তোরা ছিলি, তোরা আছিস, জানি তোরাই থাকবি

বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে বন্ধুরা সব সময়ই আছে পাশে
ছবি: সংগৃহীত

স্কুল–কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখি, শুরুতে মা-বাবা আমাকে নিয়ে খুব সংশয়ে ছিলেন। কারণ, আমার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। হাঁটাচলা করতে একটু অসুবিধা হয়। আর সবার মতো করে পারি না। তাই ছোটবেলা থেকেই নানা বাধা পেরোতে হয়েছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা পাশে ছিল বলেই হয়তো আমার পথচলাটা সহজ হয়ে গেছে।

প্রিয় বন্ধুরা, আজ বন্ধু দিবসে তাই তোদের উদ্দেশেই লিখতে বসেছি।

বন্ধুরা যখন অভিভাবক

২০২২ সালের এপ্রিলে যখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্নুজান হলে সিট পেলাম, তখনো একটু ভয় ভয় করছিল। একা একা সব সামাল দিতে পারব তো? আমার সব সংশয় দূর হয়ে গেছে গত শীতে।

গুরুতর অসুস্থ হয়ে ভর্তি হয়েছিলাম রাজশাহী মেডিকেল কলেজে। রাত যখন প্রায় দুইটা, তখন খবর পেয়ে ছুটে এসেছিলি তোরা, আমার বন্ধুরা। মেডিকেলে বেডের সংকট থাকায় ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেঝেতে আমার চিকিৎসা শুরু হলো। ডাক্তার বলছিল রক্ত লাগবে। তোরা সবাই মিলে সব দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছিলি। স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করা, রক্তের ব্যবস্থা করা, ডাক্তারের পেছনে ছোটাছুটিসহ আরও কত কাজ!

প্রথম দিন ক্যাম্পাসের বড় ভাই-আপুদের সঙ্গে তোরাও কনকনে ঠান্ডায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজের বারান্দায় বসে সারাটা রাত কাটিয়ে দিয়েছিলি। বারবার খোঁজ নিয়েছিস কখন কী দরকার পড়ে, আমার অবস্থা কেমন…।

পরদিন আমাকে বেডে স্থানান্তর করা, স্ট্রেচারে করে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাওয়াসহ সব কাজে তোরা পাশে ছিলি। আম্মু-বাবা তখনো রাজশাহী এসে পৌঁছাতে পারেনি। তোরাই সাহস জুগিয়েছিস। সেদিন বিভাগের সব বন্ধুরা মিলে যখন আমাকে দেখতে এল, মনে অনেকটা জোর পেয়েছি। ভাগ্যিস তোরা ছিলি! স্নাতকের প্রথম বর্ষেই এতটা স্নেহ, মায়া পাব, ভাবতে পারিনি।

আমার অনুপ্রেরণা

ছোটবেলা থেকে সব সময় নানা সমস্যায় বন্ধুদের পাশে পেয়েছি। আমার এটা লাগবে, ওটা লাগবে থেকে শুরু করে সিঁড়ি দিয়ে আমার ওঠা-নামা, রিকশা ঠিক করে দেওয়া, সব সময় তোরা সাহায্য করেছিস।

কলেজে পড়ার সময় বাবার সঙ্গে যাওয়া-আসা করতাম। রাজিয়া, রনি, শরীফ, রুকাইয়া, লক্ষ্মী, কলেজে বন্ধুবান্ধব বলতে তোরাই ছিলি। রাজিয়া আর আমার স্কুল একটাই ছিল। একসঙ্গে যাওয়া–আসা, গ্রুপ স্টাডি করা। আমার নামে কেউ কিছু বলতে এলে কী অদ্ভুতভাবেই না তোরা সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়তি!

আমার চলাফেরার অসুবিধা থাকায় রনির কাজ ছিল প্রত্যেক দিন নিয়ম করে বাবাকে ফোন করে বলা, ‘আঙ্কেল, প্রাইভেট শেষ। হাবিবাকে নিয়ে যান।’ বিপদে-আপদে তোদের পাশে পেয়েছি সব সময়। করোনাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসার সময় অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অনেক কঠিন সময় পার করেছি তখন। একরকম পরিবারের অমতে গিয়েই বাড়ি থেকে দূরের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। অনেকে হেয়প্রতিপন্ন করত, ঠাট্টা করত আমাকে নিয়ে। কত জটিলতা তৈরি হয়েছে! মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়েছিলাম। সে সময় তোরা, আমার বন্ধুরা পাশে না থাকলে কী যে হতো! তোরা আছিস বলেই দূরে থাকলেও মা-বাবা একটু স্বস্তি পায়। আর আমি পাই অনুপ্রেরণা, সামনে এগোনোর।

লেখক: গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন