আমাকে মেসি মুগ্ধ করে তখন, যখন তার পায়ে বল থাকে না: পিকে

স্পেনের ফুটবলার জেরার্ড পিকে। ২০১০ সালে স্পেন যেবার বিশ্বকাপ জিতল, এই জয়ের পেছনের একটা গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল তাঁর। পিকে মনে করেন, মেসি, পুয়োল, নেইমার, রয় কিনের মতো মানুষের সঙ্গে ড্রেসিংরুমে কাটানো সময়গুলোই তাঁর জীবনের বড় অর্জন। সে কথা লিখেছেন প্লেয়ারস ট্রিবিউন ডট কমে প্রকাশিত এক নিবন্ধে। মেসিকে কেন ‘ভিনগ্রহের খেলোয়াড়’ বলে মনে হয়, তা-ও জানিয়েছেন পিকে। পড়ুন তাঁর বয়ান।

জেরার্ড পিকে
ফাইল ছবি: এএফপি

ক্যারিয়ারে অসংখ্যবার ভাগ্য, সুযোগ, এ রকম না হলে কী রকম হতে পারত...এসব নিয়ে আমি ভেবেছি। পত্রিকার শিরোনামে কিন্তু এগুলো আসে না। শিরোনাম দেখলে মনে হয়, সবকিছু কত সহজ! কিন্তু বাস্তবে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো থেকে যায় খবরের পেছনে।

উদাহরণ হিসেবে আমি মেসির কথা বলতে পারি। অনেকে প্রশ্ন করে, এত বছর ধরে তুমি মেসির সঙ্গে খেলছ; কেমন লাগে? আমাকে যদি এক বাক্যে বলতে হয়, বলব, সে একটা এলিয়েন। সে এই পৃথিবীর বাসিন্দা নয়। সে-ই একমাত্র খেলোয়াড়, যাকে প্রথম দেখার অনুভূতিটা আমার মনে আছে।

তখন আমাদের বয়স সম্ভবত ১৩। মেসিকে দেখে মনে মনে বলছিলাম, ‘এই ছেলেটা নিশ্চয়ই অন্য কোনো জগৎ থেকে এসেছে, এ মানুষ নয়।’ সে একটা খুনি!

আমার চোখে সে-ই সেরা। কিন্তু জানেন, আমি কিন্তু ওর আক্রমণের ভঙ্গি দেখে এ কথা বলছি না। মানুষ প্রশ্ন করে, ‘মাঠে লিওর কোন জিনিসটা তোমাকে সবচেয়ে মুগ্ধ করে?’ তাদের প্রত্যাশা থাকে, আমি বলব কীভাবে ও রক্ষণভাগের তিনজন খেলোয়াড়ের সঙ্গে কাটাকুটি করে বল নিয়ে গেল...এ রকম একটা কিছু।

আর্জেন্টিনার তারকা ফুটবলার লিওনেল মেসি
ছবি: রয়টা্র্স

বিশ্বাস করুন, এমন অসংখ্য গল্প আমার জানা আছে। কিন্তু এই সব কারণে আমি ওকে এলিয়েন বলছি না। আমাকে মেসি মুগ্ধ করে তখন, যখন তার পায়ে বল থাকে না! টিভিতে আপনি হয়তো দেখতে পান না, আমি দেখতে পাই। রক্ষণভাগের খেলোয়াড়ের কাছ থেকে বলটা ফিরে পেতে সে যখন ছোটে, তখন ওর মুখটা দেখবেন। ওর চোখে আমি এমন একটা দৃষ্টি দেখেছি, যেটা আর কোনো ফুটবলারের মধ্যে পাইনি। এটাই তার বিশেষত্বের কারণ।

জেরার্ড পিকে ও লিওনেল মেসি। যখন বার্সেলোনায় একসঙ্গে খেলতেন দুজন
ফাইল ছবি: এএফপি

ওর মধ্যে লোক দেখানো কিছু নেই। এমনকি সে খুব কমই ‘স্টেপ ওভার’ করে। মেসি অন্য ধাতুতে গড়া। বল পাওয়ার প্রতি তার যে আকুতি, এটাই তাঁর জাদু। এটা কখনোই শিরোনামে আসবে না। মেসির সত্যিকার জাদুটা আপনি কখনোই ইউটিউবে পাবেন না। এই জাদু লুকিয়ে থাকে ওর চোখের অভিব্যক্তিতে।

আমার মনে হয়, খেলোয়াড় হিসেবে আমাদের উচিত মানুষকে আমাদের জীবন সম্পর্কে আরও বেশি জানানো। তাঁদের বোঝানো, আমাদের মাথার ভেতর কী চলে। এই মানসিকতা আজকের পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি দরকার।

আপনি যদি মাদ্রিদে বসে টেলিভিশন দেখেন, মনে হবে বার্সেলোনার সবাই দেশটা ধ্বংস করে ফেলছে। আবার আপনি যদি বার্সেলোনায় বসে টিভি দেখেন, মনে হবে মাদ্রিদের জন্য দেশটা রসাতলে গেল।

সবাই খারাপ। তবে সেটা নির্ভর করছে আপনি কোথায় বসে টিভি দেখছেন, তার ওপর। জীবনের অর্ধেকের বেশি সময় কাটিয়েছি ফুটবল খেলে। সত্যি বলতে, কোন জিনিসটা আমাকে ক্যারিয়ার দীর্ঘায়িত করতে আগ্রহী করল, জানেন? মাঠের খেলা নয়; মেসি, পুয়োল, নেইমার, রয় কিনের মতো মানুষের সঙ্গে ড্রেসিংরুমে কাটানো সময়গুলো (যদিও রয় কিন ড্রেসিংরুমে আমাকে প্রায় খুন করে ফেলছিল!)

দিন শেষে ফুটবল এক দীর্ঘ যাত্রা। আপনি জিতবেন, হারবেন, লজ্জিত হবেন, ভুল করবেন, হাসবেন, কাঁদবেন, বোকার মতো একটা কিছু করে বসবেন। দলের সবাই মিলে একদিন হয়তো এক সহকারী কোচের নতুন কেনা বাইকে আগুন ধরিয়ে দেবেন...! সেই গল্প না হয় আরেক দিন বলব।

(সংক্ষেপিত ও ইংরেজি থেকে অনূদিত)