জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে

বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কারের রব উঠেছে সর্বত্র। নিজ ক্যাম্পাসে কী পরিবর্তন চান—আমরা জানতে চেয়েছিলাম কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছে।

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি

মোহাম্মদ হেলাল
ছবি: সংগৃহীত

মোহাম্মদ হেলাল, যন্ত্রকৌশল বিভাগ, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা যে হারে বৃষ্টি পাচ্ছে, সে হারে মান বৃদ্ধি পাচ্ছে না। যত্রতত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি দিয়ে সেগুলোর তদারকি ঠিকভাবে করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেমন যেন সনদ সর্বস্ব হয়ে উঠছে। যেন শিক্ষার্থী ভর্তি করে তাঁদের বের করতে পারলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব শেষ। আমার কাছে মনে হয় নতুন বাংলাদেশে অনেক কিছু সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে উচ্চশিক্ষার এ দিকটিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনতে হবে।

যুগের চাহিদা পূরণ করে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে মন দিতে হবে। সে জন্য প্রয়োজন একাডেমি ও ইন্ডাস্ট্রির পারস্পরিক সহযোগিতা। এই সমন্বয় সম্ভব হলে বাজারে যে ধরনের স্নাতকের চাহিদা আছে, সে অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের তৈরি করতে পারবে। এতে দিন শেষে সমাজেরই লাভ হবে।

নতুন বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আধুনিক, উদ্ভাবনমুখী ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তবে সবার আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষক নিয়োগে আমরা যেসব অভিযোগ শুনি, সেসব সমাধানে উদ্যোগ নিতে হবে। যেহেতু একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মান অনেকাংশে শিক্ষকদের মানের ওপর নির্ভর করে, সেহেতু এ ক্ষেত্রে দুর্নীতি হলে সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক মানেই প্রভাব ফেলে। তাই আমি মনে করি এসব বিষয়ে নজর দিলেই আমরা কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয় পাব।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও যেন সমাবর্তনের সুযোগ পান

মাইমুনা শারমিন
ছবি: সংগৃহীত

মাইমুনা শারমিন, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, সরকারি হাজী মোহাম্মদ মুহসিন কলেজ, চট্টগ্রাম

অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বর্তমানে পিছিয়ে আছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি মনে করি, এই ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার ভীষণ জরুরি। লক্ষ করে দেখবেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা থেকে শুরু করে দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের একটা বড় অংশই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আপনি যদি এই শিক্ষার্থীদের দক্ষভাবে গড়ে তুলতে না পারেন, তাহলে সার্বিক পরিবর্তন আনবেন কী করে?

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হলো সেশনজট। অথচ দেশের উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী এখানে পড়াশোনা করে। নতুন বাংলাদেশে সব সংস্কারের মধ্যে এই বিষয়টি অতি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। তাহলে লাখ লাখ শিক্ষার্থী এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে।

এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন অনেক কলেজে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নিয়মিত ক্লাস হয় না। ক্লাস নিয়মিত না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা এদিক-সেদিক কোচিংয়ের জন্য ছোটাছুটি করে। শিক্ষকেরাও ক্লাসে সিলেবাস শেষ করার প্রতি খুব একটা গুরুত্ব দেন না। ক্লাসে যেন সবাই নিয়মিত উপস্থিত থাকে, সে জন্য ‘৭৫ শতাংশ উপস্থিতি’ নিয়মটির যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা দরকার। এ ছাড়া শ্রেণি কার্যক্রমের ওপর কিছু নম্বর থাকলে শিক্ষার্থীরা আরও আগ্রহী হবে।

পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়েও নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর এ নিয়ে অনেক অভিযোগ পাওয়া যায়। সমাধানের জন্য ‘খাতা রিভিউ’ পদ্ধতি চালু করতে হবে। উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষণের ফি কমানো গেলেও ভালো হয়।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আরেকটি বড় আক্ষেপ—তাঁরা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মতো সমাবর্তন পান না। এই বিষয়টিতেও কর্তৃপক্ষের মন দেওয়া উচিত। প্রতিটি কলেজ ক্যাম্পাসে সম্ভব না হলে ৮টি বিভাগীয় পর্যায়ে যদি সমাবর্তন করা যায়, তাহলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একটু হলেও আনন্দ নিয়ে তাদের ক্যাম্পাসজীবন শেষ করতে পারবে।