ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিদ্যাদেবীর বন্দনা

সংগীত বিভাগ মণ্ডপ সাজিয়েছে হারমোনিয়ামের রিড দিয়ে
ছবি: প্রথম আলো

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

শীতের সকালে বিদ্যাদেবী সরস্বতীর বন্দনা উপলক্ষে ঢাক–ঢোল–কাঁসর, শঙ্খ ও উলুধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠেছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

করোনা সংক্রমণের কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গত দুই বছর সরস্বতীপূজা হয়েছিল সীমিত পরিসরে। এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনে পূজা উদ্‌যাপন হয়েছে। ক্যাম্পাসের প্রতিটি বিভাগ, ইনস্টিটিউট, হল প্রশাসন আলাদাভাবে পূজা আয়োজন করে।

একেক বিভাগ তাদের পঠিত বিষয়ের সঙ্গে মিল রেখে মণ্ডপ সাজিয়েছিল। যেমন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের মণ্ডপ দেখে মনে হতে পারে টিভির পর্দা। নিচে লেখা আছে—‘এইমাত্র পাওয়া: গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে উদ্‌যাপিত হচ্ছে সরস্বতীপূজা’। সংগীত বিভাগ মণ্ডপ সাজিয়েছে হারমোনিয়ামের রিড দিয়ে। গাণিতিক বিভিন্ন সূত্র আছে অর্থনীতি বিভাগের মণ্ডপে।

ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক ভবন, কলা ও বিজ্ঞান অনুষদে আলাদাভাবে শব্দযন্ত্রের ব্যবস্থা ছিল। শিক্ষার্থীরা নেচে-গেয়ে মাতিয়ে রেখেছেন সারা দিন। পুরান ঢাকার স্থানীয় লোকজনসহ রাজধানীর নানা প্রান্তের লোকও এসেছিলেন ক্যাম্পাসের পূজা উদ্‌যাপনে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, ৩৪ বিভাগ, ২টি ইনস্টিটিউটসহ ছাত্রী হল ও ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে আলাদা আলাদা ৩৮টি মণ্ডপে এই পূজা উদ্‌যাপন করেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইমদাদুল হক পূজামণ্ডপগুলো পরিদর্শন করেন। এ সময় সঙ্গে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ কামালউদ্দীন আহমেদসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। পরে উপাচার্যের সম্মেলনকক্ষে একটি আলোচনা সভা হয়।

সভায় কামালউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশকে অস্থির করতে একটি মহল সব সময় চেষ্টা করে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পূজা উদ্‌যাপনের মাধ্যমে জানিয়ে দিতে চাই, আমরা ঐক্যবদ্ধ। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ধর্মীয় ও জাতিগত ভেদাভেদ নেই।’

উপাচার্য ইমদাদুল হক বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে দুই বছর বৃহৎ পরিসরে পূজার ব্যবস্থা করতে পারিনি। এবার উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা আয়োজনের চেষ্টা করা হয়েছে।’

নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি

বক্তব্য দিচ্ছেন উপাচার্য
ছবি: সংগৃহীত

২৬ জানুয়ারি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে (এনএসইউ) ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সরস্বতীপূজা উদ্‌যাপন হলো। দেবীর চরণে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় পূজা। এরপর ছিল মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বালন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রসাদ বিতরণ ও আলোচনা সভা।

পূজা উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য আতিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় হাইকমিশনের ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক মৃন্ময় চক্রবর্ত্তী। বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণচন্দ্র বিশ্বাস। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সহউপাচার্য ইসমাইল হোসেন ও স্টুডেন্ট অ্যাফেয়ার্স অফিসের পরিচালক গৌরগোবিন্দ গোস্বামী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে জাঁকজমকপূর্ণভাবে সরস্বতীপূজা উদ্‌যাপনের প্রশংসা করেন মৃন্ময় চক্রবর্ত্তী। তিনি সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সম্প্রীতি বজায় রাখার ওপর জোর দেন। সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য আতিকুল ইসলাম জানান, প্রতিবছরই নর্থ সাউথে জাঁকজমকপূর্ণভাবে সরস্বতীপূজার আয়োজন করা হয়। ভবিষ্যতেও এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। সন্ধ্যা আরতির মধ্য দিয়ে পূজার আয়োজনের সমাপ্তি হয়। অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন সংগীতশিল্পী সাদি মোহাম্মদ।

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

অনুষ্ঠানে অতিথিদের বক্তব্য পর্ব
ছবি: সংগৃহীত

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) উদ্‌যাপিত হয়েছে সরস্বতীপূজা। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় উপাসনালয়ে প্রতিমা স্থাপন, বাণী অর্চনা, অঞ্জলি, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রসাদ বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নোবিপ্রবির উপাচার্য মো. দিদার-উল-আলম। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে উপাচার্য বলেন, ‘শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যই হলো মানুষের কল্যাণে কাজ করা এবং ভালো মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। সনাতন ধর্মাবলম্বী সবাইকে শুভেচ্ছা।’

নোবিপ্রবি উপাসনালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি, সামাজিক বিজ্ঞান ও মানবিক অনুষদের ডিন দিব্যদ্যুতি সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সহউপাচার্য মোহাম্মদ আব্দুল বাকী।