দিনে অফিসের কাজ, রাতে পড়াশোনা করে যেভাবে তৈরি হয়েছি

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজ থেকে পড়ালেখা শেষে করপোরেট দুনিয়ায় চাকরি থেকে শুরু করে ফ্রিল্যান্স কাজেও সফল হচ্ছেন অনেক তরুণ। পড়ুন এমনই একজন—ওমর শরীফ এর গল্প। তিনি স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের বিভাগীয় বিক্রয় ব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কীভাবে নিজেকে তৈরি করেছেন ওমর?

ওমর শরীফ
ছবি: সংগৃহীত

আমার বাবা ছিলেন স্কুলশিক্ষক। শিক্ষক বাবার সন্তান বলেই সবার ধারণা ছিল, আমিও ভালো শিক্ষার্থী। কুমিল্লার আড্ডা উমেদিয়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান বিভাগে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। কিন্তু ভালো ফলাফল না হওয়ার কারণে খুব মন খারাপ হয়। ভবিষ্যৎ অন্ধকার ভেবে মাথায় বিদেশে যাওয়ার পোকাও ঢোকে। কিন্তু সময় ও পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় মানবিক বিভাগে একই জেলার আড্ডা ডিগ্রি কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হই।

আরও পড়ুন

মা-বাবা, শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় মানবিক থেকে ভালো ফল নিয়ে পাস করি। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হই। সেশনজট আর পড়াশোনার ধীরগতির জন্য ভীষণ হতাশার মধ্যে ছিলাম। সব সময় স্বাধীনভাবে কাজ করার মানসিকতা থাকায় সরকারি চাকরির প্রতি তেমন আগ্রহ ছিল না কখনো। অন্যদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের বেসরকারি চাকরি পাওয়ার সুযোগ অনেক কম বলে শুনেছি।

সব সময় নতুন কিছু করা এবং চ্যালেঞ্জ নেওয়ার মানসিকতার কারণে বিক্রয় পেশায় ক্যারিয়ার গড়ার সিদ্ধান্ত নিই। নিজেকে তৈরি করা শুরু করি। বাংলা মাধ্যমে পড়েছি। ইংরেজিতে কথা বলা নিয়ে জড়তা ছিল অনেক। রীতিমতো পরিশ্রম করে ইংরেজি ভাষা শেখা শুরু করি। প্রতিদিন চর্চা করতে থাকি। মাঝেমধ্যে হতাশা পেয়ে বসত, মনে হতো বিদেশ চলে যাই।

সেশনজটের কারণে চার বছরের কোর্স ছয় বছরে শেষ হয়। এরই মধ্যে একটি দেশীয় প্রতিষ্ঠানে বিক্রয় নির্বাহী হিসেবে যোগ দিই। দিনে অফিস, রাতে পড়াশোনা। অনেক বিষয়ে জানার দুর্বলতা ছিল। সেই দুর্বলতা কাটাতে চেষ্টা করি এমবিএতে ভর্তি হয়ে। প্রথম দিকে ভয় থাকলেও পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে মার্কেটিং বিভাগে এমবিএর ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। দিনে অফিসের কাজ, আর রাতে পড়াশোনা করেও ভালো রেজাল্টসহ এমবিএ শেষ করি।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন যাঁরা, সেই তরুণদের প্রতি আমার প্রথম পরামর্শ—ইংরেজি শিখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়ার সঙ্গে হয়তো ভাগ্য জড়িত, কিন্তু নিজেকে তৈরি করতে নিজের দুর্বলতা কাটাতে হবে। ইংরেজি ভাষা এখন করপোরেট ক্ষেত্রে ভীষণ জরুরি। আমি এখন দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের বিভাগীয় বিক্রয় ব্যবস্থাপক (বগুড়া ডিভিশন) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। যতই ব্যস্ততা থাকুক, প্রতিনিয়ত শেখার চেষ্টা করি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলে হয়তো আরও ভালো করতে পারতাম—সেই আক্ষেপ পাশে রেখেই নিজেকে প্রস্তুত করে যাচ্ছি।