দ্বিতীয় মস্তিষ্ক কী? কীভাবে এটি আপনার জীবন বদলে দিতে পারে
একটা সাধারণ সমস্যা দিয়ে শুরু করি। ধরুন, ফেসবুক দেখতে দেখতে একটা ভালো তথ্য বা আইডিয়া পেলেন। আইডিয়াটা আপনার খুব মনে ধরল। ভাবছেন, আপনিও এভাবে কাজ করবেন। ভাবতে ভাবতেই ফেসবুক চালাচ্ছেন। একই সময়ে পড়ছেন পত্রিকা। পত্রিকার ওয়েবসাইটে একটু ঢুঁ মারছেন। পড়ছেন একটা বইয়ের কিছু অংশ। আর সেই আইডিয়ার কথাটা ভুলে গেলেন বেমালুম।
এরপর কেটে গেল দুদিন। হঠাৎ সেই আইডিয়ার কথা মাথায় এল। কিন্তু কোথায় যে আইডিয়াটা পড়েছেন বা দেখেছেন, তা কিছুতেই মনে করতে পারছেন না। এমন সমস্যা কমবেশি সবার হয়। মাত্র এক দিন আগে দেখা করা কোনো ব্যক্তির নাম আমরা অনেকে সহজেই ভুলে যাই। এসব সমস্যা সমাধানের জন্যই এসেছে ‘সেকেন্ড ব্রেইন’ বা দ্বিতীয় মস্তিষ্কের ধারণা।
দ্বিতীয় মস্তিষ্ক কী
দ্বিতীয় মস্তিষ্ক আদতে কোনো জাদুকরি কিছু নয়। এটি আমাদের জ্ঞান ও তথ্যগুলোকে সুন্দরভাবে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করার একটি পদ্ধতি। মার্কিন প্রোডাকটিভিটি বিশেষজ্ঞ তিয়াগো ফোর্তে এই ধারণা জনপ্রিয় করে তুলেছেন। মূল কথা হলো, আমরা প্রতিদিন যেসব তথ্য পড়ি, শুনি বা দেখি, তার মধ্যে যেসব গুরুত্বপূর্ণ ও কাজের, সেসবকে এমনভাবে সাজিয়ে রাখা, যাতে পরে প্রয়োজনের সময় সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়।
এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার বলে রাখা ভালো—দ্বিতীয় মস্তিষ্কের উদ্দেশ্য এই নয় যে আপনি জীবনে যা কিছু জানেন বা শিখেছেন, সবকিছুর একটা নিখুঁত আর্কাইভ তৈরি করবেন। এর লক্ষ্য হলো এমন একটি জ্ঞানের সংগ্রহ গড়ে তোলা, যা আপনার জন্য অর্থবহ, মূল্যবান এবং প্রাসঙ্গিক। নিয়মিত জ্ঞান সংরক্ষণ ও পর্যালোচনার অভ্যাস গড়ে তোলাই এর মূল কথা। এতে দীর্ঘ মেয়াদে সুফল পাওয়া যায়।
বর্তমান যুগে আমরা অবিরাম নতুন নতুন তথ্য পাচ্ছি। ইন্টারনেট, বই, পত্রিকা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, টিভিসহ নানানভাবে হাজারো তথ্য আমাদের মস্তিষ্কে প্রবেশ করছে। কিন্তু আমাদের প্রাকৃতিক মস্তিষ্ক এই বিপুল তথ্য মনে রাখতে ও পরে উদ্ধার করতে পারে না। এই সমস্যার সমাধানই হলো দ্বিতীয় মস্তিষ্ক। এর কিছু উপকারিতা তো আছেই। চলুন, সেসব জানা যাক।
মানসিক চাপ কমায়
ভেবে দেখুন তো, আমাদের মস্তিষ্ক কি আদতে এত বিপুল তথ্য মনে রাখার জন্য যথেষ্ট? না, মোটেও না। আমাদের মস্তিষ্ক প্রতিদিন যে পরিমাণ তথ্য পায়, তার সবকিছু মনে রাখা ও পরে সঠিকভাবে উদ্ধার করা এর পক্ষে প্রায় অসম্ভব। এ কারণেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান তথ্য আমাদের মনে থাকে না।
কিন্তু যখন আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করার একটা ব্যবস্থা থাকবে, তখন আপনার মস্তিষ্কের ওপর চাপ কম পড়বে। মস্তিষ্ককে আর বছরের পর বছর বা দিনের পর দিন আগের তথ্যগুলো মনে রাখার জন্য সংগ্রাম করতে হবে না। ফলে আপনার মস্তিষ্ক বর্তমানের কাজ, প্রকল্প বা লক্ষ্যের দিকে পুরোপুরি মনোযোগ দিতে পারবে।
আইডিয়া প্রসারিত করে
দ্বিতীয় মস্তিষ্কের একটি অসাধারণ সুবিধা হলো, যতই আপনি বিভিন্ন নোট ও তথ্য সংগ্রহ করবেন, ততই অনেক বিষয়ের মধ্যে যোগসূত্র খুঁজে পাবেন। একটি বিষয় কীভাবে অন্য একটি বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত, তা সহজেই বুঝতে পারবেন।
ধরুন, আপনি লিডারশিপ নিয়ে একটি নোট তৈরি করেছেন। কিছুদিন পর দেখলেন, টিমওয়ার্ক নিয়ে আপনার আরেকটি নোট আছে। এই দুটি বিষয়ের মধ্যে আছে গভীর সম্পর্ক। দ্বিতীয় মস্তিষ্কের পদ্ধতিতে আপনি এসব নোট সংযুক্ত করতে পারবেন। তৈরি করতে পারবেন একটি নেটওয়ার্ক।
ফলে যখন আপনি একটি নোট দেখবেন, তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে এ–সম্পর্কিত অন্য নোটগুলোও দেখতে পাবেন। এভাবে আপনার বর্তমান প্রকল্প বা কাজে এসব জ্ঞান প্রয়োগ করতে পারবেন। এমনকি যদি তৎক্ষণাৎ এসব সম্পর্ক মাথায় না আসে, তবু আপনার দ্বিতীয় মস্তিষ্ক আপনাকে সেই সংযোগ খুঁজে দিতে সাহায্য করবে।
উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি
এসব উন্নতির চূড়ান্ত ফলাফল হলো, আপনার উৎপাদনশীলতা বাড়বে। যখন আপনার প্রাকৃতিক মস্তিষ্কের ওপর চাপ কমে যাবে, তখন আপনার মানসিক চাপও কমবে। বিভিন্ন আইডিয়ার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে পারবেন আরও দ্রুত ও সহজভাবে। তথ্য শোষণ করতে ও কাজে লাগাতে পারবেন আরও দক্ষতার সঙ্গে। এভাবে আপনি আপনার জ্ঞানকে যেকোনো কাজ বা প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় রূপে রূপান্তরিত করতে পারবেন।
দ্বিতীয় মস্তিষ্ক আপনাকে আরও উৎপাদনশীল হতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি আমরা ক্রমাগত যে জ্ঞান অর্জন করছি, তার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করবে।
মনে রাখবেন, দ্বিতীয় মস্তিষ্ক কোনো জটিল বিষয় নয়। এটি শুধু আপনার জ্ঞানকে সুসংগঠিত করার একটি স্মার্ট উপায়। নিয়মিত চর্চা করলে নিজ থেকেই আপনার মধ্যে এটা কাজ করতে শুরু করবে। আজই একটি নোটবুক নিন বা কোনো ডিজিটাল অ্যাপ ব্যবহার করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো সংরক্ষণ করুন। দেখবেন, কয়েক মাসের মধ্যেই এর ইতিবাচক প্রভাব আপনার জীবনে অনুভব করতে পারবেন।
সূত্র: মিডিয়াম