গহিন বনে থেকেও তিনি যেভাবে ছাপা পত্রিকার নিয়মিত পাঠক

সুন্দরবনের গহিন অবস্থিত বন বিভাগের স্টেশন ও টহল ফাঁড়িগুলোতে দিনের পত্রিকা দিনে পাওয়া সম্ভব হয় না। তবু পাঁচ বছর ধরে বনের ভেতরে থেকেও ছাপা পত্রিকা পড়ে যাচ্ছেন বন কর্মকর্তা আবদুল হাকিম। কীভাবে? সেই গল্পই শোনাচ্ছেন ইমতিয়াজ উদ্দীন

সুন্দরবনের কালাবগী ফরেস্ট স্টেশনে বসে পত্রিকা পড়ছেন বন কর্মকর্তা আবদুল হাকিমছবি: লেখক

ফরেস্ট অফিসের সামনে গোলপাতার ছাউনি দেওয়া ঘর। সেই ঘরে বসে প্রথম আলো পড়ছিলেন আবদুল হাকিম। পশ্চিম সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের আওতাধীন এই কালাবগী ফরেস্ট স্টেশনের তিনি প্রধান কর্মকর্তা। ২ মার্চ কুশল বিনিময়ের পর তাঁর সঙ্গে ভালোই আলাপ জমেছিল। সেই আলাপের সূত্রেই জানা গেল ছাপা পত্রিকার প্রতি তাঁর অন্য রকম ভালো লাগার কথা।

২০ বছর ধরে প্রথম আলোর নিয়মিত পাঠক ফরেস্টার আবদুল হাকিম। চাকরির সুবাদে ২০১৮ সাল থেকে সুন্দরবনে আছেন। বজবজা টহল ফাঁড়ি দিয়ে শুরু করেছিলেন। এরপর একে একে কাশিয়াবাদ, নীলকমল ও কালাবগী স্টেশনে কাজ করেছেন। সব জায়গায় তাঁর সঙ্গী ছিল প্রথম আলো। তিনি বলেন, ‘বনে প্রতিদিনের পত্রিকা পাওয়া সম্ভব হয় না। তাই পুরোনো পত্রিকা সংগ্রহ করে পড়ি।’

প্রতি মাসে দাপ্তরিক কাজে কিংবা বাজারসদাই করতে অন্তত একবার বন থেকে লোকালয়ে যান আবদুল হাকিম। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার পাশাপাশি তখন মাসের পত্রিকাও সংগ্রহ করে আনেন। এ জন্য স্থানীয় হকারকে অগ্রিম মূল্য পরিশোধ করে রেখেছেন। হকারই নিজের কাছে রেখে দেন পত্রিকা। যখনই আবদুল হাকিম লোকালয়ে যান, হকারের কাছ থেকে পুরোনো কপি সংগ্রহ করে নিজ কর্মস্থলে নিয়ে আসেন।

আরও পড়ুন
বন কর্মকর্তা আবদুল হাকিম
ছবি: লেখক

আবদুল হাকিমকে জিজ্ঞেস করি, প্রথম আলোই কেন পড়েন? তিনি বলেন, ‘কেন যেন প্রথম আলোই মন থেকে ভালো লাগে। পত্রিকাটা পড়তে পড়তে এমন হয়ে গেছে, এখন অন্য কোনো পত্রিকা পড়তে গেলে কেমন যেন অগোছালো মনে হয়।’

দুর্গম জঙ্গলে লোকালয় ও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন বনকর্মীদের জীবনে সময় যেন অফুরন্ত। এখানে আবদুল হাকিমের অবসরের বন্ধু পত্রিকা। বললেন, ‘গহিন বনের মধ্যে পরিবারের লোকজনের কথা সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে। বনের অনেক জায়গায় মোবাইলের নেটওয়ার্ক থাকে না। তারপরও চাকরির জন্য সবকিছু মেনে নিতে হয়। জঙ্গলে চাকরির গত পাঁচ বছরে একটি ঈদ পরিবারের সঙ্গে কাটিয়েছি। বাকি সব সুন্দরবনে। পত্রিকা পড়লে মন খারাপটা কমে আসে।’

প্রথম আলোর সম্পাদকীয় পাতা আবদুল হাকিমের বেশি পছন্দ। এ ছাড়া শেষের পাতায় প্রাণী ও প্রকৃতি নিয়ে যেসব লেখা ছাপা হয়, সেগুলো মন দিয়ে পড়েন। বনের মধ্যে বসে সুন্দরবনের প্রাণী, গাছপালা নিয়ে লেখা পড়তে পড়তে অন্য জগতে হারিয়ে যান তিনি।