দ্রৌপদী মুর্মুকে নিয়ে এই ১০ তথ্য জানতেন?
ইতিহাস গড়েছেন দ্রৌপদী মুর্মু। সাঁওতাল নারী হিসেবে, সবচেয়ে কম বয়সে ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়ে। ৬৪ বছর বয়সী দ্রৌপদী মুর্মু দেশটির সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে আসীন হওয়া প্রথম আদিবাসী নারী এবং দেশটির সর্বকনিষ্ঠ রাষ্ট্রপতি। মুর্মু রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার পর বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ঢোল-মাদল-বাদ্য বাজিয়ে, নেচে, গেয়ে বের হয় আনন্দমিছিল। মিষ্টি বিতরণও চলেছে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বিভিন্ন সংগঠনের ভেতর।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট প্রভাত টুডু প্রধানমন্ত্রীর কাছে ৫ দফা দাবি তুলে ধরে জানান, নবনিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রপতিকে যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানাতে হবে। সাঁওতালসহ অন্যান্য আদিবাসী প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করতে হবে। যাহোক, জেনে নেওয়া যাক ভারতের ১৫তম রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সম্পর্কে।
১. দ্রৌপদী মুর্মুর নাম কিন্তু শুরুতে দ্রৌপদী ছিল না। তাঁর নাম রাখা হয়েছিল পুটি। পরে ওই সাঁওতালি নাম বদলে স্কুলশিক্ষক স্কুলে নাম নিবন্ধন করার সময় লিখে দেন দ্রৌপদী। সেই থেকে পুটি হয়ে গেলেন দ্রৌপদী, আজকের ভারতের রাষ্ট্রপতি।
২. দ্রৌপদীর পারিবারিক পদবি ছিল টুডু। স্কুল-কলেজেও তিনি এই পদবি ব্যবহার করতেন। বিয়ের পর পদবি বদলে রাখেন মুর্মু।
৩. দ্রৌপদী মুর্মুর জন্মভূমিতে এই জুন মাসেও বিদ্যুতের আলো ছিল না। দ্রৌপদী রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হওয়ার পর দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস প্রতিবেদন করে, ‘রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর গ্রামে বিদ্যুৎ নেই’। খবরটি সাড়া ফেলে। রাজ্য সরকার দ্রৌপদীর জয়ের সম্ভাবনা দেখে তড়িঘড়ি করে বিদ্যুৎ আনে তাঁর গ্রামে। এর আগে মুঠোফোনে চার্জ দিতেও গ্রামের বাসিন্দাদের পাশের গ্রামে যেতে হতো।
৪. তীব্র দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে কেটেছে দ্রৌপদীর ছেলেবেলা। সে কথা অকপটে স্বীকারও করেতেও ভোলেননা তিনি। রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর প্রথম ভাষণেই বলেন, ‘আমার রাষ্ট্রপতি হওয়া ভারতের প্রত্যেক দরিদ্র মানুষের জয়। আমার রাষ্ট্রপতি হওয়া প্রমাণ করে, ভারতের দরিদ্র মানুষেরা শুধু স্বপ্নই দেখেন না, সেই স্বপ্ন পূরণ করতেও জানে।’
৫. দ্রৌপদী মুর্মুই ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি, যাঁর জন্ম ভারতের স্বাধীনতার পর। দ্রৌপদী রাজনীতিতেও আসেন দেরিতে। দেরিতে এসেও ঠিকই বাজিমাত করেছেন তিনি। ৪৯ বছর বয়সে সক্রিয় রাজনীতিতে নেমে ৬৪ বছর বয়েসেই রাষ্ট্রপতি হন মুর্মু।
৬. সবুজ-লাল পাড়ের সাদা রঙের যে শাড়িটি পরে দ্রৌপদী মুর্মু রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন, সেটি একটি সাদামাটা তাঁতে বোনা সাঁওতালি শাড়ি। একাধিক ভারতীয় গণমাধ্যম বলছে, সেই শাড়ির দাম হাজার রুপির বেশি হবে না। এই শাড়ি পূর্ব ভারতের সুকরি টুডু সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত। এই সাঁওতালি শাড়ির এক প্রান্তে কিছু ডোরাকাটা কাজ থাকে। কিছু বিশেষ অনুষ্ঠানে সাঁওতালি নারীরা পরেন এই শাড়ি। সবসময়ই খুবই সাদামাটা সাজপোশাকে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন দ্রৌপদী।
৭. ভারতের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৬৪ শতাংশ ভোট পেয়েছেন দ্রৌপদী। উত্তর প্রদেশ ও মহারাষ্ট্র থেকে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ভোট পেয়েছেন দ্রৌপদী। আশ্চর্যজনকভাবে বিরোধী দলের ১৭ জন এমপি এবং ১২৫ জন এমএলএ বা বিধায়কের ভোট পেয়েছেন তিনি।
৮. ১৯৫৮ সালের ২০ জুন ভারতের ওডিশার ময়ুরভঞ্জ জেলার উপারবেদা গ্রামে জন্ম নেন দ্রৌপদী মুর্মু। স্থানীয় স্কুলেই প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক পড়ালেখা করেন। পরে রাম দেবী মহিলা কলেজ থেকে লেখাপড়ার পাট চুকান। ওডিশার সচিবালয়ে কেরানি হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। তার কিছুদিন পরই বিয়ে করেন ব্যাংক কর্মকর্তা শ্যামচরণ মুর্মুকে।
৯. রাজনৈতিকভাবে সফল দ্রৌপদীর ব্যক্তিগত জীবনে বেদনার অন্ত নেই। স্বামী শ্যামচরণ মুর্মু ২০১৪ সালে মারা যান। দ্রৌপদী ও শ্যামচরণ দম্পতির দুটি ছেলে জন্মেছিল, তারা উভয়েই খুব ছোটবেলায় মারা যায়। দ্রৌপদী মুর্মুর একটি মেয়ে আছে, নাম ইতিশ্রী মুর্মু। একটি ব্যাংকে কর্মরত আছেন তিনি।
১০. রাজ্য রাজনীতিতে আসার আগে স্কুলশিক্ষক হিসেবে পেশাজীবন শুরু করেছিলেন মুর্মু। ১৯৯৭ সালে ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগ দেন। এরপর প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিজেপির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) জোটের প্রার্থী ছিলেন। ২৫ জুলাই ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার আগে তিনি ঝাড়খন্ড রাজ্যের গভর্নর ছিলেন। দ্রৌপদী মুর্মু রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইট করেছেন, ‘ভারত রচনা করে ইতিহাস (ইন্ডিয়া স্ক্রিপ্টস হিস্টোরি)’।