আধুনিক রান্নাঘর কেমন হবে

একটা সময় ছিল যখন মূল বাড়ির বাইরে থাকত রান্নাঘর। ঘর নির্মাণ বা সজ্জাতেও রান্নাঘর গুরুত্ব পেত কম। তবে আধুনিক কালে রান্নাঘর শুধু রান্নারই জায়গা নয়; বরং অন্দরেরই একটি অংশ। চুলার বাইরে আধুনিক একটি রান্নাঘরে আর কী কী থাকা দরকার, তা জানালেন রিফাত পারভীন

চিকেন হুড বা চিমনি

বৈদ্যুতিক চিমনি বাজারে এখন বেশ জনপ্রিয়
ছবি: প্রথম আলো

রান্নার ধরনের কারণে বাঙালি রান্নাঘরে চিটচিটে ভাব থাকে বেশি। তেল ও মসলার বেশি ব্যবহার এবং কষিয়ে রান্না করার কারণে ধোঁয়া ও গন্ধ—দুটিই বেশি হয়। তাই মসলার গন্ধ হোক বা তেল চিটচিটে ভাব—দুটি কমাতেই স্মার্ট রান্নাঘরে রাখা চাই চিকেন হুড বা চিমনি। আধুনিক সময়ে রান্নাঘরের জন্য তৈরি করা হচ্ছে নানা নকশার স্টাইলিশ চিমনি। এমন চিমনিতে তাই রান্নাঘরের সৌন্দর্যও বাড়ে। সঙ্গে রান্নাঘরে তৈরি হয় স্বস্তিকর পরিবেশ।

বৈদ্যুতিক চিমনি বাজারে এখন বেশ জনপ্রিয়। এ ধরনের চিমনি ধোঁয়া ও তাপ টেনে নেয়। আধুনিক এই চিমনিতে থাকে এয়ার পিউরিফায়ার ও ফ্যান। বিদ্যুৎ বিলও আসে কম। মাঝারি আকারের চিমনি রান্নাঘরের কাউন্টার ছাদেও সহজে বসানো যায়।

কিছু চিমনি আছে তেল বা মসলার গন্ধ দূর করার পাশাপাশি ঘরের অন্য দূষিত বাতাসও বের করতে সাহায্য করে। তবে এর জন্য চিমনির সাকশন পাওয়ার বা টেনে নেওয়ার ক্ষমতা অবশ্যই ভালো হতে হবে।

রান্নার তেল ও গন্ধ টেনে খুব দ্রুতই ময়লা হয়ে পড়ে চিমনি। এ জন্য আধুনিক চিমনিতে অটো ক্লিন পদ্ধতি থাকে। চিমনিতে থাকা নির্দিষ্ট একটি সুইচ টিপলেই এই প্রযুক্তির কল্যাণে চিমনির ভেতরটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিষ্কার হয়ে যায়। তবে আধুনিক ডিজাইনের চিমনি না থাকলে মাসে অবশ্যই দুবার চিমনি পরিষ্কার করতে হবে। 

রান্নার সময় চিমনির শব্দ পছন্দ না করলে সে ব্যবস্থাও আছে। আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি এমন চিমনি আছে, যা চালু করার পর কোনো ধরনের শব্দই করবে না। এমন শব্দহীন চিমনিও এখন বেশ জনপ্রিয়। রান্নার সুবিধার জন্য অনেক চিমনিতে থাকে এলইডি লাইট, যা জ্বালিয়ে কম আলোতেও দিব্যি রান্না সেরে নেওয়া যাবে।

চিমনিতে থাকা এলইডি বাতির আলোতেও রান্না করা যায়, অন্য আলোর আর দরকার পড়ে না
ছবি: প্রথম আলো

দ্রুত ধোঁয়া ও মসলার ঝাঁজ দূর করতে স্মার্ট চিমনিতে থাকে কয়েক স্তরের অ্যালুমিনিয়ামের ব্যাফেল ফিল্টার। এ ছাড়া প্রয়োজন বুঝে কমানো বা বাড়ানো যায় চিমনির গতি। বাজারে সিঙ্গার, আরএফএল, মিয়াকো, কুচিনা, ডেসিনি, বস, ডেল্টাসহ বহু ব্র্যান্ডের চিমনি পাওয়া যাচ্ছে।

রান্নাঘরে চিমনি কয়েকভাবে বসানো যায়। কম জায়গার মধ্যে চিমনি বসাতে চাইলে চুলার ঠিক ওপরে ওয়াল মাউন্ট চিমনি বসিয়ে নিতে পারেন। রান্নাঘরের কোনাতেও চিমনি বসানো যায়। রান্নাঘরে অনেক জায়গা থাকলেই এভাবে বসাতে পারেন। 

চুলা থেকে ছাদ অনেক ওপরে হলে বিশেষভাবে চিমনি বসানো যায়। এ পদ্ধতিতে বক্সের মতো একটা অংশ চুলার কাছাকাছি ঝুলে থাকে, যেন ধোঁয়া ও ঝাঁজ দূরে টেনে নিতে পারে।

চিমনি সাধারণত ৬০ সেন্টিমিটার ও ৯০ সেন্টিমিটার আকারের হয়ে থাকে। দুই বার্নারের চুলাঘরে ৬০ সেন্টিমিটার ও ৩ বা ৪ বার্নার চুলাঘরের জন্য ৯০ সেন্টিমিটার চিমনি ব্যবহার করা হয়। ভালো মানের চিমনি দুই বা তিন ফুট উচ্চতার হয়।

রান্নাঘরের ক্যাবিনেট

কিচেন ক্যাবিনেটে সব জিনিস গুছিয়ে রাখা সহজ
ছবি: প্রথম আলো

রান্নাঘর সাজিয়ে–গুছিয়ে রাখার জন্য সব থেকে বেশি প্রয়োজন ক্যাবিনেট। তবে ক্যাবিনেটের ধারায় এখন বেশ পরিবর্তন এসেছে। শুধু দেয়ালে বসানো ক্যাবিনেট ছাড়াও বেশ কয়েক ধরনের আধুনিক ডিজাইনের ক্যাবিনেট দেখা যায়। হাতিলের পরিচালক সফিকুর রহমান বলেন, মডিউলার কিচেন ক্যাবিনেট এখন খুব জনপ্রিয়। অনেকেই প্লাইউড, ফাইবার বোর্ড বা ক্যাক্রাইলিক কিচেন ক্যাবিনেট বেছে নেন। রান্নাঘরের আকারে ফরমাশ দিয়ে ক্যাবিনেট তৈরি করে নেওয়ার পাশাপাশি তৈরি করা ক্যাবিনেটও বাজারে পাওয়া যায়। এগুলোও রান্নাঘরে প্রয়োজন মতো বসিয়ে নেওয়া সম্ভব। এ ছাড়া ক্যাবিনেটে স্টেইনলেস স্টিলও অনেকে ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। পুরোনো ক্যাবিনেটের লুক বদলে নতুনত্ব আনতে এই উপকরণ ব্যবহার করা যায়।

রান্নাঘরে বন্ধ ক্যাবিনেটের পাশাপাশি উন্মুক্ত বা ওপেন শেলফ ক্যাবিনেট ব্যবহার করেও অনেকে আরাম পান। এ ছাড়া লুকানো ক্যাবিনেটও এখন বেশ চলছে। এমন ক্যাবিনেট রান্নাঘরে অনেক জায়গার সাশ্রয় করে। ক্যাবিনেটগুলো এমনভাবে নকশা করা হয়, দেখে মনে হয় মাইক্রোওয়েভ ওভেন।

পুশ-ওপেন স্টাইলের ক্যাবিনেট চাপ দিয়েই খোলা যায়। ড্রয়ার ক্যাবিনেটও রান্নাঘর গুছিয়ে রাখতে আদর্শ। এমন ক্যাবিনেট কাজের সময়ে বেশ আরাম দেয়। রান্নাঘরের জিনিসপত্র পরিপাটি করে গুছিয়ে রাখাও সহজ হয়।

আবার রান্নাঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে কাচের ক্যাবিনেট তৈরি করছেন অনেকে। যদিও এই ধরনের ক্যাবিনেট ব্যবহারে সারাক্ষণ থাকতে হবে সতর্ক। কারণ, সামান্য বেখেয়ালে ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

রান্নাঘরের টাইলস

রান্নাঘরে পিচ্ছিল টাইলস দেওয়া যাবে না
ছবি: সুমন ইউসুফ

রান্নাঘরের মেঝেকে কোনোভাবেই কম গুরুত্ব দেওয়া যাবে না। কারণ, মেঝেও বাড়ায় রান্নাঘরের সৌন্দর্য। আর কাজের আরাম তো আছেই। রান্নাঘরের মেঝেতে সব ধরন ও রঙের টাইলস ব্যবহার করা যাবে না। ঘরের টাইলস ও রান্নাঘরের টাইলসে অবশ্যই পার্থক্য থাকতে হবে। রান্নাঘরে গ্লসি বা পিচ্ছিল ধরনের টাইলস বসানো থেকে বিরত থাকতে হবে। বিশেষ করে, মেঝেতে। এই ঘরের মেঝের জন্য বর্ডার ও ডেকোর টাইলস ব্যবহার করা ভালো। আকারে অনেক বড় টাইলস না বেছে মেঝের জন্য ছোট আকারের টাইলসই ভালো। এতে মেঝে দেখতে সুন্দর লাগে। মেঝেতে সাদা বা ঘিয়ের মতো হালকা রঙের টাইলস না দিয়ে ক্যাবিনেটের সঙ্গে মিলিয়ে নকশা করা যায়। এতে বৈচিত্র্য আসবে। তবে মেঝেতে যেমন ম্যাট ফিনিশ টাইলস ব্যবহার করা ভালো, তেমন দেয়ালের জন্য সিরামিক টাইলস যথার্থ। কারণ, এ ধরনের টাইলস থেকে সহজেই ময়লা ও তেল চিটচিটে ভাব দূর করা যায়।