ইংল্যান্ডের নারী ফুটবলাররা আজ থেকে কেন আর সাদা শর্টস পরবেন না
ফিফা উইমেনস ওয়ার্ল্ড কাপের ফাইনালে আজ মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড ও স্পেন। আজ থেকে ইংল্যান্ড দলে একটি ছোট, তবে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন শুরু হলো। সাদা শর্টস পরে এখন থেকে আর খেলবে না ইংল্যান্ড নারী ফুটবল দল।
কেবল ইংল্যান্ড দলের নারী ফুটবলাররাই নন, জাম্বিয়া আর ফিলিপাইনের নারী ফুটবল দলও আর সাদা শর্টস পরবে না বলে জানিয়েছে। ইংল্যান্ডেরও আগে কানাডা, ফ্রান্স, নাইজেরিয়া আর দক্ষিণ কোরিয়ার নারী ফুটবল থেকে বিদায় নিয়েছে সাদা শর্টস। আরেকটু বড় পরিসরে বললে—কেবল ফুটবল না, এসব দেশের সব ধরনের খেলাতেই নারীরা আর সাদা কিংবা হালকা রঙের শর্টস পরেন না। ইংল্যান্ডের নারী দল যখন ফাইনাল খেলার জন্য সাদা শর্টস বাতিল করে নতুন পোশাক সামনে আনল, তখনই বিষয়টি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। এমন সিদ্ধান্ত স্বস্তি বয়ে এনেছে নারী খেলোয়াড়দের মধ্যে।
যুক্তরাজ্যের জাতীয় নারী ফুটবল দলের ফরোয়ার্ড লরেন হেম্প মনে করেন, বিষয়টি দেখতে ছোট হলেও এটা গভীর তাৎপর্যপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। লরেন বলেন, ‘অনেক সময় আমাদের খেয়ালই থাকে না যে পিরিয়ডের সময় চলে এসেছে। আর এটি-ই স্বাভাবিক। অনেক নারী খেলোয়াড়েরই প্রথমবার পিরিয়ড হওয়ার অভিজ্ঞতা হয় মাঠে। প্রতি মাসে পিরিয়ডের মতো একটা স্বাভাবিক বিষয়ের জন্য কয়েকটা দিন খেলা থেকে দূরে থাকার তো প্রশ্নই আসে না। ফলে এখন আমরা নির্ভার হয়ে আরও বেশি করে খেলায় মনোযোগ দিতে পারব।’
ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারের স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নিকোল মেল্টন জানান, এ বছর নারী বিশ্বকাপে ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি টিকিট বিক্রি হয়েছে। সংখ্যাটা প্রায় ১০ লাখ। তিনি সিএনএনকে মেইলে এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘নারীদের বিশ্বকাপেও বৈশ্বিক মনোযোগ এখন ২৫ বছরের ভেতর সবচেয়ে বেশি। এখন সবার উচিত নারী খেলোয়াড়দের প্রতি মনোযোগ দেওয়া। তাঁদের সুবিধা-অসুবিধার সর্বোচ্চ দেখভাল করা, আর স্বস্তিদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা। তবেই নারী খেলোয়াড়দের নিয়ে যে ইন্ডাস্ট্রি, সেটি আরও অনেক বেশি এগিয়ে যাবে। এখনো যদি পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের ইতি না ঘটে, তবে আর কবে হবে?’
নিউজিল্যান্ডের জাতীয় দলের ফুটবলার হানা উইলকিনসন মনে করেন, সাদা শর্টসকে বিদায় করার সিদ্ধান্ত নারীদের আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী করবে। এমন ঘটনার ভেতর দিয়ে নারী স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার বিষয়টিও সামনে এল।
হানা বলেন, ‘আমি মনে করি, কেবল ফুটবল নয়, বরং যেকোনো খেলাতেই অতীতের তুলনায় নারীদের জন্য এখন ভালো সময়। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিজেদের সুবিধা-অসুবিধাগুলো এখন আমাদের জানানো উচিত। কেননা আপনি যখন চাপমুক্ত থাকেন, ফুরফুরে মেজাজে খেলেন, তখন আপনার পারফরম্যান্সও ভালো হয়। আর এখন নারীদের খেলা দেখতে মানুষ বেশি আগ্রহী। তাই নারী খেলোয়াড়দের কোনো বিষয় নিয়ে হেলাফেলা করার সুযোগ নেই।’
ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটির হেলথ অ্যান্ড স্পোর্টস ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ক্লেয়ার হ্যানন এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জনিয়ে এ-ও বলেন, ‘এটা কেবল শুরু। নারীদের স্পোর্টস ইন্ডাস্ট্রিতে স্বাগত জানাতে এ রকম আরও অসংখ্য সাহসী ইতিবাচক সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। নারীর শরীর পুরুষের চেয়ে আলাদা। একজন নারী খেলোয়াড়ের জীবনযাত্রায় যত বাধা আর ওঠানামা আছে, একজন পুরুষ খেলোয়াড় সেটা হয়তো কল্পনাও করতে পারবেন না। এ জন্য নারী খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা থেকে শুরু করে তাঁদের সর্বোচ্চ স্বস্তির নিশ্চয়তার দিকে মনোযোগী হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।’
সূত্র: সিএনএন