গৃহপরিচারিকা ছাড়া যেন আমাদের চলেই না। মানুষটি একদিন বাসায় না এলে গৃহিণীদের বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে ওঠে—কী যেন নেই, কে যেন নেই! ঘুম থেকে উঠে কলবেলের শব্দে তাঁকে ঢুকতে না দেখলে ব্যস্ত হয় গৃহিণীর মুঠোফোন।
কথা হচ্ছে, গৃহকর্মীদের ওপর কেন এত নির্ভরতা? শহরের জীবনযাপনে এই চিত্র আমরা নিজেরাই তৈরি করেছি। বাসায় মেয়েদের ওপর ঘরের কাজের সব দায় চাপিয়ে পুরুষেরা নির্ভার হতে চেয়েছেন। আমাদের বেশির ভাগ পরিবার বিশ্বাস করে—রান্না করা, ঘর পরিষ্কার বা কাপড় ধোয়া মেয়েদের কাজ।
অথচ এই পুরুষেরাই কিন্তু প্রবাসে গিয়ে ঠিকই রান্না করে জীবন ধারণ করছেন। কিন্তু নিজ দেশে এক গ্লাস পানি নিজে ভরে খেতেও তাঁদের অনীহা!
এটা আমাদের ‘সিস্টেমের’ দোষ। ছোটবেলা থেকে মাকে রান্নাঘরে কাজ করতে দেখে আমরা অভ্যস্ত হই। ধরেই নিই, বাজার করা বাবাদের কাজ আর ঘরের কাজ মায়েদের। আমরা আমাদের ছোটবেলায় মাকে এটা-ওটা এগিয়ে দিয়ে সাহায্য করতাম, এখন দুই হাতের মুঠোয় মুঠোফোন থাকাতে সেটাও করছে না কিশোর-কিশোরীরা।
নিজের পড়ার টেবিল নিজে গুছিয়ে রাখা, আলমারিতে কাপড় ভাঁজ করে রাখা, মশারি টানানো, আসবাব মোছা, সেদ্ধ আলু–ডিম বেছে দেওয়া, ডাইনিং টেবিল সাজানো, জগে পানি ভরা, গাছে পানি দেওয়া, খাওয়ার পর প্লেট–গ্লাস ধুয়ে রাখা—এমন অনেক কাজ আছে, অনায়াসে যেগুলো বাচ্চারা করতে পারে। ভারী কাজগুলো বাসার বড়রা অর্থাৎ মা-বাবা বা অন্য কোনো সদস্য থাকলে তাঁরা ভাগাভাগি করে করতে পারেন। কেউ চাল ধুয়ে দিল, কেউ কিছু কাপড় ধুয়ে দিল, কেউ ঘর ঝাড়ু দিল—এমন করে কাজ ভাগ করে নিলে বাসার গৃহকর্মীর ওপর এত নির্ভর করতে হয় না।
বাসার সবাই মিলে সব কাজ করলে নিজেদের মধ্যে একটা চমৎকার বন্ধন তৈরি হয়। শিশুদের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব তৈরি হয়—কার কাজ বেশি সুন্দর হলো। আর যেটা হয়, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্ক মজবুত হয়।
প্রতিদিনকার কর্মব্যস্ত জীবনে অফিস শেষে বাসায় ফেরার পর ‘আমি কী তোমার বুয়া নাকি, নিজে করে নিতে পার না?’ নারীদের মুখে এই তীব্র কটু কথা শোনা থেকে অন্তত পুরুষেরা রেহাই পান। পাশাপাশি যে মেয়েটি মাত্র অফিস করে বাসায় ফিরল, তিনিও রান্নাঘরে না দৌড়ে সন্তানদের সঙ্গে ভালো কিছু সময় কাটাতে পারেন।
কবি বলে গেছেন—দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ!