আপনিও কি ‘পপকর্ন ব্রেন’-এ ভুগছেন
সত্যিই কি কারও মস্তিষ্ক পপকর্নের মতো হয়? এটি কি কোনো রোগ? এ সম্পর্কে জানালেন শিশু-কিশোর ও পারিবারিক মনোরোগবিদ্যার সহকারী অধ্যাপক এবং যুক্তরাজ্যের সিনিয়র ক্লিনিক্যাল ফেলো ডা. টুম্পা ইন্দ্রানী ঘোষ। তাঁর সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন রাফিয়া আলম।
‘পপকর্ন ব্রেন’ মস্তিষ্কের কোনো রোগ নয়। বরং এটি বিশেষ এক মানসিক অবস্থা, যেখানে আমাদের মস্তিষ্ক খুব দ্রুত এক ভাবনা থেকে আরেক ভাবনায় চলে যায়। পপকর্ন তৈরির সময় যেমন একটার পর একটা দানা ‘পপ’ হতে থাকে, অর্থাৎ হুট করে উঠে আসতে থাকে, তেমনভাবেই ভাবনাগুলো আসতে থাকে মনে।
মনের এ অবস্থাকে বোঝাতেই ‘পপকর্ন ব্রেন’ শব্দযুগল ব্যবহার করা হয়। এ অবস্থায় মানুষ একধরনের অস্থিরতার মধ্যে থাকে। বারবার মুঠোফোনের নোটিফিকেশন দেখার একটা তীব্র আকাঙ্ক্ষা কাজ করতে পারে। এমনকি কিছুটা সময় শান্ত হয়ে বসতে হলেও চাপ বোধ করতে পারে।
আরও কিছু বৈশিষ্ট্য
পপকর্ন ব্রেন থাকলে মানুষ সহজেই বিরক্ত হয়ে পড়ে। সব সময় ভালো থাকার জন্য কোনো না কোনো উদ্দীপনা প্রয়োজন হয় তাঁর। হয়তো একটানা নানা রকম রিল দেখতে ভালো লাগছে, একটানা গেমিংয়ের উত্তেজনা ভালো লাগছে, কিন্তু একটানা বসে টেলিভিশন দেখতেও তাঁর ভালো না-ই লাগতে পারে। টেলিভিশনের সামনে বসলেও চোখ থাকতে পারে মুঠোফোনে।
যে সমস্যা হয়
পপকর্ন ব্রেন থাকলে মনোযোগ দিয়ে কোনো কাজ করতে অসুবিধায় পড়তে পারেন আপনি। বই পড়া, গুছিয়ে কোনো কাজ করা, এমনকি লম্বা সময় আলাপচারিতা চালিয়ে যাওয়া সমস্যার ব্যাপার হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বারবার মুঠোফোনের নোটিফিকেশন দেখার জন্য অস্থিরতায় ভুগতে পারেন। তাতে সামনের মানুষটাও বিরক্ত হবেন স্বাভাবিকভাবেই। পপকর্ন ব্রেন থাকলে সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তাই সমস্যায় পড়তে পারেন যে কেউ।
প্রশান্তির পথে ফিরতে
এই মানসিক পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসা অসম্ভব নয়। এ যুগে প্রশান্তিদায়ক জীবনের চর্চা করা যদিও খুব সহজ নয়। তবে ছোট ছোট পরিবর্তনের মাধ্যমে চেষ্টা করা যেতেই পারে, রোজ অন্তত ৩-৫ মিনিট কিছু না করে বসে থাকার চর্চা করা যেতে পারে। এমনকি গান শোনার মতো উদ্দীপনাও যেন না থাকে সেই সময়। ধীরে ধীরে সময়টা আরেকটু বাড়ানো যেতে পারে।
কাজ করার সময়ও এ ধরনের উদ্দীপনা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করা যেতে পারে।
এমন কাজের অভ্যাস গড়ে তোলা যেতে পারে, যাতে উদ্দীপনার মাত্রা কম, কিন্তু ভালো লাগার অনুভূতি ঠিকই কাজ করবে। যেমন রোজ অন্তত ১০ মিনিট বই পড়ার চর্চা করা যেতে পারে। ধীরে ধীরে সময়টা বাড়ানো সম্ভব।
ডিজিটাল ডিভাইসও এমনভাবে ব্যবহার করতে হবে, যাতে লম্বা সময় মনোযোগ দিতে হয়। এই চর্চাও কাজে দেবে। আদতে হুট করে সব ডিজিটাল ডিভাইস বাদ দেওয়া বাস্তবসম্মত সমাধান নয়। মুঠোফোনে ‘ডার্ক মোড’ ব্যবহার করা যেতে পারে।
মুঠোফোনের যেসব অ্যাপলিকেশন থেকে বারবার নোটিফিকেশন আসতে থাকে, সেসব হোম স্ক্রিনে না রাখাই ভালো, কিংবা নোটিফিকেশন বন্ধ করে রাখা যেতে পারে।
মনোযোগ বাড়াতে পোমোদোরো পদ্ধতি কাজে লাগানো যেতে পারে। পোমোদোরো অ্যাপ্লিকেশনও ব্যবহার করা যায়।