চাকু ধরে বলল, জীবনের মায়া থাকলে সবকিছু দিয়ে দে
অফিস শেষ করে সন্ধ্যার পর বেরিয়েছি। ধানমন্ডি ২৭ নম্বরের জেনেটিক প্লাজা থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ আর কতই-বা দূর। সংসদ ভবনের এই জায়গা থেকেই রিকশায় উঠে আগারগাঁও যাব। ফুটপাত ধরে হাঁটা শুরু করলাম। আমার বাসা উত্তরা। ব্যক্তিগত গাড়িতেই যাতায়াত। গত বুধবার পারিবারিক কারণে গাড়িটি সঙ্গে ছিল না। এই সুযোগে ভেবেছিলাম মেট্রোরেলে করে বাসায় যাওয়ার ‘ঐতিহাসিক’ অভিজ্ঞতাটা নিয়েই নিই!
হাঁটতে হাঁটতে মিরপুর রোডের পাশে মাদার কেয়ার হাসপাতালের সামনে চলে আসি। এখানে একটা পদচারী-সেতু আছে। সেতুটি পার হলে ওপারে ধানমন্ডি বয়েজ স্কুল। কয়েকজনকে দেখলাম সেতুতে না ওঠে হেঁটেই রাস্তা পার হয়ে গেল। ক্রমাগত গাড়ি চলছে, আমি রাস্তা পারাপারের ঝুঁকি না নিয়ে সেতুতে উঠে পড়লাম। আনমনে সেতু পাড় হয়ে ধানমন্ডি বয়েজ স্কুলের সামনের ফুটপাতে কেবলই পা ফেলেছি, অমনি তিনজন এসে ঘিরে ধরল। একজন কলার খামচে ধরল, পেটের কাছে চাকু চেপে ধরল আরেকজন, অন্যজন বলল, জীবনের মায়া থাকলে সবকিছু দিয়ে দে। আকস্মিক ঘটনায় আমি থ হয়ে গেছি। লোকটা আবার বলল, এসব জিনিসপত্রের চায়া জীবনের মূল্য অনেক বেশি!
লক্ষ করলাম, আশপাশে দু-একজন মানুষ দাঁড়িয়ে, দু-একজন আড় চোখে ঘটনা দেখছে, কিন্তু কেউ এগিয়ে এল না। ঘটনাস্থল থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের পুলিশ বক্সও খুব দূরে না। এখন কী করব? এমন পরিস্থিতে কখনো পড়িনি। আমার কাঁধে ঝোলানো ব্যাগে ল্যাপটপ, পকেটে নগদ টাকা আর মুঠোফোন।
যে করে হোক বাঁচতে হবে। মুহূর্তে ঘাড় থেকে ব্যাগ নামিয়ে ওদের ধাক্কা দিয়েই জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলাম। ওরা চাকু মারল। আমি হাত দিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করলাম। মনে হলো একটু কেটে গেছে। সেদিকে তাকানোর সময় তখন নেই। নিজেকে সামলে নিয়েই ভোঁদৌড়। এক দৌড়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের পুলিশ বক্সের কাছে। নিরাপদ দূরত্বে এসে পেছনে তাকিয়ে দেখি অন্ধকারে মিলিয়ে গেছে তিন ছিনতাইকারী। হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি বুড়ো আঙুলের গোড়া অনেকখানি কেটে দরদর করে রক্ত পড়ছে। অন্য হাত দিয়ে চেপে ধরে হাসপাতালে চলে গেলাম।
আঙুলের গোড়ায় চারটা সেলাই পড়ল।
ছিনতাইকারীরা কিছু নিতেও পারেনি, তবে অনেক ক্ষতি হতে পারত ভেবে এখনো আঁতকে উঠি। প্রতিদিন এ রকম কত ঘটনার খবর পড়ি, নগরীর পথচলতি মানুষের নিরাপত্তা কতটা ঠুনকো, আমার এই ঘটনার মধ্য দিয়ে বুঝলাম।