বাসের সুপারভাইজার হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা যেভাবে বিসিএসের ভাইভাতেও কাজে লাগল

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের স্নাতক আব্দুল আউয়াল
ছবি: সংগৃহীত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের স্নাতক আব্দুল আউয়ালের একটি ফেসবুক পোস্ট হয়তো আপনারও চোখে পড়েছে। স্রেফ শখ পূরণের জন্যই কয়েক মাসের জন্য দূরপাল্লার বাসের সুপারভাইজার হয়েছিলেন তিনি। এই অভিজ্ঞতা কীভাবে তাঁকে বিসিএসের ভাইভাতেও সাহায্য করেছে, সে কথাই লিখেছেন ফেসবুক পোস্টে। বিস্তারিত জানতে আমরা আব্দুল আউয়ালের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ থেকেই বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন তিনি। পাশাপাশি টিউশনিও করতেন। আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘টিউশনি করতাম বলে গণিত ও বিজ্ঞানের চর্চাটা বেশ ভালো হচ্ছিল। ফলে বিসিএসের প্রাথমিক প্রস্তুতিটা প্রথম বর্ষ থেকেই শুরু হয়ে যায়। স্নাতকের পরপরই যখন বিসিএসের প্রিলিতে পাস করি, তখন স্নাতকোত্তরে ভর্তি না হয়ে পুরোদমে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে থাকি। সে সময় আমার হাতে প্রায় ১০টি টিউশনি ছিল, সব ছেড়ে দিই। এমনকি ক্যাম্পাসের সামনে বন্ধুদের সঙ্গে বাসা নিয়ে থাকতাম, সেই বাসাও ছেড়ে দিই। ফার্মগেটে আলাদা বাসা নিয়ে পুরোদমে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করি।’

আরও পড়ুন

প্রস্তুতিতে কোনো ছাড় দেননি বলেই হয়তো লিখিত পরীক্ষায়ও টিকে যান আউয়াল। ভাইভার আগপর্যন্ত তখন বেশ খানিকটা অবসর। এ সময়েই তাঁর মনে ছেলেবেলার ইচ্ছাটা নতুন করে জেগে ওঠে। কী সেই ইচ্ছা? ‘ছোটবেলা থেকে আমার একটা অদ্ভুত কাজের ইচ্ছা ছিল। আমরা একসময় কক্সবাজারে থাকতাম। সেখান থেকে টাঙ্গাইলে যখন নিজের বাড়িতে যেতাম, পুরো যাত্রাপথে বাসের স্টাফদের কাজ খুব আগ্রহ নিয়ে দেখতাম। সেই সময় থেকেই একটা সুপ্ত বাসনা ছিল—কখনো সুযোগ পেলে বাসের ড্রাইভার বা সুপারভাইজার হব। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর এই স্বপ্ন পূরণ করা আর সম্ভব ছিল না। ভাবলাম, যদি বিসিএস ক্যাডার হতে পারি, তাহলে তো ছোটবেলার ইচ্ছাটাকে পূর্ণতা দেওয়া আর কখনোই হবে না। তাই ভাইভার আগে একটি বাসে সুপারভাইজার হিসেবে যোগ দিই।’

কাজে যোগদানের পরপরই আব্দুল আউয়াল বুঝতে পেরেছিলেন, দেখে যতটা সহজ মনে হয়, দায়িত্বটা আদতে তত সহজ নয়। প্রথমে দুই মাস প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে। কীভাবে মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হয়, যাত্রীদের সেবা দিতে হয়—সবকিছুই শিখেছেন তিনি। আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘কথা বলার প্রশিক্ষণটাই মূলত আমার বিসিএস ভাইভাতে খুব কাজে এসেছে। যেহেতু অত্যাধুনিক বাসগুলোয় ডিউটি করতাম, যাত্রীদের বেশির ভাগই ছিলেন উচ্চবিত্ত। উচ্চ পদমর্যাদার মানুষের মনোভাব সম্পর্কে আমার একটা ধারণা হয়েছিল। এই চাকরির সুবাদে দেশের নানা প্রান্তে ঘোরা হয়েছে। এ অভিজ্ঞতাও কাজে এসেছে।’

ভাইভার বাধাও সাফল্যের সঙ্গে অতিক্রম করে ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডার পেয়েছেন আব্দুল আউয়াল। এই তরুণ মনে করেন, লক্ষ্যের দিকে ছুটতে গিয়ে নিজের ছোট-বড় শখগুলো ভুলে গেলে চলবে না। করোনার আঘাতের পরপর আউয়াল যেমন বাইক নিয়ে দেশের প্রায় ২৫টি জেলা ঘুরে বেড়িয়েছেন। বিসিএসে টেকার একাগ্রতা তো ছিলই, ছোট ছোট শখ বা অভিজ্ঞতাকেও সমান গুরুত্ব দিতে চেষ্টা করেছেন তিনি। আউয়াল বলেন, ‘পরিবহন সেবায় যুক্ত হয়ে এই খাতের অনেক মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগ হয়েছে। আমি দেখেছি, তাঁরা কত কষ্ট করেন। দীর্ঘ সময় জেগে থাকতে হয়। খাওয়াদাওয়ার সমস্যা, টয়লেটের সমস্যা, কত কিছু যে উপেক্ষা করতে হয়! আমি আমার জায়গা থেকে সরকারের উচ্চমহলে তাঁদের সমস্যাগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করব। এ ছাড়া আরেকটা স্বপ্ন আছে, কারাতেতে ব্ল্যাক বেল্ট নিয়ে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নেব। সে জন্য সামনে পুলিশ ক্যাডারেও চেষ্টা করব।’