বেতন নয়, আপনাকে ধনী করবে বিশেষ এই পদ্ধতি

আজকের দিনে শুধু চাকরির ওপর নির্ভর করে জীবনে এগোনো ক্রমেই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। বেতন মানে হলো নিরাপদভাবে টিকে থাকার ব্যবস্থা, ধনী হওয়ার নিশ্চয়তা নয়। বরং সঠিকভাবে সময় ও দক্ষতা ব্যবহার করলে চাকরির পাশাপাশি এমন একটি ‘সিস্টেম’ তৈরি করা সম্ভব, যা নীরবে আপনার জন্য কাজ করবে। সপ্তাহে মাত্র কয়েক ঘণ্টা দিলেই বাড়তি আয়ের পথ খুলে যাবে, আর সেখান থেকেই ধীরে ধীরে তৈরি হবে আপনার আর্থিক স্বাধীনতা।

শুধু চাকরির ওপর নির্ভর করে জীবনে এগোনো ক্রমেই কঠিন হয়ে যাচ্ছেছবি: সুমন ইউসুফ

আমরা প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করি, ইনক্রিমেন্টের আশায় অতিরিক্ত দায়িত্ব গ্রহণ করি, তবু অনেকেই খরচ ও আয়ের ভারসাম্য মেলাতে পারছেন না। এভাবে আমরা যেন এক অবিরাম রেসে আটকে থাকি, যেখানে আর্থিক স্বাধীনতার দরজা কখনো খোলে না। তবে এর সমাধানে চাকরি ছেড়ে দেওয়ার দরকার নেই, বিশাল মূলধনেরও প্রয়োজন নেই, এমনকি ২৪ ঘণ্টা কাজও করতে হবে না।

কেন বেতন দিয়ে ধনী হওয়া যায় না

শুধু বেতনের ওপর নির্ভর করে ধনী হওয়া প্রায় অসম্ভব। এর কয়েকটি কারণ হলো—

লিনিয়ার আয়

বেতন মানে সময় ও শ্রমের সরাসরি বিনিময়। আপনি যত কাজ করবেন, ততই আয়। কাজ থেমে গেলে আয়ও থেমে যায়।

লাইফস্টাইল ক্রিপ

খরচ সব সময় আয়ের সঙ্গে বাড়ে, বিশেষ করে শহুরে জীবনে। ইনক্রিমেন্ট পেলেও বাজারদরের ঊর্ধ্বগতি সামলানো মুশকিল।

আরও পড়ুন

পদোন্নতির বাস্তবতা

পদোন্নতির সঙ্গে সামান্য বেতন বাড়ে ঠিকই, কিন্তু দায়িত্ব ও মানসিক চাপ বহুগুণ বেড়ে যায়। অর্থাৎ কাজের বোঝা বাড়ে, কিন্তু আর্থিক স্বাধীনতা দূরেই থেকে যায়।

আয় বনাম নিরাপত্তা

ঢাকায় একজন কর্মকর্তা লাখ লাখ টাকা আয় করলেও যদি আয়ের একমাত্র উৎস বেতন হয়, তাহলে তাঁর আর্থিক নিরাপত্তা ঝুঁকিপূর্ণ। তুলনামূলকভাবে গ্রামের সাধারণ জীবনযাপনকারীরা বেশি নিশ্চিন্ত থাকেন। কারণ, তাঁর খরচ কম এবং আয়ের বিকল্প উৎসও থাকে। শুধু বেতনের ওপর নির্ভর করলে আপনি শুধু নিরাপদে টিকে থাকবেন, ধনী হবেন না—এটাই চরম সত্য।

ধনী হওয়ার আসল পথ

পদোন্নতির সঙ্গে সামান্য বেতন বাড়ে ঠিকই, কিন্তু দায়িত্ব ও মানসিক চাপ বহুগুণ বেড়ে যায়
ছবি: প্রথম আলো
  • আর্থিকভাবে স্বাধীন মানুষেরা কেবল পরিশ্রমে নয়, লিভারেজ বা উদ্দেশ্য সাধনের উপায়ে বিশ্বাসী। তাঁদের মূল ভাবনা—‘একবার কিছু তৈরি করলে এটি বহুবার আয় করবে।’

  • আজকাল সবচেয়ে শক্তিশালী লিভারেজ হলো ‘মিডিয়া ও কোড’। কিন্তু এর মানে এই নয় যে আপনাকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বা বড় ইনফ্লুয়েন্সার হতে হবে। মূল বিষয় হলো এমন কিছু তৈরি করা, যা একবার বানালে বারবার বিক্রি বা ব্যবহার করা যাবে।

  • এ ধরনের সিস্টেম ধীরে ধীরে বড় হয়ে আপনাকে সময়ের সঙ্গে আর্থিক স্বাধীনতা এনে দিতে পারে।

আরও পড়ুন

কীভাবে ধাপে ধাপে গড়বেন নিজের ‘সিস্টেম’

সপ্তাহে একবার লিখুন বা ভিডিও/ব্লগ তৈরি করুন
ছবি: ফ্রিপিক

ধাপ ১: সপ্তাহে একবার কনটেন্ট প্রকাশ করুন

  • এমন একটি বিষয় বেছে নিন, যেটিতে আপনার অভিজ্ঞতা আছে। যেমন লেখালেখি, ডিজাইন, ভিডিও, কোডিং, মার্কেটিং, ডেটা অ্যানালাইসিস ইত্যাদি।

  • বড় অডিয়েন্সের দরকার নেই।

  • সপ্তাহে একবার লিখুন বা ভিডিও/ব্লগ তৈরি করুন।

  • ঘরে বসে পডকাস্ট শুরু করার টিপস দিতে পারেন।

  • চাকরির পাশাপাশি ‘সাইড হাসল’ শুরু করার অভিজ্ঞতাও নিয়মিত প্রকাশ করতে পারেন।

ধাপ ২: ছোট আকারে শুরু করুন

  • বড় কোর্স বা অনেক ফলোয়ার না থাকলেও ছোট কিন্তু কার্যকর পণ্য যথেষ্ট। যেমন অনলাইনে ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে কাজ করা কিংবা ব্লগ/ইউটিউব চ্যানেল চালানো।

  • ১০০-৫০০ টাকার মধ্যে অনলাইন কোর্স বা ই-বুক তৈরি করতে পারেন।

  • প্রথমে ১০ জন গ্রাহক, তারপর ২০, তারপর ৫০। নিয়মিত চালিয়ে গেলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ফলাফল দেখা যাবে।

আরও পড়ুন
ই-মেইল ব্যবহার করে পণ্য বিপণন করতে পারেন
ছবি: আনস্প্ল্যাশ

ধাপ ৩: কাজ করা প্রোডাক্ট অটোমেট ও বড় করুন

  • জনপ্রিয় প্রোডাক্টগুলো অটোমেট করুন।

  • ই-মেইল ব্যবহার করে পণ্য বিপণন করতে পারেন।

  • ব্লগ পোস্টকে ল্যান্ডিং পেজে রূপান্তর করুন, যাতে পাঠক পণ্য কিনতে বা সাবস্ক্রাইব করতে পারে।

  • পুরোনো কনটেন্ট থেকে নতুন কিছু তৈরি করুন।

  • ৬-১২ মাসে এটি ছোট হলেও শক্তিশালী ব্যবসায় পরিণত হবে।

শুরুর সময় মনে রাখবেন

  • প্রথমে ব্র্যান্ড বা ফলোয়ার না থাকাটাই স্বাভাবিক।

  • প্রথমে ১০ জন পাঠকের জন্য লিখুন, ধীরে ধীরে ৫০, তারপর ৫০০।

  • সাপ্তাহিক ছুটির দিন বা অবসর সময় কাজে লাগান।

  • পুরোনো কনটেন্ট পুনরায় ব্যবহার করুন, নতুন করে সব বানানোর প্রয়োজন নেই।

  • এটাকে ধীরে ধীরে, পদ্ধতিগত এক্সপেরিমেন্ট হিসেবে দেখুন।

কেন এটি জরুরি

বাংলাদেশে চাকরি মানেই অনিশ্চয়তা—হঠাৎ ছাঁটাই, মুদ্রাস্ফীতি, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা খরচ—সব মিলিয়ে কেবল বেতনের ওপর নির্ভর করে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ।

একটি ছোট ‘সিস্টেম’ তৈরি করলে চাকরি হারালে আতঙ্কিত হতে হবে না। সঞ্চয়ের পাশাপাশি আয়ও বাড়বে। এটাই হতে পারে আপনার ধনী হওয়ার সহজ সিঁড়ি।

সূত্র: মিডিয়াম

আরও পড়ুন