এই ঈদে তাঁদের কি একটা ‘ধন্যবাদ’ দেবেন?

ঈদের দিনেও প্রথমবারের মতো ক্যাম্পাসে থাকার অভিজ্ঞতা হয় অনেক শিক্ষানবিশ চিকিৎসকের। ছবিটি প্রতীকি।ছবি: খালেদ সরকার

কয়দিন পরই ঈদ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ক্যাম্পাস অবশ্য আরও আগে থেকেই ফাঁকা হতে শুরু করেছে। তবে ব্যতিক্রমও আছে। মেডিকেল কলেজগুলোর কথাই ধরুন। চূড়ান্ত পেশাগত পরীক্ষার কঠিন ধাপ পেরিয়ে শিক্ষানবিশ হিসেবে কর্মরত চিকিৎসকদের ঈদের সময়টাও ব্যস্ততায় কাটবে। জরুরি স্বাস্থ্যসেবা তো আর বন্ধ রাখা যায় না। ঈদের সময়ও হাসপাতালে ভর্তি থাকে বহু রোগী, আসে নতুন রোগীও। তাই শিক্ষানবিশ থেকে শুরু করে সব পর্যায়ের চিকিৎসকেরাই ঈদে দায়িত্বে থাকেন।

বছরের পর বছর এভাবে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের কথা আলাদা। কিন্তু শিক্ষানবিশ চিকিৎসক জীবনে প্রথমবারের মতো ঈদে যাঁরা দায়িত্ব পালন করেন, কেমন তাঁদের অভিজ্ঞতা?

রোগীদের কৃতজ্ঞতাই ঈদের প্রাপ্তি

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গতবার পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন এবং তার পরদিন দায়িত্ব পালন করেছেন ডা. সাদিদা সুইরাত। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রাম। তাঁকে কাছে না পাওয়ায় পরিবারের সদস্যদের অনুভূতি ছিল দুঃখ আর বিস্ময় মেশানো, ‘ডাক্তারদের কি ঈদ নেই?’

ঈদে সাদিদার কাজের চাপ ছিল বেশ। তবে সঙ্গে থাকা অগ্রজ চিকিৎসকেরা যে উদ্যম নিয়ে কাজ করেছেন, এই কঠিন পথে চলার উপায় যেভাবে অনুজদের দেখিয়েছেন, তাতে সাদিদা রীতিমতো মুগ্ধ। ঈদের সকালে হাসপাতালের তরফ থেকে সব রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য বরাদ্দ ছিল দুধ, ডিম, কলা আর পাউরুটি। তবে দুপুরে পরিবেশন করা হয়েছিল ঈদের বিশেষ খাবার।

রোগীদের ঈদের দিনটা কেমন ছিল? সাদিদা বলেন, ঈদের আনন্দ মলিন মুখগুলোকে স্পর্শ করেনি। তবে চিকিৎসকদের প্রতি তাঁদের কৃতজ্ঞতা অনুভব করতে পারছিলেন। সঙ্গে এটাও উপলব্ধি করতে পেরেছেন, বছরের পর বছর এভাবেই নিভৃতে সেবা দেন বহু চিকিৎসক। কেউ হয়তো তাঁদের ‘ধন্যবাদ’ও বলেন না।

আগেও যাঁর ঈদ কেটেছে ক্যাম্পাসে

শিক্ষানবিশের সময়ই যে শুধু বাসার বাইরে ঈদ কাটিয়েছেন, তা কিন্তু নয়। পরীক্ষার জন্যও হোস্টেলে ঈদ কাটিয়েছিলেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ডা. আবু হুরায়রা হানিফ। তাঁর অনেক সহপাঠীও এই তালিকায় আছেন। আর শিক্ষানবিশ হিসেবে গতবার ঈদুল ফিতরের দিন মিটফোর্ড হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করেছেন ডা. আবু হুরায়রা। রোগীদের জন্য খাবার এনেছিলেন স্বজনেরা। অগ্রজ চিকিৎসকেরাও খাবার এনেছিলেন অনুজদের জন্য।

কাজের মধ্যেই রোমাঞ্চ

ডা. ফাইরুজ অমি বলছিলেন, ‘হাসপাতালে ঈদ-ই যদি না করলাম, তাহলে আর কিসের ইন্টার্ন জীবন!’ ঈদের দিন হাসপাতালে কাজ করাটা তাঁর কাছে রোমাঞ্চকর। গত বছর দুই ঈদের সময়ই দায়িত্ব পালন করেছেন আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস করা এই চিকিৎসক। চিকিৎসক ভাইকেও ঈদের দিন দুই বেলা দায়িত্ব পালন করতে দেখেছেন। ঈদুল ফিতরের সময় ডা. ফাইরুজ অমির দায়িত্ব ছিল ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। নতুন পোশাকের ওপর অ্যাপ্রোন চাপিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার কথা ভেবে চাঁদরাতেই তাঁর আনন্দ হচ্ছিল। অবশ্য সকালে যানবাহন পাচ্ছিলেন না। ঈদের নামাজ শেষে নিজেই তাই গাড়ি চালিয়ে মেয়েকে কর্মস্থলে পৌঁছে দেন বাবা।

জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকেরা কুশল বিনিময় করে রোগীদের উপহার দিয়েছিলেন মিষ্টির প্যাকেট। স্বাস্থ্যসেবাদানকারী প্রতিটি মানুষ যেন রোগীদের আপনজন হয়ে উঠেছিলেন। রোগীর স্বজনেরাও অবশ্য আপনজনেদের জন্য খাবার এনেছিলেন। ঈদুল আজহার পরদিন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এক দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছিল ডা. ফাইরুজ অমির। রোগীর স্বজনেরা তাঁকে কাবাব-মাংস খেতে দিতে চাচ্ছিলেন। এমনকি তাঁদের সঙ্গে আসা শিশুরাও চিপস বা ক্যান্ডি সাধছিল! দুই ঈদেই কর্তব্যরত কনিষ্ঠ চিকিৎসকদের খাইয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকেরা।