গ্রামে পরিচিত, শহরে প্রায় হারিয়ে গেছে: ডেউয়া ফলের গুরুত্ব আজ আরও বেশি কেন?

পুষ্টিগুণে ভরপুর, ঔষধি গুণেও অনন্য—ডেউয়া হয়তো হারিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আমাদের প্রয়োজন এখন আরও বেশি। কারণ, এর পুষ্টিগুণ ও ভেষজ উপকারিতা আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় রাখার মতোই মূল্যবান।

পুষ্টিগুণে ভরপুর, ঔষধি গুণেও অনন্য—ডেউয়া হয়তো হারিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আমাদের প্রয়োজন এখন আরও বেশিছবি: সাদ্দাম হোসেন

এমন অনেক দেশি ফল আছে, যেসব খুব বেশি পরিচিত না হলেও পুষ্টিগুণে ভরপুর। তেমন একটি ফল ডেউয়া। গ্রামাঞ্চলে বেশ পরিচিত হলেও শহরাঞ্চলে অপ্রচলিতই বলা চলে। অঞ্চলভেদে কেউ একে ডাকে ঢেউয়া, ডেলোমাদার, ডেউফল কিংবা ঢেউফল নামে। দেখতে এবড়োখেবড়ো ও কাঁঠালের খুদে সংস্করণের মতো ফলটির কোষগুলো হলুদ রঙের। পাকলে এই কোষ হয় অতি মোলায়েম। কাঁচা ফল সবুজ, পাকলে হলুদ। ভেতরের শাঁস লালচে হলুদ। কাঁচা থাকতে স্বাদ টকটক। পাকলে আবার অন্য স্বাদ। সেটা না টক না মিষ্টি। রান্না করেও খাওয়া যায়। চাহিদা কমে যাওয়ায় গ্রামে এ ফলের চাষ কমে গেছে। সঙ্গে কমছে দেশি এ ফলের কদর। অথচ পুষ্টিগুণে কাঁঠালের কাছাকাছি এ ফলের গুরুত্ব একটুও কম নয়।

ডেউয়াগাছ চিরসবুজ বৃক্ষ
ছবি: সাদ্দাম হোসেন
ডেউয়াগাছ চিরসবুজ বৃক্ষ। পাতাগুলো বড় ও খসখসে, অনেকটা ডুমুরের পাতার মতো। একেকটি গাছ ২০-২৫ ফুট উঁচু হয়। এর কাঠ বেশ উন্নত মানের। ডেউয়া ফলটি গোলাকৃতির, ২–৫ ইঞ্চি চওড়া। প্রতিটি ফলে থাকে ২০–৩০টি বীজ। একেকটি ডেউয়ার ওজন হতে পারে ২০০–৩৫০ গ্রাম।
আরও পড়ুন

ডেউয়া ফলের পুষ্টিগুণ

একেকটি ডেউয়ার ওজন হতে পারে ২০০–৩৫০ গ্রাম
ছবি: প্রথম আলো

পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এ ফল অনেকের কাছেই অপরিচিত। প্রতি ১০০ গ্রাম ডেউয়ায় থাকে—

  • খনিজ: ০.৮ গ্রাম

  • খাদ্যশক্তি: ৬৬ কিলোক্যালরি

  • আমিষ: ০.৭ গ্রাম

  • শর্করা: ১৩.৩ গ্রাম

  • ক্যালসিয়াম: ৫০ মিলিগ্রাম

  • লৌহ: ০.৫ মিলিগ্রাম

  • ভিটামিন বি১: ০.০২ মিলিগ্রাম

  • ভিটামিন বি২: ০.১৫ মিলিগ্রাম

  • ভিটামিন সি: ১৩৫ মিলিগ্রাম

  • পটাশিয়াম: ৩৪৮.৩৩ মিলিগ্রাম

ডেউয়া ফলের নানা উপকারিতা

ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়ামের ভান্ডার বলা যায় ডেউয়া ফলকে
ছবি: প্রথম আলো

ওজন কমাতে সাহায্য করে: ঠান্ডা পানিতে ডেউয়া রস মিশিয়ে খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। শুকিয়ে সংরক্ষণ করেও খাওয়া যায় সারা বছর।

বমিভাব দূর করে: এর টক-মিষ্টি স্বাদ বমিভাব কমাতে কার্যকর।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: ৮-১০ গ্রাম কাঁচা ডেউয়া বেটে গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেই পানি সকালে খালি পেটে খেলে উপকার মিলবে।

হাড়ের ক্ষয়রোগ প্রতিরোধে কার্যকর: এতে আছে প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন সি, যা দাঁত ও হাড়কে শক্তিশালী করে।

স্ট্রোক ও হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমায়: পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

আরও পড়ুন

রুচি বাড়ায়: সামান্য লবণ ও গোলমরিচ গুঁড়ার সঙ্গে ডেউয়ার রস খেলে মুখে রুচি ফিরে আসে।

পেটের গ্যাস দূর করে: দেড় চামচ পাকা ডেউয়ার রস আধা কাপ পানিতে মিশিয়ে এক সপ্তাহ খেলে পেটের বায়ু জমার সমস্যা কমে।

ত্বকের যত্নে: ডেউয়াগাছের ছালের গুঁড়া ব্রণের পুঁজ বের করে দিতে সহায়তা করে এবং ত্বকের রুক্ষতা দূর করে।

সানস্ট্রোক প্রতিরোধে: মরিচ, লবণ ও চিনি দিয়ে তৈরি ডেউয়ার ভর্তা খেলে সানস্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।

ডেউয়া ফলটিকে নতুন করে গুরুত্ব না দিলে হয়তো একদিন হারিয়েই যাবে
ছবি: আলীমুজ্জামান

এ ছাড়া ডেউয়া খেলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে, অতিরিক্ত তৃষ্ণা কমায়। পাকা ডেউয়া যকৃতের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করে এবং পিত্ত ও লিভারের নানা ধরনের সমস্যার প্রতিকারে কাজে আসে।

গ্রামের এ ঐতিহ্যবাহী ফলটিকে নতুন করে গুরুত্ব না দিলে হয়তো একদিন হারিয়েই যাবে। অথচ এর পুষ্টিগুণ ও ভেষজ উপকারিতা আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় রাখার মতোই মূল্যবান।

আরও পড়ুন