বিশ্বকাপের ট্রফি ধরে বিপদে পড়া সল্ট বে আগেও যেসব কারণে বিতর্কিত ছিলেন

কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালের পর মাঠে নেমে এভাবে খেলোয়াড়দের সঙ্গে
ছবি: সল্ট বে–এর ইনস্টাগ্রাম থেকে নেওয়া

মাংসের ‘স্টেক’ বানিয়ে রীতিমতো তারকা বনে গেছেন সল্ট বে। যার আসল নাম নুসরেত গোকচে। তুরস্কের এই বিখ্যাত শেফ একসময় ছিলেন মাংসের দোকানের কসাই। আর এখন পৃথিবীর বিভিন্ন শহরে আছে তাঁর স্টেক হাউস। ম্যারাডোনা, মেসি, ডেভিড বেকহাম থেকে কিলিয়ান এমবাপ্পের মতো বড় তারকা ফুটবলাররা যেমন তাঁর রেস্তোরাঁয় এসেছেন, তেমনি এসেছেন হলিউড-বলিউডের তারকা অভিনেতা আর গায়কেরাও।

তবে সম্প্রতি এই শেফ আলোচনায় ভিন্ন কারণে। কাতার বিশ্বকাপে নিয়ম ভেঙে। ফাইনালে মাঠে নেমে বিশ্বকাপ ট্রফি ছোঁয়ার কারণে এবার তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। সাধারণত ফিফা বিশ্বকাপ ট্রফি সবাই ছুঁতে পারেন না। বিশ্বকাপজয়ী ফুটবলার ও রাষ্ট্রপ্রধানেরা এই শিরোপা স্পর্শ করার নিয়ম আছে। শিরোপা জয়ের পর উদ্‌যাপনের জন্য যে রেপ্লিকা দেওয়া হয়, তা ছুঁয়ে দেখার সংখ্যাও সীমিত করে দেওয়া হয়। তবে ফিফার এমন নিয়মের তোয়াক্কা করেননি সল্ট বে। বিশ্বকাপ ফাইনালের পর মাঠে ঢুকে তিনি আর্জেন্টিনা দলের ফুটবলারদের কাছ থেকে ট্রফি চেয়ে নিয়েছেন। নানা ভঙ্গিতে ট্রফির সঙ্গে, খেলোয়াড়দের সঙ্গে ছবি তুলেছেন, করেছেন সেসবের ভিডিও। আর তাই দেখে যারপরনাই বিরক্ত ফুটবল-সমর্থকেরা। সমালোচনার পর এবার ফিফা তাই বিষয়টি নিয়ে তদন্তের ঘোষণা দিয়েছে।

তবে এই শেফ যে এবারই প্রথম বিতর্কিত কাণ্ড ঘটালেন, তা নয়। এর আগেও তিনি নানা কারণে হয়েছেন সমালোচিত।

সল্ট বে মহিষের খামারে সেই ছবি

২০১৯ সালে চারজন সাবেক কর্মী মামলা করেন সল্ট বের বিরুদ্ধে। তাঁদের অভিযোগ, সল্ট বে সেসব কর্মীর বকশিশের ভাগ নিতেন। বে অবশ্য তা অস্বীকার করেন। তাঁর দাবি, চাকরিচ্যুত হওয়ার কারণে কর্মীরা তাঁর নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে। তবে এ মামলার নিষ্পত্তি করতে সল্ট বেকে গুনতে হয় ২ লাখ ৩০ হাজার ডলার।

এ ঘটনার কিছুদিন পরই আবার সমালোচনার মুখে পড়েন সল্ট বে। এবারের সমালোচনা একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করার কারণে। যেখানে দেখা যায়, একটি খামারে খুবই অমানবিকভাবে আবদ্ধ অনেকগুলো মহিষ। তার মাঝে দাঁড়িয়ে নিজের একটি পোস্ট করেন বে। এই ছবি পোস্ট করার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তারকা, সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষ (যাঁরা তাঁকে ফলো করেন) এই ছবির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন।

স্বর্ণের মোড়ানো স্টেক

কিছুদিন পর আবার দেখা দেয় নতুন বিতর্ক। হঠাৎ নিজের ইনস্টাগ্রামে একটি ভিডিও পোস্ট করেন সল্ট বে। যেখানে বে ২৪ ক্যারেট স্বর্ণ দিয়ে স্টেক বানান। তাঁর সেই ‘স্টেক উইথ গোল্ড ডাস্ট’ নতুন করে তাঁকে বিতর্কের মুখে ফেলে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে যে ভিডিও কয়েক মিলিয়ন ভিউ পায়।

নুসরেত গোকচের জন্ম তুরস্কের আনাতোলিয়ার একটি দরিদ্র পরিবারে। বাবা কাজ করতেন খনিশ্রমিক হিসেবে। ছোটবেলাতেই নুসরেত যোগ দেন একটি কসাইখানার কাজে। এখানেই মাংস কাটাকাটির কলাকৌশল খুব ভালোভাবে রপ্ত করেন তিনি। এরপর আমেরিকা ও আর্জেন্টিনার রেস্তোরাঁয় কাজের অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে ২০১০ সালে ইস্তাম্বুলে চালু করেন নিজের রেস্তোরাঁ। চার বছর পর শাখা খোলেন দুবাইতে। এরপর বছর বছর দেশ থেকে দেশে শুধু নিজের রেস্তোরাঁর শাখা খুলেছেন তিনি।

বিতর্ক আর সল্ট বে রীতিমতো একে অপরের সমার্থক হয়ে উঠেছে। তবে এবার যেহেতু তিনি ফিফার তদন্তের মুখোমুখি, তাই বে’র ভাগ্যে কী অপেক্ষা করছে, সেটা সময়ই বলে দেবে। আপাতত সেদিকেই তাকিয়ে ফুটবল-ভক্ত থেকে বে-ভক্তরা।