একক ভর্তি পরীক্ষার যত চ্যালেঞ্জ

গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষায় ভোগান্তি কমবে বলে ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু কিছু কিছু সমস্যা রয়েই গেছে
ছবি: প্রথম আলো

দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ভর্তি পরীক্ষাকে একটি একক কেন্দ্রীয় পরীক্ষাপদ্ধতির অধীন আনার উদ্যোগ নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। বলা হচ্ছে, এ উদ্দেশ্যে গঠন করা হবে ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি (এনটিএ)। কর্তৃপক্ষ যে শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাঘবের উপায় খুঁজছে, বিষয়টি নিশ্চয়ই ইতিবাচক। তবে এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কী কী চ্যালেঞ্জ সামনে আছে? গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা থেকেই–বা আমরা কী পেলাম। এসব নিয়ে খানিকটা আলোচনা করা যাক।

গুচ্ছ পদ্ধতির ত্রুটি

মেডিকেল, কৃষি ও প্রকৌশল (কুয়েট, চুয়েট ও রুয়েট)—তিনটি সমন্বিত পরীক্ষায় এখন পর্যন্ত ভালো ফল পাওয়া গেছে। ধরন ও পাঠ্যক্রম এক বলেই হয়তো শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমে গেছে অনেকখানি। কিন্তু ২২টি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাকে যে গুচ্ছভুক্ত করা হলো, তা নিয়ে রয়ে গেছে বিস্তর অভিযোগ।

মেডিকেল, কৃষি ও প্রকৌশল (কুয়েট, চুয়েট ও রুয়েট)—তিনটি সমন্বিত পরীক্ষায় এখন পর্যন্ত ভালো ফল পাওয়া গেছে
ছবি: প্রথম আলো

এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হলো। তাঁদের একজন মুনেম শাহরিয়ার। পড়ছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের প্রথম বর্ষে। জানালেন, ভর্তি পরীক্ষায় টেকার পাঁচ-ছয় মাস পর তাঁদের ক্লাস শুরু হয়েছে। বারবার অপেক্ষমাণ তালিকা প্রকাশ করে ভর্তির আহ্বান জানিয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। একই রকম অভিজ্ঞতা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের নুসরাত জাহানের। তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্লাস শুরু হতে হতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এক সেমিস্টার শেষ হয়ে গেছে।’

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন

বলা হয়েছিল, একক পরীক্ষা হলে শিক্ষার্থীদের একাধিক ফরম তোলা বাবদ অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হবে না। ভর্তির জন্যও ভিন্ন ভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দৌড়াতে হবে না। কিন্তু দেখা গেছে, প্রথমে ভর্তি পরীক্ষার আবেদন করতে খরচ হয়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা। যেহেতু মেডিকেল কলেজের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সেই অর্থে কোনো ক্রম নেই, বিষয়ভিত্তিক নানা দোটানা আছে, তাই অনেককেই ছয় থেকে সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে হয়েছে। প্রতিটির জন্য আবার আলাদা করে ৫০০ টাকা ফি দিতে হয়েছে। কেউ এক জায়গায় ভর্তি হওয়ার পর গুচ্ছভুক্ত অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পছন্দের বিষয়ে সুযোগ পেয়ে সেখানে চলে গেছেন। তাই ভর্তি, ভর্তি বাতিলের জরিমানা, আবার ভর্তি—সব মিলিয়ে খরচ অনেক।

গুচ্ছ পদ্ধতির ত্রুটিগুলো ঠিক কী ছিল, এটি কেন কার্যকর হলো না—এসব পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ না করেই যদি নতুন আরেকটা পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়, তাহলে এর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন থাকবে, মনে করেন ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টল ল স্কুলের পিএইচডি গবেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অর্পিতা শামস মিজান। তিনি বলেন, ‘স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন করার এই প্রক্রিয়া কীভাবে কাজ করবে, সেটা এখনো স্পষ্ট নয়। কাজেই দ্রুত কোনো সিদ্ধান্তে আসার আগে পদ্ধতিগত গবেষণা প্রয়োজন।’

ভিনদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির  রীতি

ভারতে মেডিকেল কলেজ ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয়ভাবে একটি নির্বাচনী পরীক্ষা হয়। কিন্তু সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতি আছে। কিছু কিছু রাজ্যে একই ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এক হয়ে গুচ্ছ পরীক্ষা নেয়। যুক্তরাষ্ট্রে আবার ভর্তি পরীক্ষার চল নেই। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক সিয়াম শহীদ নূরের সঙ্গে কথা হলো। তিনি জানালেন, পশ্চিমা দুনিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর অভিজ্ঞতাকে (সহশিক্ষামূলক কার্যক্রম বা নেতৃত্বগুণ) আলাদা আলাদা করে মূল্যায়ন করা হয়। পাশাপাশি স্যাট স্কোরকেও গুরুত্ব দেয় অনেক বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া নিবন্ধ লেখা, কভার লেটার লেখা—এমন নানা নিয়মকানুন থাকে।

আমাদের দেশের বাস্তবতায় প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করার মতো লোকবল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আছে বলে মনে হয় না। ‘স্যাট’-এর মতো কেন্দ্রীয় কোনো পরীক্ষাকে ভর্তি পরীক্ষার জন্য মুখ্য হিসেবে ধরে নেওয়া যায় কি না, তা নিয়েও গবেষণার প্রয়োজন আছে।

সব মিলিয়ে এনটিএর মাধ্যমে একক ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হলে ইতিবাচক দিকগুলোর পাশাপাশি চ্যালেঞ্জগুলো নিয়েও আগে থেকেই ভাবা প্রয়োজন। স্থায়িত্বের কথা চিন্তা না করে বছর বছর নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে আর সেই পদ্ধতির গিনিপিগ হবেন শিক্ষার্থীরা, এমনটা যেন না হয়।