হেরে যাওয়া দলের সমর্থকদের পাশে আছে ‘টিস্যু পেপার বিতরণকারী কমিটি’

সারা দেশের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতেও লেগেছে বিশ্বকাপের হাওয়া। কেউ আবাসিক হল ছেয়ে ফেলেছেন নানা দেশের পতাকায়, কেউবা আয়োজন করছেন রম্য বিতর্ক। বিশ্বকাপ ঘিরে কোন ক্যাম্পাসে কী চলছে? জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

গাইনি বিভাগের প্রধান, নাসরিন ম্যাডামের উদ্যোগে মেয়েদের হলের দেয়ালে পাঁচ কলামজুড়ে ব্রাজিলের সমর্থনে বিশাল চিত্রকর্ম ফুটিয়ে তোলা হয়েছে
ছবি: সংগৃহীত

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের দেয়ালে দেয়ালে একরকম পাল্লা দিয়ে চলছে দেয়ালচিত্র অঙ্কনের কাজ। হলুদ–সবুজ ছবিতে কেউ হেক্সা মিশন সফল করার বার্তা দিচ্ছেন, কেউ–বা দেয়ালে নীল–সাদা রঙে আঁকছেন ‘ভিনগ্রহের খেলোয়াড়’–এর ছবি। ৫১ ফুট পতাকা টানিয়ে ক্যাম্পাসে দাপট বিস্তার করতেও চাইছেন কেউ কেউ। প্রিয় দলের পোশাক পরে, পতাকা হাতে চলছে মিটিং–সিটিং, শোভাযাত্রা।

৪৩ ইঞ্চি টিভি পৌঁছে গেছে হলগুলোয়। ওদিকে কলেজের মিলনায়তনে খেলা দেখার আয়োজনও করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে খেলা শুরুর আগেই যেন উন্মাদনা বেশি। কেউ ‘সেভেন আপ’ বলে চিৎকার করছেন মিছিলে। কেউ আবার বলছেন, ‘হেক্সার স্বপ্ন দূরে থাক, আর্জেন্টাইনরা কোনো দিনই ট্রাই পর্যন্তও পৌঁছতে পারবে না।’

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের দেয়ালে দেয়ালে একরকম পাল্লা দিয়ে চলছে দেয়ালচিত্র অঙ্কনের কাজ
ছবি: সংগৃহীত

স্লোগান আর দুষ্টুমিতে সরগরম হয়ে আছে ক্যাম্পাসের বিকেল। ‘নীল নীল সাদা সাদা, আরজিতিনা গাধার গাধা’ কিংবা ‘টিম আছে এক ফাজিল, নাম তার ব্রাজিল’…কত রকম মজার স্লোগান! পিছিয়ে নেই জার্মানি সমর্থকেরাও। সব দলের সমর্থকেরা তাঁদের দলের প্রচার–প্রসারে কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির পদগুলোও বেশ দারুণ। ট্রলবিষয়ক সম্পাদক, টিস্যু পেপার বিতরণকারী কমিটি ইত্যাদি। এ দল বলছে আমার দল ভারী, অন্যরা তাকে টেক্কা দিতে পরদিন দ্বিগুণ সংখ্যা নিয়ে মিছিলে নামছে। কেউ জার্সির লোভ দেখিয়ে জার্মান ফ্যানদের নিজেদের দলে ঢুকিয়ে দল ভারী করতে চাইছেন। কেউবা নিরপেক্ষদের দলে টানতে করছেন গোপন বৈঠক।

কোনো দল হেরে গেলে সেই দলের সমর্থকদের জন্য আছে টিস্যু পেপারের ব্যবস্থা। বিপক্ষ দলের সমর্থকদের ইনবক্সে উত্ত্যক্ত করার জন্যও আছে আলাদা দল। শিক্ষকেরাও মেতে উঠেছেন নীল–সাদা কিংবা হলুদ–সবুজ উন্মাদনায়। গাইনি বিভাগের প্রধান, নাসরিন ম্যাডামের উদ্যোগে মেয়েদের হলের দেয়ালে পাঁচ কলামজুড়ে ব্রাজিলের সমর্থনে বিশাল চিত্রকর্ম ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সহযোগিতা করেছেন আমাদের অধ্যক্ষ মো. মঈনুল হকও।

চিত্রকর্মটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্রাজিলপ্রেমীদের মধ্যে বেশ সাড়া জাগিয়েছে। তবে পাল্টা দাপট বিস্তার করতে হলের গেটেই আর্জেন্টিনার পতাকা আঁকতে শুরু করেছে আরেক পক্ষ। বিষয়টা এমন দাঁড়াল—‘বাহিরে তার আর্জেন্টিনা, হৃদয়ে ব্রাজিল’। ছাত্রদের পাশাপাশি ছাত্রীদের এই বড় উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন অন্যরাও। এই দেয়ালকে ঘিরে একটি ফ্ল্যাশমবের আয়োজন করেছেন তাঁরা। দুষ্টুমি করে আমরা বলছি, স্টেথোস্কোপে এখন হার্টবিটের পাশাপাশি ‘ফিল দ্য ম্যাজিক ইন দ্য ইয়ার’ গানও শোনা যাচ্ছে। আইটেম–কার্ড–টার্মের ব্যস্ততার ফাঁকেও আমরা গাইছি ‘গিভ মি ফ্রিডম, গিভ মি ফায়ার’। মেডিকেলের কাঠখোট্টা জীবনে এই ফুটবল–আয়োজন যেন একচিলতে আনন্দের উপলক্ষ। সুস্থ–সুন্দর বিনোদনে এই মজার আয়োজন হয়তো আমাদের মনকে একটু প্রশান্তি দেবে। শুভকামনা সব দলের জন্যই।

বিশ্বকাপ ঘিরে আপনার ক্যাম্পাসে কী চলছে, লিখে পাঠাতে পারেন আপনিও। নির্বাচিত লেখাগুলো প্রকাশিত হবে প্রথম আলোয়। লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]। লেখার সঙ্গে পুরো নাম, পরিচয়, ফোন নম্বর ও সংশ্লিষ্ট ছবি পাঠাতে হবে।