দ্বিতীয়বারে সুযোগ পাওয়া মেহেরিনই বিশ্ববিদ্যালয়ে সব পরীক্ষায় প্রথম

মেহেরিন আহমেদ বর্তমানে বিইউপির শিক্ষক
ছবি: মেহেরিনের সৌজন্যে

ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনা আর বিতর্কে সমান তুখোড় ছিলেন মেহেরিন আহমেদ। সব পরীক্ষায় ভালো ফল পেয়ে যিনি অভ্যস্ত, সেই তিনিই প্রথম ধাক্কা খান বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার সময়। সেবার কোথাও ভর্তির সুযোগ পাননি তিনি। কিন্তু হতাশ না হয়ে দ্বিতীয়বারে পরীক্ষা দেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসে (বিইউপি)। তারপর? বিইউপির শিক্ষাজীবনে মেহেরিন শুধু যে ভালো ফল করেছেন, তা নয়, পেয়েছেন শিক্ষক হওয়ার সুযোগও।

২০১৬ সালে রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন মেহেরিন। ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন পুরোদমে। কিন্তু হঠাৎ টাইফয়েডে আক্রান্ত হন তিনি। আরও নানা কারণে ভর্তি পরীক্ষায় টেকা আর হয়ে ওঠেনি। অতঃপর ঢাকার ফার্মগেটের একটি হোস্টেলে থেকে দ্বিতীয়বারের মতো প্রস্তুতি শুরু করেন তিনি। মেহেরিনের ভাষ্য, ‘এটাই ছিল জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়।’

আরও পড়ুন

‘আফসোস’ ব্যাপারটাকে জীবনে সবচেয়ে ভয় পান তিনি। সে সময় তাঁর বারবার মনে হতো, আরেকটু পড়ালেখা করলেই হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে যেতাম। তখনই মনস্থির করেন, জীবনে আর যা-ই হোক, কখনো চেষ্টার কমতি রাখবেন না; যেন এমন পরিস্থিতিতে আর কখনো পড়তে না হয়।

২০১৯ সালে বিইউপির লোক প্রশাসন বিভাগে পড়ার সুযোগ পান মেহেরিন আহমেদ। ২০২২ সালে সিজিপিএ ৩.৯৪ পেয়ে স্নাতক ও ২০২৩ সালে সিজিপিএ ৪.০ পেয়ে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি ছিলেন বিইউপি গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট। দ্বিতীয় জাতীয় গবেষণা প্রতিযোগিতায় হয়েছেন চ্যাম্পিয়ন। এত কিছু একসঙ্গে কীভাবে সামলেছেন? জানতে চাইলে বললেন, ‘স্কুলে আমার এক শিক্ষক ছিলেন। সারা মাসে কী কী পড়াবেন, তা মাসের শুরুতেই লিখে দিতেন। এই পদ্ধতিটা আমি জীবনে সব ক্ষেত্রে কাজে লাগাই। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ও অনেক আগে থেকেই পুরো মাসের পরিকল্পনা করে রাখতাম। হয়তো একদিন আমার একটি প্রতিযোগিতা আছে, আবার সেদিন একটি ক্লাস টেস্টও আছে, আগে থেকেই পরিকল্পনা করে পড়া শেষ করে রাখতাম। এমনও দিন গেছে, যখন সকাল সাড়ে আটটায় হল থেকে বেরিয়ে লাইব্রেরিতে পড়তে গেছি। আবার রাত সাড়ে আটটায় যখন লাইব্রেরি বন্ধ হয়, তখন হলে ফিরেছি।’

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে শিক্ষানবিশ হিসেবে তিন মাস কাজ করেছেন মেহেরিন। ১ হাজার ৯৪ জন আবেদনকারীর মধ্য থেকে ১০ জনকে বাছাই করা হয়েছিল, এই পরীক্ষাতেও প্রথম হন তিনি। সে বছরই নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হওয়ার সুযোগ পান।

মেহেরিনের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা তাঁর মা-বাবা। ছোট ভাইও অনুপ্রাণিত করেন তাঁকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্কলার্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৩-এ নিবন্ধন করা নিয়ে অনেকেই তাঁকে বলেছিলেন, ‘এসব পাওয়া এত সহজ নয়।’ আবেদন জমা দেওয়ার শেষ দিনে তাঁর ছোট ভাই একরকম জোর করেই আবেদন করান। সারা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অধীনে দুজন এই পুরস্কার পান। মেহেরিন তাঁদের একজন।

আরও পড়ুন