যে ভিডিও থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল

কিয়ালা সেটেল
ছবি: কিয়ালার ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

ক্রিকেট প্রসঙ্গে একটু পরে আসছি। আগে একজন মার্কিন অভিনেত্রী ও গায়িকার গল্প শুনুন।
নাম কিয়ালা সেটেল। হিউ জ্যাকম্যান অভিনীত ‘দ্য গ্রেটেস্ট শোম্যান’ (২০১৭) ছবিটা যাঁরা দেখেছেন, কিয়ালাকে হয়তো চিনবেন।
‘হয়তো’ বলতে হচ্ছে কারণ, ছবিতে কিয়ালা অভিনয় করেছেন এমন এক নারীর চরিত্রে, যার মুখভর্তি দাড়ি! লেটি লুটজ চরিত্রে কিয়ালা শুধু যে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন তা নয়, দারুণ একটা গানও গেয়েছেন। ‘দিস ইজ মি’ শিরোনামের সেই গান সে সময় তুমুল আলোড়ন ফেলেছিল। গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার জিতেছিল। পেয়েছিল অস্কার ও গ্র্যামির মনোনয়ন।

দ্য গ্রেটেস্ট শোম্যান ছবিতে কিয়ালা

কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, গানটা কিয়ালা গাইতে চাননি। ব্রডওয়ের তুখোড় এই অভিনেত্রী একটু আড়ালে থাকতেই পছন্দ করেন। অতএব পরিচালককে সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘আমি বড়জোর পেছনে দাঁড়িয়ে যেই গানের দল কণ্ঠ মেলাবে, তাদের একজন হতে পারি।’

কিন্তু পরিচালক মাইকেল গ্রেসি ছিলেন নাছোড়বান্দা, তিনি কিয়ালাকেই চান। অগত্যা অনেক দ্বিধা, দ্বন্দ্ব, ভয় নিয়ে গানের মহড়ায় হাজির হন কিয়ালা। দাঁড়িয়ে পড়েন মাইকের সামনে। তারপর যা ঘটে, সেটা অভাবনীয়, অভূতপূর্ব!

এই সেই মহড়ার দৃশ্য
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

সৌভাগ্যক্রমে, এই মহড়ার একটা ভিডিও ধারণ করা হয়েছিল। ভিডিওতে দেখা যায়, কাঁপা গলায় গানটা শুরু করছেন কিয়ালা। শুরুর কয়েকটা লাইনে তাঁর কণ্ঠস্বর একটু কাঁদো কাঁদো শোনায়। মহড়ার পরিবেশও খানিকটা থমথমে। তবে পুরো পরিবেশই বদলে যায়, যখন গানের দলের মধ্য থেকে মেরুন জ্যাকেট পরা একজন একটা চেয়ারের ওপর দাঁড়িয়ে গাওয়া শুরু করেন। হঠাৎ যেন একটা অদ্ভুত শক্তি ভর করে কিয়ালা আর এই পুরো গানের দলের ওপর। বদলে যায় তাঁদের শরীরী ভাষা। গানের কথাগুলো যেন বেরিয়ে আসে একদম বুকের ভেতর থেকে। একটু আগেও যেখানে মনে হচ্ছিল যে যাঁর জায়গা থেকে একা একা গাইছেন, আচমকাই তাঁরা একটা দল হয়ে ওঠেন।

ইউটিউবে ৮ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ভিডিওটা দেখেছেন। যাঁদের মধ্যে একজন—বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।
এবার ক্রিকেট প্রসঙ্গে আসা যাক!
কয়েক মাস আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া একটি ভিডিও থেকে জানা গেল, আমাদের জাতীয় ক্রিকেট দলের একটা অলিখিত রীতি আছে। দল হারুক বা জিতুক, প্রত্যেক ম্যাচে যে খেলোয়াড় বিশেষ কোনো প্রভাব রাখেন, স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে পরিয়ে দেওয়া হয় একটি মেরুন জ্যাকেট।

মেহেদী হাসান মিরাজসহ অনেকেই পেয়েছেন মেরুন জ্যাকেট
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া


বিসিবির দেওয়া সেই ভিডিওতে ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করেছেন বাংলাদেশ দলের তৎকালীন ম্যানেজার নাফিস ইকবাল, ‘এই মেরুন জ্যাকেটের ধারণাটা এসেছে আসলে একটা গান থেকে। যেখানে দেখা যায়, একটা ব্যান্ড শুরুতে খুব নার্ভাস। তখন মেরুন জ্যাকেট পরা একজন হঠাৎ এত সুন্দর করে গানটা গাইতে শুরু করে, সবাই খুব উজ্জীবিত হয়ে যায়। ওই কনসেপ্টই আমরা নিয়েছি। এমন নয় যে ম্যান অব দ্য ম্যাচ যে হবে, তাকেই মেরুন জ্যাকেট দেওয়া হবে। হতে পারে একটা তাৎপর্যপূর্ণ ওভার বা একটা ছোট ইনিংস, যেটা পুরো ম্যাচের গতি বদলে দিয়েছে। সে রকম একজন পারফরমারকেই আমরা মেরুন জ্যাকেটটা উপহার দিই।’

আইডিয়াটা যেহেতু চন্ডিকা হাথুরুসিংহের মাথা থেকে এসেছে, তাঁর ভাবনাটাও শুনুন। ভিডিওতে তিনি বলেছেন, ‘প্রথমবার গানটা গাওয়ার সময় কিয়ালা খুব নার্ভাস ছিলেন। দর্শকের সামনে নয়, তিনি কিন্তু নিজের দলের সামনেই গানটা গাইছিলেন। যখন গাইতে শুরু করলেন, তখনো ঘরজুড়ে একরকম চাপা টেনশন। দেখেই মনে হয়েছে, এটা তো আমাদের দল। সবাই চুপচাপ, কেমন যেন বিমর্ষ। ভিডিওতে আমরা দেখি, একজন হঠাৎ চেয়ারে দাঁড়িয়ে গানটা গাওয়া শুরু করে। তখন সবাই গানের অংশ হয়ে যায়। ওই মানুষটার ওপরই আমরা জোর দিয়েছি, যিনি ঘরের আবহাওয়া বদলে দেন। একজন মানুষের ছোট্ট একটা ভূমিকা হঠাৎ পরিবেশটা সহজ করে দেয়।’


হোক ছোট, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে পুরস্কৃত করার ভাবনা থেকেই এই ‘মেরুন জ্যাকেট’ রীতি চালু করেছেন হাথুরুসিংহে। এই স্বীকৃতি মূলত এমন কাউকে দেওয়া হয়, যাঁর পারফরম্যান্স পুরো দলকে উজ্জীবিত করে।
‘দিস ইজ মি’ গানটা যদি মন দিয়ে শোনেন, বুঝবেন, শুধু মেরুন জ্যাকেট নয়, গানের কথাগুলোও বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারে।

আরও পড়ুন