস্থ্যকর খাবার। যখন–তখন ফ্রিজ খোলার অভ্যাস নেই তাদের। বিশেষত শিশুদের ফ্রিজ থেকে স্ন্যাকস নেওয়াকে নিরুৎসাহিত করা হয়। এই অভ্যাস ক্যালরি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

সতেজ ও ঘরে তৈরি খাবার

ফরাসিরা সতেজ, মৌসুমি ও স্থানীয় উপাদানে তৈরি খাবার খেতে পছন্দ করে। প্রক্রিয়াজাত বা ফাস্ট ফুড একদমই খায় না, তা নয়। তবে তা কেবল বিশেষ উপলক্ষে। আর দৈনন্দিন খাবারের ক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের প্রথম পছন্দ ঘরে রান্না করা খাবার।

সক্রিয় জীবনযাপন

ফরাসিদের দৈনন্দিন জীবনযাপন-অভিধানে আলস্য বলে কোনো ব্যাপার নেই। তারা প্রচুর হাঁটাহাঁটি করে। তাদের শহরগুলোও পরিকল্পিতভাবে হাঁটার উপযোগী করে গড়ে তোলা হয়েছে। ঘরে নয়, বরং বাইরে সময় কাটানোই তাদের কাছে অধিক উপভোগ্য। ব্যক্তিগত বাহনের চেয়ে গণপরিবহনে যাতায়াত করতেই তারা বেশি অভ্যস্ত। এই চর্চা প্রথাগত শরীরচর্চার বিকল্প হিসেবে কাজ করে।

আরও পড়ুন
প্রতিদিন হাঁটাহাঁটি বা হালকা ব্যায়াম করুন
ছবি: পেক্সেলস

সরকারি উদ্যোগ

ফরাসি সরকার স্কুলে সোডা (চিনিযুক্ত কোমল পানীয়) ও স্ন্যাকসের ভেন্ডিং মেশিন নিষিদ্ধ করেছে। চিনিযুক্ত পানীয়তে কর আরোপের পাশাপাশি জাংক ফুডের বিজ্ঞাপন সীমিত করেছে। এসব উদ্যোগ শিশুদের ভেতর স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে দারুণ ভূমিকা রাখছে।

আমাদের যা শেখার আছে

পরিমাণ নয়, গুণমান: অল্প পরিমাণে, কিন্তু পুষ্টিকর ও সুস্বাদু খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।

ঘরে রান্না: ঘরে তৈরি খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।

সক্রিয় থাকুন: প্রতিদিন হাঁটাহাঁটি বা হালকা ব্যায়াম করুন।

নিয়মিত খাবার: নিয়মিত যথাসময়ে খাবার খান এবং অপ্রয়োজনীয় নাশতা পরিহার করুন।

শিশুদের শিক্ষা: শিশুদের ছোটবেলা থেকেই স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস শেখান।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

আরও পড়ুন