মা পেছন ফিরে একগাল হেসে বলতেন, ‘কিরে বাবা, এত পেছনে কেন, আয়!’

প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বিশ্বজুড়ে পালিত হয় মা দিবস। সেই হিসাবে আগামীকাল মা দিবস। দিনটি উপলক্ষে মাকে নিয়ে পাঠকের কাছে লেখা আহ্বান করেছিল ‘ছুটির দিনে’। সেই আহ্বানে বিপুল পাঠক সাড়া দিয়েছেন। নির্বাচিত লেখাগুলোর একটি পড়ুন এখানে।

আঁকা: আপন জোয়ার্দার

বাড়ি থেকে নানাবাড়ি ১০-১২ মিনিটের পথ। উঠান পেরিয়ে রাস্তার ওপর ছোট ব্রিজ পার হলেই নানাবাড়ি।

আমি তখন ছোট। আমাদের অভাবের সংসারে অনেক কষ্ট করতেন মা। সংসারের এটা-সেটা আনতে প্রায় দেখতাম নানার বাড়ি যেতেন। এ জন্য নানাবাড়ির প্রায় সব কাজ, যেমন রান্নাবান্না, গোবরের লাকড়ি বানানো, খড় শুকানো এবং ধান শুকানো, ভানা থেকে কুঁড়া বের করা পর্যন্ত সবই মা সামলাতেন।

মা যখন নানাবাড়ি যেতেন, পিছু পিছু আমিও যেতাম। শুরুর দিকে মায়ের সঙ্গে সঙ্গেই হাঁটতাম। অল্প সময় পরই লক্ষ করতাম, মায়ের থেকে পিছিয়ে পড়েছি। মা তখন পেছন ফিরে একগাল হেসে বলতেন, মাঝেমধ্যে ধমকের সুরও তুলতেন, ‘কিরে বাবা, এত পেছনে কেন, আয়!’

মাকে ধরার জন্য আমিও দৌড়ে কাছে যেতাম। মা তখন আমার হাত ধরে ছোট ছোট পায়ে হাঁটতেন। এই অল্প রাস্তাতেই বেশ কয়েকবার এমন হতো। আবার যখন নানাবাড়ি থেকে আমাদের বাড়ি আসতাম, তখনো একই ঘটনা ঘটত।

শৈশব-কৈশোর পেরিয়ে আমি এখন যুবক। চলে গেছে অনেক বছর। একদিন কোনো বিশেষ প্রয়োজনে আমি আর মা একসঙ্গে নানাবাড়িতে যাচ্ছি। হঠাৎ খেয়াল করলাম, মা আমার থেকে পিছিয়ে পড়েছেন। হেসে মাকে বললাম, ‘মা, তুমি তো পিছিয়ে পড়ে গেলে!’

মা–ও একগাল হেসে উত্তর দিলেন, ‘তুই তো অনেক বড় হয়ে গেছিস। তোর সাথে হেঁটে পারব!’

মনে পড়ে গেল শৈশবের সেই ঘটনা, এবার আমিও ছোট ছোট পায়ে মায়ের সঙ্গে হাঁটি। মনে হতে থাকে, কোনো বাবা তাঁর মেয়েকে নিয়ে হাঁটছেন।