আগুন থেকে বাঁচতে প্রতিষ্ঠানে যেসব সচেতনতা দরকার

মার্কেটে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
ছবি: সৌরভ দাশ

সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু বিপণিবিতানে অগ্নিদুর্ঘটনার শিকার হয়ে সব হারানো মানুষের কান্না আমাদের ছুঁয়ে গেছে। জনবল এবং অগ্নিনির্বাপণসামগ্রী নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েও ফায়ার সার্ভিসের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে বেগ পেতে হয়েছে।

সঠিক নিয়মে অগ্নিনির্বাপণ করা হচ্ছে কি না, এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। আগুন নিয়ন্ত্রণের প্রচেষ্টায় পানির তোড়ে দোকানের সামনে প্লাবনের সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু ধিকি ধিকি জ্বলেছে দোকানের ভেতরের মালামাল। এমন দৃশ্য মর্মান্তিক বটে। অথচ বিপণিবিতানের নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকলে ফায়ার সার্ভিসের সামগ্রিক প্রচেষ্টা সহজেই সফল হতে পারত। দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও এতটা হতো না। এই যেমন স্বয়ংক্রিয় যান্ত্রিক ব্যবস্থা থাকলে আগুন লাগামাত্র অ্যালার্ম বেজে উঠত, তাতে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করা যেত আগে। তা ছাড়া দোকানের ভেতর স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি ছিটানোর যান্ত্রিক ব্যবস্থা (স্প্রিংকলার) থাকলে ক্ষতির হার অনেক কম হতো। দুর্ঘটনা ঘটতে পারে যেকোনো সময়ই। তাই বিপণিবিতান কিংবা হাসপাতালের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাতে এমন কিছু ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দিলেন বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের তালিকাভুক্ত অগ্নিনিরাপত্তা পরামর্শক প্রকৌশলী মো. হাসমতুজ্জামান।

দ্রুত শনাক্তকরণ

বহুতল ভবনে আগুন নেভানোর প্রয়োজনীয় উপকরণ থাকা জরুরি
ছবি: পেক্সেলস

আগুন বা ধোঁয়া শনাক্তকরণের স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা থাকলে ঘটনাস্থলে সেই মুহূর্তে কেউ থাকুক আর না থাকুক, অ্যালার্ম বা সতর্কবার্তা বেজে উঠবে। দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে। কখন আগুন লাগবে, তা কেউ জানে না। সতর্ক থাকলে বেঁচে যাবে মজুতকৃত মালামাল। তাই দরকার নিজস্ব জলাধার এবং স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা।

সাম্প্রতিক সময়ের অগ্নিদুর্ঘটনায় দুর্ঘটনাস্থলের কাছাকাছি পানির উৎস না থাকাটা বিশাল ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিটি স্থাপনারই নিজস্ব জলাধার থাকা বাধ্যতামূলক। আগুন লেগে গেলে স্বল্প সময়ে তা নিয়ন্ত্রণে আনতে এর বিকল্প নেই। এ ছাড়া থাকতে হবে স্বয়ংক্রিয় উপায়ে পানি ছড়ানোর ব্যবস্থা। এ রকম ব্যবস্থা থাকলে মালামালের গুদামের মতো সরু জায়গাতেও পানি পৌঁছনো সহজ হয়। ফায়ার এক্সটিঙ্গুইশার রাখতে হবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে। প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি সদস্যকে শিখিয়ে দিতে হবে সেসবের ব্যবহার।

সহযোগিতা নেওয়ার জন্য

প্রতিষ্ঠানের গেটের বাইরে ফায়ার ব্রিগেড কানেকশন থাকতে হবে, তাহলে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আসার পর তাঁদের সহযোগিতা নেওয়া সহজ হয়। ফায়ার পাম্প, পিলার হাইড্র্যান্ট এবং হোস কেবিনেটের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া যায় এই সংযোগকে। তাই এই ব্যবস্থাও রাখা উচিত।

হঠাৎ আগুন লেগে গেলেও নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা বিপর্যয় ঠেকাতে পারে
ছবি: পেক্সেলস

হাসপাতালে অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। অল্প কিছু হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা আছে। অধিকাংশই অক্সিজেন সিলিন্ডারের ওপর নির্ভরশীল। অক্সিজেন দাহ্য পদার্থ। হাসপাতালে কোনোক্রমে আগুন লাগলে তা ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আগুন লাগলেই অসুস্থ, চলন–শক্তিহীন মানুষ দৌড়ে বাইরে যেতে পারবেন না। অসুস্থ স্বজনকে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ফেলে অন্যরাও পালিয়ে আসতে পারবেন না। তাই অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও। হঠাৎ আগুন লেগে গেলেও নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা বিশাল মানবিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।

‘সাধারণ’ কয়েকটি বিষয়

আগুন থেকে সাবধান
ছবি: পেক্সেলস
  • হাউসকিপিং, আগুনের উৎস এবং মানুষের প্রতি সার্বক্ষণিক তদারকির ব্যবস্থা থাকা আবশ্যক।

  • প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে ভালো মানের বৈদ্যুতিক সরঞ্জমাদি ব্যবহার করা উচিত।

  • কোথাও কোথাও রান্নার জন্য গ্যাস সিলিন্ডার কিংবা গ্যাস লাইনের ব্যবস্থা থাকে। এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে সঠিক নিয়মে। চুলা জ্বালানোর আগে দরজা-জানালা খুলে দিয়ে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে অবশ্যই।

  • ম্যাচের কাঠি, সিগারেট প্রভৃতি ফেলতে হবে সতর্কতার সঙ্গে।

  • বহুতল ভবনে আগুন লাগলে হুড়াহুড়ি করে নামতে গিয়ে বিপর্যয়ের আশঙ্কা থাকে। তাই ফায়ার এক্সিট এবং নিরাপত্তা লবি থাকতে হবে এসব ভবনে।

  • আগুন লেগে গেলে কী করতে হবে, প্রতিষ্ঠানের সবাইকে নিয়ে সেটির মহড়া দিতে হবে নিয়মিত।