এই রোদ, এই বৃষ্টিতে আমরা কেমন আছি
শুক্রবার সকালে ফেসবুকে চোখে পড়ল ভিডিওটা। ঝুম বৃষ্টিতে কাদামাটি গায়ে মেখে ফুটবল খেলায় মেতেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের শিক্ষার্থীরা। ভিডিওটি দেখলেই অনুমান করা যায়, এই গরমে এমন বৃষ্টি কী আকাঙ্ক্ষিতই না ছিল শিক্ষার্থীদের কাছে! হলের ছাদেও ফুটবল খেলতে নেমে পড়েছিলেন অনেক ক্যাম্পাসের ছাত্ররা।
গত কয়েক দিন গরম আর লোডশেডিং ভুগিয়েছে সারা দেশের মানুষকেই। দেশের নানা প্রান্তের হলগুলোর কী অবস্থা? জানতে আমরা কথা বলেছিলাম বেশ কয়েকটি হলের বাসিন্দাদের সঙ্গে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থীদের কাছে যেমন লোডশেডিংয়ের সময় ছাদই একমাত্র ‘আশ্রয়’। কোনো দল হয়তো গিটার নিয়ে ছাদে উঠে পড়ে। কেউবা মোবাইলে লুডু খেলে সময় কাটায়। পড়ালেখায় মন বসানো একটু কঠিনই হয়ে যায়।
ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে রাজশাহী অঞ্চলে গরম তুলনামূলক বেশি, জানিয়ে শহীদ হবিবুর রহমান হলের বাসিন্দা তানভীর তুষার বলছিলেন, ‘এখানে গরম বেশি হলেও আসলে খারাপ লাগে না। লোডশেডিংয়ে বেশির ভাগ সময় ছাদেই কাটে। ছাদের ওই সময়টুকু আমাদের হলজীবনকে আরও আনন্দময় করে। লোডশেডিং না হলে হয়তো সবাই এভাবে একসঙ্গে ছাদে ওঠা হতো না। বাড়িতে থাকলে নিশ্চয়ই বেশ কষ্ট হতো। তার চেয়ে আপাতত হলই ভালো।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিস্থিতি একটু ভিন্ন। প্রচুর গাছ ও লেক থাকায় এই ক্যাম্পাসে গরম তুলনামূলক কম। তবে এবারের দাবদাহ ছুঁয়ে গেছে এই ক্যাম্পাসকেও। বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী তৌফিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে যথেষ্ট বাতাস আছে। তবে লোডশেডিংয়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো মশার উৎপাত। মশার যন্ত্রণায় এক জায়গায় বসে থাকা যায় না। আমরা তাই ক্যাম্পাসে ঘুরতে বেরিয়ে পড়ি। দেখা যায় দিনে কয়েকবার গোসল করতে হয়। ছাদে গিয়ে আড্ডাও দিই।’
ছেলেদের জন্য ঘুরতে বেরোনো, ছাদে আড্ডা দেওয়া সহজ হলেও নিরাপত্তাজনিত কিছু বিধিনিষেধ থাকার কারণে লোডশেডিংয়ে মেয়েদের দুর্ভোগটা বেশি। রাতবিরাতে বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই বলে হলের রুমেই থাকতে হয়। অনেকে নিজেদের মতো করে চার্জার লাইট, চার্জার ফ্যান কিনে নিয়েছেন। কিন্তু তাতেও আদতে খুব একটা স্বস্তি মিলছে না। কথা হলো জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমাইয়া শারমীনের সঙ্গে। তিনি থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে। সুমাইয়া বলেন, ‘বিদ্যুৎ না থাকার কারণে একদিকে যেমন পড়ালেখার ক্ষতি হয়েছে, অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থও হয়ে পড়েছে। বৃষ্টিই এখন আমাদের একমাত্র ভরসা।’