কুমিল্লার ধর্মসাগরপাড়ে বসে প্রতি শুক্রবার তাঁরা বই পড়েন কেন

এখন আর আমন্ত্রণ জানাতে হয় না। নিজ আগ্রহেই হাজির হয়ে যান অনেকে
ছবি: সংগৃহীত

এই জানুয়ারির একটি ভিন্নধর্মী উদ্যোগ বেশ আলোচনায় এসেছিল। নাম—বই পড়ার নীরব বিপ্লব। দুই বন্ধু হর্ষ ও শ্রুতির হাত ধরে ভারতের বেঙ্গালুরুতে শুরু হয় এই কার্যক্রম। বিষয়টি নজরে আসে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী নীখার সুলতানার। কেউ গাছের ছায়ায় বসে বই পড়ছে, কেউ ব্যস্ত আঁকাআঁকিতে, অনেকে সঙ্গে প্রিয় পোষ্যকেও নিয়ে এসেছে—কী সুন্দর আয়োজন! নীখার ভাবে, কুমিল্লাতে এমন একটা আয়োজন করা যায় না? ঢাকার রমনা পার্কেও একই ধরনের একটা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে দেখে সে সাহস পেয়ে যায়।

কুমিল্লায় নীরবে বই পড়া কর্মসূচীর আয়োজক অরুদ্ধ একাত্তর নামে একটি সংগঠন
ছবি: সংগৃহীত

অরুদ্ধ একাত্তর নামে শিশু-কিশোরদের একটি সংগঠনের কুমিল্লা শাখার সহকারী জেলাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে নীখার। নিজ সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে শুরু হয় কার্যক্রম। প্রথমে গঠন করা হয় ব্যবস্থাপনা দল। এরপর পরিকল্পনার কথা জানানো হয় ফেসবুকে। সেখানে একের পর এক মন্তব্য আসতে থাকে—কার অবসর সময় কখন, কোন স্থানে হলে ভালো হয়, ইত্যাদি। সিদ্ধান্ত হয়, কুমিল্লার ধর্মসাগর দিঘির পাড়ে হবে এ আয়োজন। আর সময়? শুক্রবারে হতে হবে, সেটা আগেই ঠিক করা ছিল। কেননা, অন্যান্য দিনে ক্লাসের ব্যস্ততা থাকে।

১১ আগস্ট শুরু হয় নীরবে বই পড়ার কর্মসূচি। সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত চলে এ আয়োজন। নীখার বলছিল, ‘প্রথম দিনই আশানুরূপ সাড়া পেয়েছি। মোট ৩৫ জন পাঠক আমাদের সঙ্গে যোগ দেয়। ধর্মসাগরপাড়ের আশপাশে ছোট ছোট বেঞ্চ আছে। সেখানে কেউ জোট বেঁধে, কেউ একাকী বই পড়েছে, ছবি এঁকেছে। শুধু বই নয়, কেউ কেউ বিজ্ঞানচিন্তা, কিশোর আলোর মতো ম্যাগাজিন নিয়েও হাজির হয়েছে।

দ্বিতীয় সপ্তাহের আয়োজনটি হয় গত ১৮ আগস্ট। চলে সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত। এদিন কারও হাতে ছিল আত্মোন্নয়নমূলক অনুবাদ বই ইকিগাই, কারও হাতে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শ হিন্দু হোটেল, কেউবা পড়েছে উইলবার স্মিথের দ্য সানবার্ড। একইভাবে ২৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয় তৃতীয় ‘নীরবে বই পড়া কর্মসূচি’।

সাধারণত শুক্রবার সকালে হয় এ আয়োজন
ছবি: সংগৃহীত

ডিভাইসে আসক্ত প্রজন্মকে বইমুখী করতে উদ্যোগ নিয়েছিল সংগঠনটি। সেই জায়গা থেকে অনেকটাই সফল তারা। নীখার সুলতানা বলছিল, ‘এখন আর পাঠকদের গাইড করার প্রয়োজন হয় না। নিজেরাই বই নিয়ে এসে নির্দিষ্ট জায়গায় বসে পড়ে, নিজের মতো করে সময় কাটায়। আসলে আমরা এটাই চেয়েছিলাম। আমরা এই ইভেন্টের হোস্ট হতে চাইনি। শুধু সুযোগটা তৈরি করে দিতে চেয়েছি। সেই জায়গা থেকে আমরা সার্থক।’

আরও পড়ুন

কুমিল্লা মডার্ন হাইস্কুলের শিক্ষার্থী ফয়সাল রহমান বলল, ‘কুমিল্লায়ও যে এমন কিছু সম্ভব, তা এখানে না এলে জানতাম না।’ আরেক পাঠক, কুমিল্লা জিলা স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আবু নাহিয়ান মো. তাসিন বলছিল, ‘ছুটির দিনে বাসায় থাকতে ভালো লাগে না। সপ্তাহে এক দিন সবার সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোই লাগে। সকাল বেলাতেই দিনটা সুন্দর হয়ে যায়। মন ফ্রেশ থাকে।’

আগামী দিনেও এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জানাল অরুদ্ধ একাত্তরের প্রতিষ্ঠাতা ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মোহতাসিম মনোয়ার। ক্লাবটির অন্যান্য উদ্যোগের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে তার বক্তব্য, ‘ইতিমধ্যে তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। সমাজের বিভিন্ন সমস্যার উদ্ভাবনী সমাধান খুঁজে বের করাও আমাদের লক্ষ্য।’

আরও পড়ুন