ডিগ্রি, না দক্ষতা? বর্তমান চাকরির বাজারে কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ?
অনেকে বলেন, বদলে যাওয়া পৃথিবীতে ডিগ্রির গুরুত্ব দিন দিন কমছে। দক্ষতাটাই এখন আসল। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তো ডিগ্রিকেই দক্ষতার প্রমাণ হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। আবার ‘ভালো’ ডিগ্রি থাকা সত্ত্বেও দক্ষতার অভাবে পিছিয়ে পড়ছেন, এমন উদাহরণও তো কম না। তাহলে ডিগ্রি নাকি দক্ষতা—কোনটা বেশি জরুরি? এ প্রশ্নটাই আমরা করেছিলাম বিভিন্ন পেশাজীবীদের কাছে।
ডিগ্রি বা দক্ষতার চেয়েও যা বেশি গুরুত্বপূর্ণ
ওমর শেহাব, স্টাফ রিসার্চ সায়েন্টিস্ট (কোয়ান্টাম কম্পিউটিং), আইবিএম
ডিগ্রি না দক্ষতা? প্রশ্নের উত্তরটা নির্ভর করে মূলত আপনি কী ধরনের কাজ করতে চান, তার ওপর। সাধারণত বাংলাদেশের বেশির ভাগ চাকরিতে ডিগ্রি থাকতে হবে—এ কথা উল্লেখ করাই থাকে। এসব ক্ষেত্রে ডিগ্রি ছাড়া তো উপায় নেই। তবে সেটা কেবল চাকরিতে ঢোকার জন্য। একবার যখন ঢুকবেন, কেউ তো আর কিসে ডিগ্রি আছে দেখবে না। সবাই দেখবে কাজটি পারছেন কি না। কাজেই বেশির ভাগ চাকরিতে টিকে থাকার জন্য দক্ষতা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। একটা ব্যাপার মনে রাখতে হবে, ৩০ বা ৪০ বছরের একটি ক্যারিয়ারের পুরোটা সময়েই মানুষ একই কাজ করে না। কাজেই দক্ষতা অর্জন একটা চলমান প্রক্রিয়া।
তবে ডিগ্রি আর দক্ষতার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো চাকরিদাতার চাহিদা পূরণ করা। অর্থাৎ ঠিক এ মুহূর্তে চাকরিদাতা ঠিক কী চাইছেন আর আমি সেই চাহিদা পূরণ করতে পারছি কি না। প্রতিষ্ঠানের কাজ, পণ্য বা সেবা সম্পর্কে এতটা জ্ঞান থাকতে হবে, যেন চাকরিদাতার সঙ্গে কথা বলার সময়ই তাঁর মনে হয়—এই মানুষটাকে যদি আমি না নিই, আমার লাখ টাকার আয় হাতছাড়া হয়ে যাবে। আমি যখন লোকজনের ইন্টারভিউ নিই, দেখি অনেকেই আমাদের সর্বশেষ কয়েকটি গবেষণাপত্র খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ে এসেছেন। তাঁরাই বলেন, কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা আরও ভালো করতে পারতাম। স্বাভাবিকভাবেই এদের প্রতি আমাদের আগ্রহ বেশি থাকে। ডিগ্রি বা দক্ষতা থাকা ভালো। কিন্তু এটি যে কেউ অর্জন করতে পারেন। বেশির ভাগ প্রার্থী যেটি করেন না, তা হলো চাকরিদাতার মনস্তত্ত্ব বোঝা। প্রতিষ্ঠানের কৌশলগত দুর্বলতা নিরসনে আপনি কী ভূমিকা রাখতে পারবেন, সেটা নিয়ে কথা বলুন।
ডিগ্রি না থাকলে শুরু করা কঠিন
মো. আব্দুল কাইয়ুম, হেড অব কমিউনিকেশনস, ইউএনডিপি বাংলাদেশ
শুধু ডিগ্রি থাকলে এখনকার সময়ে সামনে এগোনো যায় না। আবার কোনো ডিগ্রি না থাকলে বাংলাদেশের মতো দেশে শুরু করাটাই কঠিন। তাই ক্লাসরুমকে একদম অগ্রাহ্য যেমন করা যাবে না, তেমনি শুধু ক্লাসরুমে থাকলেও হবে না। ক্লাসরুমে বিভিন্ন হার্ড স্কিল, মানে কারিগরি দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি ক্লাসরুমের বাইরে সফট স্কিল, অর্থাৎ চরিত্রগত বৈশিষ্ট্য এবং মানুষের সঙ্গে মিশতে পারার দক্ষতাও অর্জন করতে হবে। এসব সফট স্কিলের মধ্যে অন্যতম হলো যোগাযোগদক্ষতা। স্পষ্টভাবে, কার্যকরভাবে যোগাযোগ করার সক্ষমতা যেকোনো কর্মক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ। যোগাযোগ মানে কিন্তু শুধু কথা বলতে পারা নয়। মন দিয়ে শোনা এবং পরিষ্কারভাবে মনের ভাব প্রকাশ করাও যোগাযোগ। লেখার মাধ্যমেও আমরা আমাদের কর্মক্ষেত্রে যোগাযোগ করি। অল্প কথায় যথাযথভাবে লিখতে পারার দক্ষতাও জরুরি। দলের সঙ্গে কাজ করার সক্ষমতা, সময় ব্যবস্থাপনা, উপস্থিত বুদ্ধি, সমস্যা সমাধান, নেতৃত্ব, আত্মবিশ্বাস, ইতিবাচক মনোভাব—এসবও জরুরি। যখনই কেউ ‘টেকনিক্যাল স্কিল’ বা ‘হার্ড স্কিল’–এর পাশাপাশি সফট স্কিলেও ভালো হবে, পেশাজীবনে অন্যদের চেয়ে তাঁর উন্নতি হবে দ্রুত।
শুধু দক্ষতার জোরে আয় হাজার ডলার
ফাহাদ বিন হুসনে আলী, ড্রপআউট শিক্ষার্থী, খুলনা পলিটেকনিক
আমি পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়ায় থাকি। ছোট এই মফস্সল শহর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানে কনটেন্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজ করি। আমি শুধু নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলতে পারি। ২০১৫ সালে খুলনা পলিটেকনিকে কম্পিউটার প্রকৌশলে ভর্তি হই। কিন্তু ক্লাসে যা পড়ানো হতো, তার চেয়ে বেশি আমি অনলাইন থেকেই শিখে ফেলেছিলাম। যখন পলিটেকনিকে পড়তাম, তখনই অনলাইনের মাধ্যমে নেদারল্যান্ডসের একটি প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করি। নেদারল্যান্ডসের বস যিনি ছিলেন, তিনি গুগল-মাইক্রোসফটের সাবেক কর্মী। তাঁরও কোনো একাডেমিক সনদ ছিল না। অন্তত যদি তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কথা বলি, বিদেশে অনেক চাকরির ক্ষেত্রেই আসলে সনদের কথা আলাপ-আলোচনায় আসে না। দক্ষতা গুরুত্ব পায়। আমার ইংরেজির চর্চাটাও কাজে লেগেছিল। নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই ইংরেজি পত্রিকা দেখে ভালোমতো চর্চা শুরু করি। পরে ইউটিউব ও অনলাইনের নানা মাধ্যম থেকে ইংরেজিতে যোগাযোগের কৌশল আয়ত্ত করি, যা বিদেশি প্রতিষ্ঠানে কাজ পেতে সহায়তা করেছে। এখন মাসে আড়াই থেকে তিন হাজার ডলার আয় করি। এখন পর্যন্ত বিদেশি যত প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি, কেউ কখনোই আমার কাছে সনদ চায়নি। আমি কী পাস, তা-ও কখনো জিজ্ঞাসা করেনি। অনলাইনে এত রিসোর্স আছে, যে কেউ চাইলে ক্লাসের পড়াশোনার বাইরে অনেক কিছু শিখতে পারে। আমার মনে হয়, সনদ নিশ্চয়ই কাজে আসে, কিন্তু দিন শেষে দক্ষতা এখন বড় শক্তি। ইলন মাস্ক যেমন সম্প্রতি তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘এক্স’-এ কোডার নিয়োগ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। তাঁরা কিন্তু কোনো সনদ চাননি। শুধু দক্ষতার প্রমাণ চেয়েছেন। প্রযুক্তিসংশ্লিষ্ট বেশির ভাগ কাজে আসলে সনদের চেয়ে দক্ষতাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
ডিগ্রিকে অবমূল্যায়ন করা যাবে না
আব্দুল্লাহ ইসহাক খান, মেক্সট স্কলার, হিতোৎসুবাশি বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান; উপপরিচালক, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ
ডিগ্রি ও দক্ষতা—দুটিই ক্যারিয়ারের জন্য অপরিহার্য। তবে বাস্তব জীবনে দক্ষতার প্রভাব বেশি। ডিগ্রি আপনাকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়, যা আপনাকে কোনো একটি জায়গায় প্রবেশের সুযোগ করে দেবে। কিন্তু সেই জায়গায় টিকে থাকা এবং সফল হওয়ার জন্য যা সবচেয়ে বেশি দরকার, তা হলো দক্ষতা। একটা উদাহরণ দিই—একজন ইঞ্জিনিয়ার হয়তো ডিগ্রির মাধ্যমে তাঁর পেশাগত যোগ্যতা অর্জন করেছেন। কিন্তু বাস্তব কাজের ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তি শেখা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা এবং কার্যকর যোগাযোগের মতো বিষয়গুলোই তাঁকে সফল করবে। একইভাবে একজন ম্যানেজারের জন্য কেবল ম্যানেজমেন্ট ডিগ্রি যথেষ্ট নয়, নেতৃত্ব দেওয়া, সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং দল পরিচালনার দক্ষতাই তার প্রকৃত মান নির্ধারণ করে। তবে ডিগ্রিকে একেবারে অবমূল্যায়ন করা যাবে না। এটি একটি ভিত্তি তৈরি করে এবং নতুন শেখার পথ উন্মুক্ত করে। কিন্তু দক্ষতা ছাড়া সেই ভিত্তি স্থায়ী হয় না। তাই সফল ক্যারিয়ারের জন্য ডিগ্রি ও দক্ষতার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
দুটির সমন্বয়টাই আদর্শ
মাইনুল ইসলাম, এভিপি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসি, ট্রেজারি ডিভিশন
চাকরির ক্ষেত্রে সনদ না দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ—নির্ভর করছে কোন ধরনের চাকরি আপনি করতে চান তার ওপর। অনেক চাকরির জন্য নির্দিষ্ট কিছু সনদ থাকা আবশ্যক। যেমন চিকিৎসক হতে হলে এমবিবিএস ডিগ্রি লাগে। ব্যাংকের প্রধান হিসাব কর্মকর্তা হতে হলে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট হতে হবে। সনদ আপনার দক্ষতার একটা নির্দিষ্ট মান নিশ্চিত করে। প্রচুর আবেদনের ভিড়ে নিয়োগকর্তারা প্রাথমিকভাবে সনদ দেখে প্রার্থী বাছাই করেন। শুধু সনদ থাকলেই হবে না, কাজে সেই জ্ঞান প্রয়োগ করতে দক্ষতা লাগবে। কর্মক্ষেত্রে নানা সমস্যা আসবে, দক্ষতা দিয়েই সেগুলো সমাধান করতে হবে। দক্ষ কর্মীরা দ্রুত ও ভালোভাবে কাজ করতে পারেন। শিক্ষাজীবনে সনদ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আর কর্মজীবনে দক্ষতা অপরিহার্য। আদর্শ পরিস্থিতি হলো দুটির সমন্বয়।
দক্ষতাভিত্তিক নিয়োগপ্রক্রিয়া এখন জনপ্রিয়
নূহা সাবান্তা মাওলা
প্রভাষক, স্কুল অব জেনারেল এডুকেশন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
আমি মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনায় দক্ষতাকে গুরুত্ব দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনে বা ভবিষ্যতের পেশায় সফল হতে সাহায্য করে। বাংলাদেশ ও বৈশ্বিক পটভূমিতে চাকরির বাজারের পরিবর্তন, প্রযুক্তির বিকাশ এবং প্রতিযোগিতার কারণে শুধু একাডেমিক জ্ঞান যথেষ্ট নয়, দক্ষতা অর্জন করাও জরুরি। বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষিত তরুণদের বেকারত্ব একটি বড় সমস্যা। অনেক শিক্ষার্থী ডিগ্রি অর্জন করলেও প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাবে চাকরি পায় না। চাকরিদাতারা এখন সফট স্কিল (সহানুভূতি, যোগাযোগদক্ষতা, দলগত কাজ ইত্যাদি) বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। শিল্পবিপ্লবের কারণে বাংলাদেশের কর্মসংস্থানের ধরন বদলে যাচ্ছে। বিশ্বব্যাপী কর্মসংস্থানে দক্ষতাভিত্তিক নিয়োগপ্রক্রিয়া এখন জনপ্রিয়। শিক্ষার্থীরা যদি অভিজ্ঞতামূলক শিক্ষা গ্রহণ করে, শিক্ষকেরা যদি সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী মানসিকতাকে আরও উৎসাহ দেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বাধীনতা যদি নিশ্চিত করা যায় এবং একাডেমিক প্রতিষ্ঠান ও নিয়োগকর্তাদের মধ্যে একটা বৃহত্তর সমন্বয় যদি তৈরি করা যায়—তাহলেই ডিগ্রি আরও মূল্য পাবে। শুধু সনদের জন্য দৌড়ানো যাবে না, দক্ষতা অর্জনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
দুটির লক্ষ্যই এক
রাইসুল কিবরিয়া, ই-অ্যাকাউন্ট ম্যানেজার, নাওস (বায়োডার্মা, ইনস্টিটিউট এসথেডার্ম, এটাপুর) জাপান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ থেকে এমবিএ শেষে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটি) এবং গোল্ডেন হারভেস্টে কাজ করেছি। পরে জাপানে চলে আসি। এখন ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছি। বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা থেকে আমি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পেয়েছি: ডিগ্রি ও দক্ষতা একসঙ্গে অর্জন করতে হবে, তবে এগুলোর গুরুত্ব দেশ, শিল্প এবং করপোরেট সংস্কৃতির ওপর নির্ভর করে বদলায়। ক্যারিয়ারের বিভিন্ন পর্যায়ে সাফল্যের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ডিগ্রি এবং দক্ষতার প্রয়োজন হয়। যেমন একজন সদ্য স্নাতক ভালো একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে চমৎকার একটি চাকরি পেতে পারেন, কিন্তু সেই চাকরিতে সফল হতে বা একটি দীর্ঘমেয়াদি সুনাম গড়ে তুলতে দক্ষতা উন্নয়ন ও ধারাবাহিক অনুশীলন অপরিহার্য। আদতে ডিগ্রি ও দক্ষতা দুটির লক্ষ্যই এক—ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নিজেকে এগিয়ে রাখা। ডিগ্রির আসল মূল্য কেবল তা অর্জনে নয়, বরং এর পাঠ্যক্রমকে বাস্তব জীবনে কার্যকরভাবে প্রয়োগ করতে পারায়। এই বাস্তবভিত্তিক, অভিজ্ঞতামূলক পদ্ধতিই প্রকৃতপক্ষে একজন ব্যক্তিকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে। একটা বিষয় হচ্ছে, করপোরেট দুনিয়ার বিস্তৃতি অনেক। এখানে আপনার ডিগ্রির পাশাপাশি দক্ষতাকে সমানভাবে সারা বিশ্বে মূল্যায়ন করা হয়।
ডিগ্রিকে দক্ষতায় রূপান্তর করতে হবে
আবু শোয়েব, মেশিন লার্নিং সায়েন্টিস্ট, সলভেনটাম, যুক্তরাষ্ট্র
ডিগ্রি ও দক্ষতা—দুটিই আসলে একে অন্যের পরিপূরক। আমরা যখন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি, তখন তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জন করি। পশ্চিমা বিভিন্ন দেশে পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে ইন্টার্নশিপ করতে হয়, যেন ক্লাসরুমের পড়াশোনাকে শিক্ষার্থীরা দক্ষতায় রূপান্তর করতে পারে। শুধু ডিগ্রি নিলেন, কিন্তু দক্ষতা অর্জন করলেন না বা দক্ষতার চর্চা করলেন না, তাহলে মেধা নষ্ট হবে। ডিগ্রিটা তখন আর কাজে লাগবে না। যাঁরা ডিগ্রি অর্জন করছেন, তাঁরা দ্রুত এই অর্জনকে দক্ষতায় রূপান্তর করতে চেষ্টা করুন।
পেশা বা গবেষণার ধরন বুঝে সনদকে অনেক গুরুত্ব দিয়ে মূল্যায়ন করা হয়
কামরুন নাহার, চিভেনিং স্কলার ও পিএইচডি গবেষক, ইউনিভার্সিটি অব এসেক্স, যুক্তরাজ্য
এখন একেক পেশার চাহিদা একেক রকম। সব পেশাতেই কাজ করার সুযোগ সবার জন্য তৈরি হচ্ছে। প্রকৌশল বিষয়ে পড়ে ব্যাংকে আসা যাচ্ছে। আবার চিকিৎসাবিজ্ঞানে পড়ে অনেকেই উন্নয়নকর্মী হচ্ছেন। ডিগ্রি বা সনদ আসলে আমাদের বিভিন্ন পেশায় প্রবেশের শুরুর জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। আবার ভবিষ্যতে নিজের কাজের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে দক্ষতার প্রয়োজন। দক্ষতা বিকাশের মাধ্যমে আপনার নেটওয়ার্ক ও যোগাযোগের পরিধি বিস্তৃত হবে। যে কারণে দুটি বিষয়কেই গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি। কিছু কিছু পেশা, যেমন আইন বা হিসাবরক্ষণের কাজের জন্য আপনার সনদ খুবই প্রয়োজন। প্রকল্প ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে অনেক আধুনিক পেশায় সনদকে বিশেষভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে এখন।
দক্ষ কর্মীদের বেতন অনেক
নাদিম চৌধুরী, পিএইচডি, এমআইটি; সহকারী অধ্যাপক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
এখন দেশের ক্যারিয়ার কিংবা বিদেশের কাজের বাজার বদলে যাচ্ছে। শুধু সনদনির্ভর বা ডিগ্রিনির্ভর পড়াশোনার চল নেই, হাতে–কলমে কাজের দক্ষতা কিংবা ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা আছে, এমন তরুণদের বিভিন্ন কাজে নিয়োগের ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। আমি সেমিকন্ডাক্টরশিল্প নিয়ে গবেষণা করি। ভারত ও চীন থেকে প্রতিবছর এই খাতে অনেক প্রকৌশলী যুক্ত হন, যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশল ডিগ্রিধারী। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষে চিপ ডিজাইন থেকে শুরু করে বিভিন্ন কারিগরি বিষয়ে হাতে–কলমে শেখার মাধ্যমে এসব দেশের স্নাতকধারী কর্মীরা যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টেল, এনভিডিয়াসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হচ্ছে। সেমিকন্ডাক্টরশিল্পে যত দক্ষতা অর্জন করা যায়, ততই জটিল কাজ করার সুযোগ থাকে। এসব খাতে দক্ষ কর্মীদের বেতনও অনেক। আমাদের দেশের শিক্ষার্থী, যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশল বা বিজ্ঞানে পড়ছেন, তাঁদের ব্যবহারিক কাজের সুযোগ কম বলে এসব খাতে যুক্ত হতে পারছে না। মোটামুটি ধরনের দক্ষতা অর্জন করে এসব খাতে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ বাড়ছে। দক্ষতা অর্জনকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চার বছর সময়টা কাজে লাগাতে হবে। একাডেমিক জীবনে বিভিন্ন কোর্সের সঙ্গে আসলে বিভিন্ন দক্ষতা অর্জনের সুযোগ থাকে। আমাদের শিক্ষার্থীদের দুটির ভারসাম্য রাখা শিখতে হবে।