প্রকৌশলী রাশিক মোহতাসিন যেভাবে জাদুশিল্পী ‘ম্যাজিক রাজিক’ হয়ে উঠলেন

পুরো নাম রাশিক মোহতাসিন হলেও ‘ম্যাজিক রাজিক’ নামেই তিনি পরিচিত। প্রকৌশল পেশা ছেড়ে কীভাবে পুরোদস্তুর জাদুশিল্পী বনে গেলেন এই তরুণ? শুনেছেন মো. জান্নাতুল নাঈম

পুরো নাম রাশিক মোহতাসিন হলেও ‘ম্যাজিক রাজিক’ নামেই তিনি পরিচিত
ছবি: সংগৃহীত
প্রথম আলো:

আপনি একজন প্রকৌশলী। কয়েক বছর চাকরিও করেছেন। জাদুশিল্পে ঝুঁকলেন কীভাবে?

জাদু দেখানো আমার প্যাশন। মা-বাবাও কখনো বাধা দেননি। তবে একটা শর্ত জুড়ে দিয়েছিলেন। ‘শখ হিসেবে যা-ই করো, পড়ালেখা ঠিক রাখতে হবে’। তাই বাস্তবতা মাথায় রেখেই প্রকৌশলী হয়েছি, চাকরিও করেছি। অফিস শেষে ম্যাজিক শো করতাম। তবুও ঠিক জমছিল না। অস্ট্রেলিয়ার যথেষ্ট ভালো চাকরিটা যে উপভোগ করছিলাম না, তা নয়। কিন্তু কাজ তো কাজই। ম্যাজিক করে যে আরাম পাই, সেটা অনুপস্থিত ছিল। তাই প্যাশনকে পেশা বানানোর ভাবনা থেকেই শুরু। অস্ট্রেলিয়ার থিয়েটারে নিয়মিত কাজের সুবাদে বিশ্বের বড় বড় জাদুকরদের সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করার সুযোগ হয়েছে। ডাক পেয়েছিলাম ফক্স স্পোর্টস চ্যানেলেও। এরপর প্রায় এক যুগ বিদেশে থেকে ২০১৯ সালে দেশে ফিরি।

প্রথম আলো:

জাদু মানেই হরেক রকম কৌশলের খেলা। এর মধ্যে নিশ্চয়ই বিজ্ঞানেরও প্রভাব আছে?

বিজ্ঞান ততটা নেই। কৌশল খাটিয়ে মানুষকে অবাক করাই মূল বিষয়। আমি আসলে সব রকমের জাদুই দেখাই। কার্ড বা অন্য কিছু দিয়ে বা স্ট্রিট ম্যাজিক দেখালে অনেকেই ভাবেন নিশ্চয়ই হাতে কিছু লুকানো আছে। মনস্তাত্ত্বিক জাদুতে এটা বলার সুযোগ থাকে না। তাই মনস্তাত্ত্বিক জাদুটাই বেশি উপভোগ করি।

মনস্তাত্ত্বিক জাদুটাই তাঁকে বেশি টানে
ছবি: সংগৃহীত
প্রথম আলো:

আদর্শ হিসেবে কাউকে অনুসরণ করেন?

অস্ট্রেলিয়ায় পেশাদার জাদুকর হিসেবে আমি যখন কাজ শুরু করি, তখন মার্কিন জাদুশিল্পী ডেভিড ব্লেইন তুমুল জনপ্রিয়। ডেভিডই ‘স্ট্রিট ম্যাজিক’কে বিশ্বব্যাপী এত পরিচিত করিয়েছেন। তাঁর থেকেই অনুপ্রেরণা পেয়েছি।

প্রথম আলো:

বাংলাদেশে পেশা হিসেবে এটা কেমন? চ্যালেঞ্জগুলোই বা কী?

জাদুশিল্পী বলতে এখনো আমরা সবার প্রিয় জুয়েল আইচকেই চিনি। তাঁর পরে আর কেউ জাদু নিয়ে সেভাবে কাজ না করায় একটা শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে। এখন জাদুর ধরনেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। এখন স্ট্রিট ম্যাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক জাদু মানুষ বেশি পছন্দ করে। তবে বাংলাদেশে কিছু স্টিগমা আছে। জাদুর কথা বললেই ভাবে হয়তো কবুতর উড়িয়ে দেখাবে বা ফুল বের করবে। বিনোদন হিসেবে থিয়েটারে ম্যাজিক শো দেখতেও অনেকে প্রস্তুত না। এই ব্যাপারগুলোর পরিবর্তন দরকার। জাদুর দুনিয়া যে কত বড়, সেটা করে দেখানোর মাধ্যমে আমাদেরই সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে হবে।

প্রথম আলো:

জাদু নিয়ে কোনো মজার ঘটনা যদি বলেন...

করোনার লকডাউনের শেষের দিকে আমি তুরস্কে শো করতে গিয়েছিলাম। লকডাউনের জন্য নির্দিষ্ট সময়ের আগেই রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দিত। একদিন একটু বেশি সময় অবস্থান করায় পুলিশ সবার সঙ্গে বাজে ব্যবহার করছিল। তখন আমি পুলিশকে জাদু দেখিয়ে অবাক করে দিই। এরপর হাসিমুখে আমাদের অনেক সুবিধা দিয়েছিল। দেশের একটা ঘটনা বলি। পোস্ট অফিস থেকে একটা পার্সেল সংগ্রহ করতে পারছিলাম না। শুধু ঘোরাচ্ছিল। আমি অফিসে গিয়ে বললাম, সবাই তো কাজ নিয়ে সারা দিন ব্যস্ত থাকেন। আসেন, একটু জাদু দেখেন। জাদু দেখে ওরা খুব খুশি হয়েছিল। এরপর ৩০ মিনিটের মধ্যে আমার পার্সেল পেয়েছি।

আরও পড়ুন
ইউটিউবে ১৫ লাখের বেশি সাবস্ক্রাইবার এই তরুণের
ছবি: সংগৃহীত
প্রথম আলো:

কোনো তরুণ পেশা হিসেবে ‘জাদু’ বেছে নিতে চাইলে কী পরামর্শ দেবেন?

আমি কাছ থেকে অনেক তরুণকে অল্প দিনেই ভেঙে পড়তে দেখেছি। এক মাস প্রচণ্ড পরিশ্রম করে ফলাফল না পেলেই দেখা যায় ছেড়ে দেয়। এভাবে হবে না। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে এগোতে হবে। একটা ম্যাজিক শিখে সেটা শতবার অনুশীলন করতে হয়।

প্রথম আলো:

৫ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, স্টেজ শো, করপোরেট শো মিলিয়ে দেশে একটা পরিচিতি পেয়েছি। আপাতত নিজের অবস্থান আরও শক্ত করতে চাই। ইউটিউবে ১৫ লাখের বেশি সাবস্ক্রাইবার, যাঁদের একটা বড় অংশই বিদেশি। তাই ভবিষ্যতে বিদেশেও নিয়মিত শো করতে চাই। ঘুরে ঘুরে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষকে জাদু দেখিয়ে মুগ্ধ করতে চাই। স্বপ্ন দেখি, বিশ্বের বড় বড় জাদুকরদের কাতারে নিজেকে নিয়ে যেতে পারব। বাংলাদেশের মানুষও যেন গর্ব করে আমার নামটা বলতে পারে।