সব সময় মনে হতো সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে

সেলেনা গোমেজ ছেলেবেলা থেকেই তারকা। একাধারে গায়িকা, অভিনয়শিল্পী, ব্যবসায়ী। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সব সময় সরব এ মার্কিনি। এ বিষয়ে তাঁর লেখা একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছে সিএনএন।

সেলেনা গোমেজ একাধারে গায়িকা, অভিনয়শিল্পী, ব্যবসায়ী
ছবি: সেলেনার ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা যেসব ছবি দেখি, সেগুলো অজান্তেই ক্রমাগত আমাদের একটা বার্তা দিতে থাকে—নিখুঁত হতে হবে। যা অর্জন করা আসলে অসম্ভব।

সবার নজর আপনার দিকে, এমন এক পরিস্থিতিতে বড় হওয়া প্রচণ্ড মানসিক চাপের ব্যাপার। আপনার প্রতিটি কর্মকাণ্ড নিয়ে মানুষ মন্তব্য করছে; আপনার কী করা উচিত, কী উচিত নয়, সবই যেন লোকে ঠিক করে দিচ্ছে—ভাবতে পারেন? মাঝেমধ্যে মনে হয়, এ কারণে আমার চামড়া মোটা। যেভাবে বড় হয়েছি, তা নিয়ে আমার কোনো আফসোস নেই। একটা পরিবর্তন আনার মতো মঞ্চ আমার আছে, এ সৌভাগ্য কোনোভাবেই খাটো করে দেখতে পারি না।

আরও পড়ুন

তার মানে এই নয় যে আমাকে কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়নি। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আমার অভিজ্ঞতা নিয়ে খোলাখুলি কথা বলব। এ কারণে গত কয়েক বছরে বহু মানুষ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারাও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে। বিষয়টির সঙ্গে আমার নিবিড় সম্পর্ক আছে। আমি সব সময় এ–সংক্রান্ত ভুল ধারণাগুলো দূর করতে চাই, মানুষকে তাঁদের বৈচিত্র্য উদ্‌যাপন করতে উদ্বুদ্ধ করি।

নারীদের ওপর আমরা বিশাল এক অবাস্তব প্রত্যাশার বোঝা চাপিয়ে দিই। দেখতে এমন হতে হবে, ওটা ওভাবে করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আমাদের কাছে ‘নিখুঁত’ হওয়ার ধারণা বদলে দিয়েছে। অনেক সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া স্বীকৃতির মধ্যে আমরা শান্তি খুঁজতে চেষ্টা করি। কিন্তু দিন শেষে এ চর্চা আমাকে একা করে দেয়।

আমি সব সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে দূরে থাকার পক্ষে। এটা ঠিক যে আমি জানতে চাই, চারপাশে কী হচ্ছে। কিন্তু সেটার জন্য সর্বক্ষণ আঙুলের ওপর নির্ভর করতে হবে কেন?

আমি থেরাপির ঘোর সমর্থক। কেন আমার এমন লাগছে—এ ধরনের বহু প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে, নানা বাধা পেরোতে থেরাপি আমাকে সাহায্য করেছে। হতাশা ও অবসাদে ভুগছি, শুরুতে এটা মেনে নিতে বেশ কষ্ট হয়েছিল। সব সময় মনে হতো সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে, আমাকে নিখুঁত হতে হবে। কিন্তু যখন সাহায্য চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম, ঠিক করলাম নিজেকে মেলে ধরব, তখন থেকে বোঝা অনেকখানি কমে গেল। কে আমার দিকে তাকিয়ে আছে—এসব ভাবার চেয়ে আমি একজন মানুষ এবং কোনো মানুষই নিখুঁত নয়, এটা মেনে নেওয়া অনেক শান্তির।

বিশ্বের সেরা মেকআপ আর্টিস্টদের সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। মেকআপ এক দারুণ শিল্প। যেভাবে মেকআপ আর্টিস্টরা পরীক্ষা–নিরীক্ষা করেন, একেকটা চরিত্রের জন্য চেহারা আমূল পাল্টে দেন, পুরো ব্যাপারটা চমকপ্রদ।

বছর কয়েক আগে আমি এমন একটা ব্র্যান্ড তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিই, যেটা সৌন্দর্যের ধারণা পাল্টে দেবে। আমার মনে হয়েছিল, এটা নিয়ে কথা বলা দরকার।

একসময় ভাবতাম, সৌন্দর্যের জন্যই মেকআপ। কিন্তু এখন বুঝি, মেকআপের উদ্দেশ্য সুন্দর দেখানো নয়। মেকআপকে এখন এমন এক অনুষঙ্গ হিসেবে ধরে নিই, যা নিয়ে রোমাঞ্চিত হওয়া যায়।

নিজস্ব সাজগোজের ব্র্যান্ড আছে সেলেনার
ছবি: সেলেনা গোমেজের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

চেহারা একটা নির্দিষ্ট ধরনের হতে হবে—এ চাপ আমাদের ওপর আছে। অনেক সময় ধরে নেওয়া হয়, মেকআপের কাজ হলো খুঁত ঢেকে দেওয়া। কিন্তু আমরা সেই সব নারী ও পুরুষ চাই, যাঁরা সৌন্দর্যের ধারণা বদলে দেবে, আলোচনা পাল্টে দেবে, প্রত্যেকের স্বাতন্ত্র্যকে উদ্‌যাপন করতে শেখাবে।

ইংরেজি থেকে অনুদিত