স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও বিজেএস—তিন পরীক্ষাতেই প্রথম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নুসরাত

স্নাতকের পর স্নাতকোত্তরেও প্রথম হয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী নুসরাত জেরিন। এর আগে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন তিনি। স্নাতকে সর্বোচ্চ সিজিপিএ অর্জন করায় মনোনীত হয়েছেন স্বর্ণপদকের জন্য। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তানভীর রহমান

প্রথম আলো:

স্নাতকের পর স্নাতকোত্তরেও প্রথম শ্রেণিতে প্রথম। কীভাবে সম্ভব হলো?

একাডেমিক লাইফের শুরু থেকেই পড়ালেখায় ধারাবাহিক ছিলাম। তা ছাড়া প্রথম বর্ষে প্রথম হওয়ার পর নিজের অবস্থান ধরে রাখার একটা চাপ ছিল। এই সাফল্যের রহস্য পরিশ্রম, পড়ালেখা ও সবার দোয়া।

প্রথম আলো:

বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস (বিজেএস) পরীক্ষাতেও ছিল, প্রথম হলেন। এ রকম সাফল্যের জন্য আসলে কী প্রয়োজন?

আমি বলব—মেধা ও পরিশ্রমের মিশ্রণ। শুরুতে একটা লক্ষ্য ঠিক করে, সেই অনুযায়ী ধাপে ধাপে এগোতে পারলে ভালো কিছু আশা করা যায়। আমি পরিশ্রম করেছি, দীর্ঘ একটা সময় ধারাবাহিকভাবে পড়ালেখা করেছি।

প্রথম আলো:

ছোটবেলা থেকেই কি আইন নিয়ে পড়তে চেয়েছিলেন?

না। মা-বাবার স্বপ্ন ছিল, মেয়ে ডাক্তার হবে। সেই স্বপ্ন পূরণ করারই চেষ্টা করেছি। ছোটবেলা থেকে আইনে পড়তে না চাইলেও কলেজ থেকে আইনের প্রতি কৌতূহল জন্মে।

প্রথম আলো:

তাহলে আইন বিষয়টা ভালো লাগতে শুরু করল কখন?

স্নাতক প্রথম বর্ষে প্রথম হওয়ার পর মনে হলো, সৃষ্টিকর্তা হয়তো এখানেই আমার জন্য ভালো কিছু রেখেছেন। তার পর থেকে আইনকে সিরিয়াসলি নিয়ে পড়াশোনা করতাম।

প্রথম আলো:

যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ে সব সময়ই প্রথম ছিলেন, আপনার প্রস্তুতিটা নিশ্চয় অন্য সবার চেয়ে আলাদা?

আমি নিয়মিত ক্লাস করতাম। ক্লাস লেকচার তুলে বইয়ের সঙ্গে মিলিয়ে গুছিয়ে রাখতাম। পরীক্ষার তিন মাস আগে থেকে বন্ধু সাদিয়া, নোশিন, শাম্মি, খাদিজা, কবীরের সঙ্গে গ্রুপ স্টাডি করতাম। আগের বছরের প্রশ্ন সমাধান করতাম। যেগুলো বইয়ে পেতাম না, নিজেরা নোট করতাম। আমার ভালো ফলের পেছনে বন্ধুদের একটা বড় অবদান ছিল।

প্রথম আলো:

এবার বিজেএস পরীক্ষার প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাই...

বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই আমি আইন অংশটা ভালোভাবে পড়েছি। বলা যায়, স্নাতক শেষেই আইনের ৬০০ নম্বরের প্রস্তুতি ৮০ ভাগ হয়ে গেছে। আমি একাডেমিক পড়াশোনার সঙ্গে বিজেএস পরীক্ষার সিলেবাস মিলিয়ে, গুছিয়ে পড়াশোনা করেছি। বিজেএস প্রস্তুতি নেওয়ার পুরো সময়টাতে মৌ আপু সঙ্গে ছিলেন। আপুর নির্দেশনা অনুযায়ী পড়েছি।

প্রথম আলো:

আপনার মতো যাঁরা একাডেমিক ও চাকরির পরীক্ষায় ভালো করতে চান, তাঁদের কী পরামর্শ দেবেন?

ধারাবাহিকভাবে পড়ালেখা করতে হবে। হতাশ হয়ে হাল ছাড়া যাবে না। ‘আমি পারব না’, ‘আমাকে দিয়ে হবে না’—এ রকম ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে।

প্রথম আলো:

বিশ্ববিদ্যালয়জীবনের কোনো বিশেষ ঘটনার কথা মনে পড়ে—যা আপনাকে প্রেরণা জুগিয়েছিল?

তখন আমি প্রথম বর্ষে, আমাদের পরবর্তী ব্যাচের ফল দিল। তখন দেখলাম, এখানে প্রথম হওয়া রাতারাতি সেলিব্রিটি হয়ে যাওয়ার মতো একটা ব্যাপার। সবার মুখে মুখে শুধু একজনের নাম। ঠিক এই সময়টাই আমার মনে হলো, আমিও যদি প্রথম হতে পারতাম! ভাবতে খুব অবাক লাগে, পরের বছর আমি প্রথমই হলাম।

প্রথম আলো:

পড়ালেখার পাশাপাশি আপনার আর কিসে আগ্রহ?

ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি। ছোট-বড় বেশ কিছু পুরস্কারও পেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার (বিওয়াইএলসি), ব্রিটিশ কাউন্সিলসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে থেকেছি। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে জেনোসাইড অ্যান্ড জাস্টিস কোর্স করেছি।

প্রথম আলো:

পড়ালেখার এই যাত্রায় কোন সময়টা কঠিন ছিল?

আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্নুজান হলে থাকতাম। ৩২৮ নম্বর রুম। রুমমেটরা সবাই খুব ভালো ছিল। খুব সাহায্য করত। তারপরও রুমের নিয়ম তো মানতেই হতো। দেখা যেত, পরীক্ষার সময় কনকনে শীতের মধ্যে বারান্দায় বসে সারা রাত পড়তে হয়েছে। রিডিংরুমে জায়গা না পেলে মাঠে বসেই পড়তাম। পরীক্ষার মধ্যে অতিরিক্ত চাপে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে যেতাম। তারপরও হাল ছাড়িনি।

প্রথম আলো:

এখন সামনে কী লক্ষ্য?

পড়ালেখার গণ্ডি পেরিয়ে চাকরিজীবনে চলে এসেছি। এখন আপাতত সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে নিজের দায়িত্ব পালন করা, মানুষের জন্য কাজ করা—এটাই লক্ষ্য।