রোবটিকস শেখার অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, শিখতে পারেন যে কেউ
‘ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ব্যাটারি, মোটর, ক্যাপাসিটর নিয়ে নাড়াচাড়া করবে। কল্পনায় আঁকা বা টেলিভিশনে দেখা কোনো রোবট বাস্তবে নিজের হাতে তৈরির আনন্দ উপভোগ করবে—এতটুকুই তো চাওয়া।’ এই ‘একটুখানি’ চাওয়া নিয়েই ব্যতিক্রমী এক অনলাইন স্কুল চালু করেছেন ফুয়াদ আল হাসান। নাম ‘একটুখানি রোবোটিকস’। আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করেছেন ফুয়াদ। এখন প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সে। তবে রোবোটিকসই তাঁর ধ্যানজ্ঞান।
শুরুর গল্প
বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষ থেকেই নানা ধরনের রোবোটিকস প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া শুরু করেন ফুয়াদ আল হাসান। সাফল্যও পেয়ে যান। কিন্তু ধাক্কা খান প্রয়োজনীয় উপকরণ খুঁজতে গিয়ে। মুঠোফোনে ফুয়াদ বলছিলেন, ‘নিজে কাজ করতে গিয়ে টের পেয়েছি, বাংলাদেশে রোবট নিয়ে যত স্বপ্ন দেখে তরুণেরা, কাজের ক্ষেত্রটা ততটা মসৃণ নয়। কেউ যদি রোবোটিকস শূন্য থেকে শিখতে চায়, তার জন্য খুবই কঠিন। একটা স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র বা রোবট বানানো মানে কিন্তু অনেকগুলো প্রকৌশলের সমন্বয়। এখানে কোডিং, তড়িৎকৌশল, যন্ত্রকৌশল, সবই দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরই অনেক দৌড়ঝাঁপ করে শিখতে হয়, সেখানে স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েদের জন্য কাজটা আরও কঠিন। অন্যদিকে, বাংলায় রোবোটিকস শেখার সে রকম কোনো উপায়ও নেই।’ এই ভাবনা থেকেই একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির পরিকল্পনা করেন ফুয়াদ।
উদ্দেশ্য ছিল, স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীরা যেন বিনা মূল্যে রোবোটিকসের মৌলিক বিষয়গুলো একটু একটু করে জানার ও হাতে–কলমে শেখার সুযোগ পায়। ২০১৮ সালের শেষের দিকে যাত্রা শুরু করে অনলাইন স্কুল ‘একটুখানি রোবোটিকস’।
কারা শিক্ষার্থী হতে পারবে
যেকোনো বয়সের শিক্ষার্থীই এই অনলাইন স্কুলের অংশ হতে পারে। স্কুলে ভর্তি হতে বেশি কিছু দরকার নেই। শুধু থাকতে হবে রোবোটিকসের প্রতি ঝোঁক আর অনলাইনে শেখার মানসিকতা। বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হতে হবে—এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। বয়সের ক্ষেত্রেও কোনো সীমা বেঁধে দেওয়া হয়নি। ফুয়াদ বুঝিয়ে বললেন, ‘বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরাই শুধু রোবোটিকস শিখবে, এমন তো নয়। হ্যাঁ, বিজ্ঞানের শিক্ষা থাকলে ভালো, তবে অন্য বিষয়ের শিক্ষার্থীরাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। যেকোনো রোবট তৈরির ক্ষেত্রেই কিন্তু প্রকৌশলের নানা বিষয়ে দক্ষ হতে হয়। তবে আমরা তো শুধু রোবট নিজের জন্য বানাতে চাই না। সেটাকে ছড়িয়েও দিতে চাই। আর এখানেই প্রয়োজন ব্যবসায় শিক্ষার। আবার আজকাল চিকিৎসাবিজ্ঞানে রোবোটিকসের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। ফলে জীববিজ্ঞানের শিক্ষার্থীকেও দরকার। তাই যেকোনো বয়সের যে কাউকেই আমরা রোবোটিকসের দুনিয়ায় স্বাগত জানাই।’
কীভাবে কাজ করে এই প্ল্যাটফর্ম
শুরুর দিকে বিনা মূল্যে ব্যাচে শেখার সুযোগ ছিল। এখন ‘একটুখানি রোবোটিকস’–এর সঙ্গে যোগাযোগ করে যেকোনো সমস্যার সমাধান নেওয়া যায়। বিভিন্ন সেমিনার ও কর্মশালারও আয়োজন করে ‘একটুখানি রোবোটিকস’। যোগাযোগের প্রক্রিয়াটা শোনা যাক ফুয়াদের কাছে, ‘আমরা ঢাকা ও ঢাকার বাইরে অনেক কর্মশালা করেছি। স্কুল-কলেজে সেমিনার করেছি। কর্মশালাগুলো সাধারণত দুই দিনের হয়। ফলে হাতে-কলমেই বিস্তারিত শিখতে পারে শিক্ষার্থীরা। এরপরও যদি কারও সমস্যা থেকে যায়, ফেসবুকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই আমরা যত দ্রুত সম্ভব সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করি। এরপরও না হলে বিশেষ ক্ষেত্রে ভিডিও কলে থেকেও আমরা সমাধান বুঝিয়ে দিয়েছি।’
স্বল্প সময়ের জন্য সরাসরি ক্লাসরুমে শেখার ব্যবস্থাও করেছিল প্রতিষ্ঠানটি। সেই ক্লাস অবশ্য বিনা মূল্যে নয়। এ ছাড়া আরেক অনলাইন শিক্ষার প্ল্যাটফর্ম টেন মিনিট স্কুলেও ‘রোবোটিকস ফর কিডস’ নামে একটি কোর্স পরিচালনা করেন ফুয়াদ আল হাসান। জানালেন, ভারত ও নেপালের রোবোটিকস সোসাইটির সঙ্গেও এক হয়ে কাজ করে ‘একটুখানি রোবোটিকস’। এরই মধ্যে ফুয়াদের কয়েকজন ছাত্রছাত্রী রোবোটিকস–সংক্রান্ত বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পুরস্কারও পেয়েছেন।