পান্ডা প্যারেন্টিং কি ভালো
অভিভাবক সন্তানকে নিরাপত্তা দেবেন, এটাই স্বাভাবিক। নিরাপত্তার পাশাপাশি সন্তানকে স্বাধীনতাও দেওয়া দরকার। কিন্তু সন্তানকে তার ইচ্ছামতো চলতে দেওয়ার মতো উদারতা সবার থাকে না। ইচ্ছামতো চলতে দেওয়ার অর্থ কিন্তু একেবারে যা খুশি তা–ই করতে দেওয়া নয়। বরং যখন সে ভুল পথের দিকে এগোবে, তখন তাকে নিরাপদ পথের সন্ধানও দেন অভিভাবক। একই সঙ্গে স্বাধীনতার আনন্দ আর নিরাপত্তার নিশ্চয়তার সমন্বয়ে সৃষ্ট এক ধারা পান্ডা প্যারেন্টিং। পান্ডা যেমন তার সন্তানকে যত্নে বড় করে, ব্যাপারটা অনেকটা তেমন।
মানবসন্তানের বিকাশের পথে দারুণ সহায়ক ভূমিকা রাখে সন্তানপালনের এই ধারা। এই ধারার মধ্যে বেড়ে ওঠা শিশু স্বনির্ভর হয়ে গড়ে ওঠে। তার মধ্যে জন্মে আত্মবিশ্বাস। তাই ভবিষ্যতে যেকোনো পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়াটা তার জন্য সহজ হয়। বাড়ন্ত বয়সেই নিজের ইচ্ছায় অনেক কিছু করতে পারার স্বাধীনতা থাকলেও প্রয়োজনের মুহূর্তে অভিভাবককে ঠিকই পাশে পায় সে। তাই অভিভাবকের প্রতি দৃঢ় আস্থা থাকে তার। পান্ডা প্যারেন্টিংয়ের নানা দিক সম্পর্কে বলছিলেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের শিশু-কিশোর ও পারিবারিক মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. টুম্পা ইন্দ্রানী ঘোষ।
কারা পান্ডা প্যারেন্ট
একটি শিশুকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার প্রয়াসে তাকে নিজের মতো করে চলতে দেওয়া পান্ডা প্যারেন্টের বৈশিষ্ট্য। সব সময় ‘এটা করো না, ওটা ধরো না’–জাতীয় নিষেধাজ্ঞার বেড়াজালে না বেঁধে শিশুকে নানা অভিজ্ঞতার সঙ্গে পরিচিত হতে দেন পান্ডা প্যারেন্ট। তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি হয় উদার। এভাবে সন্তান ও অভিভাবকের মধ্যে গড়ে ওঠে দারুণ বিশ্বস্ততা। একজন পান্ডা প্যারেন্ট শিশুর ব্যক্তিস্বাধীনতাকে সম্মান করেন। কোনো সিদ্ধান্ত শিশুর ওপর চাপিয়ে দেন না, আবার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিশুকে একলা নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার গুরুদায়িত্বও দিয়ে দেন না। বরং এমনভাবে সিদ্ধান্ত নেন, যেন ভবিষ্যতে শিশুর কল্যাণ হয়, আবার মনের শিশুতোষ স্বপ্নগুলোও অঙ্কুরেই বিনষ্ট না হয়। প্রয়োজনের সময় এমনভাবে দিকনির্দেশনা দেন তাঁরা, যা থেকে পরিস্থিতি নিজেই সামলে নিতে শেখে সন্তান। ঠিক পথে হাঁটতে ইতিবাচকভাবে উৎসাহ দেন। অর্থাৎ সবদিকেই ভারসাম্য বজায় রাখেন এই অভিভাবকেরা।
শিশুর খানিকটা স্বাধীনতা চাই
শৈশবে সামান্য শখ-আহ্লাদ কিংবা ক্ষুদ্র চাওয়াটুকুই বিশাল বড় বলে মনে হয়। ধরুন, আপনি শিশুর জন্য দৈনন্দিন রুটিন করবেন। শিশুর খেলাধুলা বা পছন্দের কাজের জন্য সে কতটা সময় চায় এবং কোন সময়টা সেসব কাজের জন্য রাখলে ভালো হবে, এসব নিয়ে শিশুর সঙ্গে আলাপ করা আবশ্যক। নইলে শিশু নিজেকে বঞ্চিত বোধ করতে পারে। তাই রুটিনটি শিশু ও অভিভাবক একই সঙ্গে মিলে করতে পারেন। একইভাবে নির্ধারণ করা যেতে পারে শিশুর স্ক্রিনটাইমও। শিশুকে নিজের পছন্দে পোশাক পরতে দেওয়া, নিজের চেষ্টায় স্কুল থেকে দেওয়া বাড়ির কাজ সেরে ফেলতে উৎসাহ দেওয়া—এগুলোও পান্ডা প্যারেন্টিংয়ের বৈশিষ্ট্য। স্কুলে বন্ধুদের সঙ্গে ঝামেলা হলে সরাসরি সেখানে ছুটে না গিয়ে শিশুকেই তা সামলে ওঠার উপায় বাতলে দেন পান্ডা প্যারেন্ট।
শিশুর ওপর প্রভাব
পান্ডা প্যারেন্টিংয়ে বেড়ে ওঠা শিশু জীবনের চ্যালেঞ্জগুলোকে সহজে সামলাতে পারে। নিজের দায়িত্ব নিজেই নিতে পারে। চাপের মুখে স্থিতধী থাকতে সক্ষম হয়ে ওঠে তারা। বিশ্বাসের মর্যাদাও রাখতে শেখে। পর্যাপ্ত স্বাধীনতা পাওয়ার কারণে অপূর্ণতার নির্মম অনুভূতিতে জর্জরিত হয় না তারা। অভিভাবকের প্রতি ক্ষোভ জন্মায় না। বরং অভিভাবকের সঙ্গে তাদের দৃঢ় এক বন্ধন গড়ে ওঠে। পরিবারের পরিবেশজুড়েই থাকে ভালোবাসার উষ্ণতা।
সব শিশুর জন্য উপযোগী কি না
সব মানবসন্তানের জন্য কি এই পদ্ধতি সমানভাবে গ্রহণযোগ্য? ডা. টুম্পা ইন্দ্রানী ঘোষ বলছিলেন, শিশুর ব্যক্তিত্বের ধরন আর তার চাহিদা বুঝে নিয়ে ঠিক করতে হয়, তাকে কীভাবে বড় করে তুললে সেটি তার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে। সহজে সবকিছু গ্রহণ করে, এমন শিশুর জন্য পান্ডা প্যারেন্টিং দারুণ। তবে প্রতিটি মানবশিশুই অনন্য। শিশুদের ভেতর কেউ কেউ একটু জেদি। এমন শিশুকে আবার একটু ভিন্ন উপায়ে বড় করে তুলতে হয়। প্যারেন্টিংয়ের সেই ধারার সঙ্গে পান্ডা প্যারেন্টিংয়ের কিছু বৈশিষ্ট্য যোগ করেও নেওয়া যেতে পারে প্রয়োজনে।