‘বাংলাদেশের ক্রিকেটে আমিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’

অনুষ্ঠানের অতিথি ও আয়োজকেরা
ছবি: মোহাইমিন আহমেদ

‘বিতর্কের জাল বুনে যাই’—এই স্লোগান নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল তর্কজাল। বিতর্ককে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যেই কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি। সেই ধারাবাহিকতায় এবার বিশেষ ক্রিকেট বিতর্ক আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছিল তারা। তর্কজালের প্রতিষ্ঠাতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মো. সাইফুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিতার্কিকদের আয়োজনকে বড় পরিসরে তুলে ধরার উদ্যোগ নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হয়। গত বছর ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে বিশেষ বিতর্কের আয়োজন করেছিলাম। এবার এশিয়া কাপ ও ক্রিকেট বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এ উদ্যোগ নিয়েছি।’

১৬ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল মিলনায়তনে বসেছিল বিতর্কের এই জমজমাট আসর। তর্কজালের পরিকল্পনা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মৈত্রী ডিবেটিং ক্লাবের সহযোগিতায় বিশেষ এই বিতর্কে বাংলাদেশ ক্রিকেটের পাঁচ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের ভূমিকায় অংশ নেন বিভিন্ন বিতর্ক দলের সদস্যরা।

বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের চরিত্রে ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি ডিবেট অর্গানাইজেশনের (জুডো) সাবেক সহসভাপতি জাফর সাদিক। এ ছাড়া প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর ভূমিকায় এফ রহমান ডিবেটিং ক্লাবের (এফআরডিসি) মুবিন মজুমদার, ক্রিকেটার তামিম ইকবালের ভূমিকায় এফআরডিসির সভাপতি রায়হান উদ্দীন, সাকিব আল হাসানের ভূমিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিতর্ক সংঘের সাধারণ সম্পাদক মিশমি এবং বর্তমান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের ভূমিকায় বিতর্ক করেন সূর্যসেন বিতর্ক ধারার সুলতানুল আরেফিন। ‘বাংলাদেশের ক্রিকেটে আমিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’—যুক্তি-তর্ক দিয়ে এটিই প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন প্রত্যেক বিতার্কিক। তর্কজালের প্রতিষ্ঠাতা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এই পাঁচজনের বাইরে মাশরাফি বিন মুর্তজা চরিত্রেও একজনকে রাখার পরিকল্পনা ছিল। শেষ মুহূর্তে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় সেটি আর সম্ভব হয়নি।’

প্রত্যেক বিতার্কিকের জন্য সময় বরাদ্দ ছিল পাঁচ মিনিট। এর মধ্যেই ‘নিজের গুরুত্ব’ প্রমাণ করতে বিভিন্ন তথ্য ও যুক্তি তুলে ধরেন বিতার্কিকেরা। তামিম ইকবাল চরিত্রে অংশ নেওয়া রায়হান উদ্দীন বলেন, ‘২০০৭ সালে বাংলাদেশের ক্রিকেট যখন খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে, বাংলাদেশের দর্শকেরা ভুলে যাচ্ছিলেন, শেষ কবে তাঁরা ছক্কা বা চার দেখেছেন, সেই সময়ে আবির্ভাব ঘটে “ওয়ান্ডার বয়” তামিমের। বাংলাদেশ দলকে খাদের কিনারা থেকে বিশ্ব আসনে পরিচিত করার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে তামিম ইকবাল খানের। ভালোবেসে অনেকে তাঁকে বলেন জয়সুরিয়া, অনেকে বলেন ড্যাশিং ওপেনার, আবার অনেকে ডাকেন বুমবুম তামিম।’

সাকিব আল হাসান চরিত্রে অংশ নেওয়া মিশমি বলেন, ‘২০০৬ সালে ক্রিকেট অঙ্গনে প্রবেশের সময় সাকিব আল হাসান যতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন, ২০২৩ সালের আসন্ন বিশ্বকাপ পর্যন্ত তিনি ঠিক ততটাই জনপ্রিয়। বলা হয়ে থাকে, রোহিতকে (শর্মা) (যুজবেন্দ্র) চাহাল দিয়ে যোগ করলে একজন সাকিব হয়।’

চন্ডিকা হাথুরুসিংহে চরিত্রে বিতর্ক করা সুলতানুল আরেফিন বায়েজিদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে বলা হয় বাঘের দল। নাজমুল হাসান পাপন বাঘেদের সর্দার। আর এই বাঘের দলের একমাত্র সিংহ কে? আমি চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।’

মিনহাজুল আবেদীন নান্নু চরিত্রে মুবিন মজুমদার বলেন, ‘হাথুরুসিংহে তাঁর পুরো ক্রিকেটের ইতিহাসে উইকেট পেয়েছিলেন ১৭টি। সেখানে মিনহাজুল আবেদীন নান্নু পেয়েছেন ১৮টি উইকেট। তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান যদি বিশ্বকাপের মঞ্চে খেলার অনুমতি না পেতেন, তাহলে তাঁরা কীভাবে রাঙাতেন? কেমন করে ১৭ বছরের বালক ভারতের বিপক্ষে অসাধারণ ইনিংস খেলতেন? সেটির উত্তর কারও জানা নেই। তাই নির্বাচক হিসেবে মিনহাজুল আবেদীন নান্নুর অবদান কতটা, তা আলাদা করে বলতে হয় না।’

সব শেষে নাজমুল হাসান পাপনের ভূমিকায় জাফর সাদিক উল্লেখ করেন, ‘২০১২ সালে নাজমুল হাসান পাপন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেটে সুবাতাস বইছে। সে বছরই বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো সিরিজ জেতে। এরপর বাংলাদেশ র‍্যাঙ্কিংয়ে ৬ পর্যন্ত গিয়েছে। দায়িত্ব নেওয়ার পর, ১১ বছরে ২০টির বেশি দ্বিপক্ষীয় সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। আর বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের পঞ্চম ধনী ক্রিকেট বোর্ড। এই সবকিছুর নেপথ্যে অবদান রয়েছে বিসিবি বস নাজমুল হাসান পাপনের।’

ভবিষ্যতেও বিতর্কের সঙ্গে থাকতে চান, এ ধরনের আয়োজন আরও করতে চান বলে জানান তর্কজালের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বলেন, ‘সহশিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিতর্ককে আরও বেশি প্রায়োগিক করতে কাজ করে যাচ্ছি। তর্কজালের হাত ধরে আমরা “বিতার্কিক স্টার” তৈরি করতে চাই। পাশাপাশি তর্কজালকে বিতর্কের একটা স্বতন্ত্র প্ল্যাটফর্ম হিসেবে দাঁড় করানোর আশাও ব্যক্ত করেন তিনি।

‘বাংলাদেশের ক্রিকেটে আমিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ’ শীর্ষক বিশেষ এই ক্রিকেট বিতর্কে সভাপতি ছিলেন প্রথম আলোর প্রধান ক্রীড়া সম্পাদক উৎপল শুভ্র। তিনি বলেন, ‘এটা ভালো হয়েছে যে, এখানে কোনো জয়-পরাজয় নেই। আমাকে কোনো রায় দিতে হবে না, শুধু শুনতে হবে। বিতর্কটা পাঁচজনকে নিয়ে হলেও, এটা পাঁচজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না। আজকাল ডিজিটাল যুগ। সব জায়গায় এটি ছড়িয়ে পড়বে। আমি সবার বক্তব্যই উপভোগ করেছি। সবচেয়ে ভালো হতো, যে পাঁচজনকে নিয়ে কথা হলো, তাঁদেরকে যদি অডিয়েন্স হিসেবে এখানে রাখা যেত।’

এ ছাড়া মৈত্রী ডিবেটিং ক্লাবের মডারেটর রিফাত আরা বেগম, ক্লাবটির সাবেক সভাপতি সাদেকা লিঠা, বর্তমান সভাপতি খাদিজা-তুল-কুবরা, ইসরাত জাহান, জিএস তানিয়া আক্তার, বঙ্গমাতা হল ডিবেটিং ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ইসরাত জাহান, বঙ্গবন্ধু হল ডিবেটিং ক্লাবের জিএস হাসান তারেক খান, শহীদুল্লাহ্ হল ডিবেটিং ক্লাবের জিএস মোমিনুল ইসলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পার্সিয়ান ডিবেটিং ক্লাবের আহ্বায়ক নঈম রেজা এ আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন