সনি আপু আমাদের এক বন্ধুর বড় বোন। তাই আমাদেরও বোন। আপুর সৌন্দর্য নিয়ে নানা কানাঘুষা আছে। তবে এলাকায় কেউ তাকানো ছাড়া সামনাসামনি সৌন্দর্যের তারিফ করতে পারে না। কারণ, মানসম্মান খোয়ানোর ভয়! আমাদের দলটা আপুকে চোখে চোখে রাাখি। তাই আপুও খুব ভাব নিয়ে চলে।
বান্ধবীদের কাছে সনি আপু মধ্যমণি। তাঁরা দল বেঁধে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য কোচিং করতে যায় এক স্যারের বাসায়। সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত কোচিং। এরপর বান্ধবীদের সঙ্গে গল্পটল্প করে বাসায় ফেরে। কিছুদিন থেকে সনি আপুর এক বান্ধবী লক্ষ করছে, একটা ছেলে স্যারের বাসার উল্টো পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। একদিন পড়া শেষ করে সবাই যখন চলে যায়, তারও ২০ মিনিট পর সে আবার স্যারের বাসার সামনে আসে। দেখে, ছেলেটা নেই। পরদিন দেখে ছেলেটা এসেছে এবং সনি আপুর দিকে তাকিয়ে আছে। আপুর বান্ধবী বুঝতে পারে, ছেলেটা শুধু তাদের পড়ার সময়ই আসে।
সনি আপু শুনে বেশ বিরক্ত হয়। যেদিন তার সঙ্গে ছেলেটা কথা বলতে আসবে, সেদিনই আমাদের ডেকে উচিত শিক্ষা দেবে। কিন্তু সেই মুহূর্ত আর আসে না। কারণ, ছেলেটা রাস্তার ওই পাশেই দাঁড়িয়ে থাকে। কখনো কথা বলতেও আসে না, বিরক্তও করে না।
কোচিংয়ের শেষ দিন। সামনেই ভর্তি পরীক্ষা। স্যারের বাসা থেকে বের হয় সনি আপুরা। তার বান্ধবীরা বলে, ‘তোর রোমিও কি জানে যে আজকেই শেষ ক্লাস?’ সনি আপুর প্রতিক্রিয়া, ‘না জানলেই কী?’ বান্ধবীরা দুষ্টুমি করে ছেলেটাকে ডাকে। হকচকিয়ে যায় ছেলেটা। দুই মাস পর আজ কেন তাঁকে ডাকাল, বুঝে উঠতে পারে না বোধ হয়! দ্বিধা নিয়ে সামনে আসে ভদ্রলোক। সনি আপুর এক বান্ধবী মুখ শক্ত করে জিজ্ঞাসা করে, ‘এখানে প্রতিদিন দাঁড়িয়ে থাকা কেন?’
ছেলেটার উত্তর, ‘এমনিই, একজনকে দেখতে আসি।’
আপুর আরেক বান্ধবী, ‘তাই নাকি? খুব সাহস দেখছি। বাসা কোথায়?’
-মাদারীপুর।
: কিন্তু ফরিদপুরে কোথায় থাকা হয়?
-আমি ফরিদপুরে থাকি না, আমার বাসা মাদারীপুর।
সনি আপুর মতো অন্যরাও মাদারীপুর থেকে আসে শুনে আশ্চর্য হয়ে যায়। সনি আপু মুখ খুলে, ‘প্রতিদিন মাদারীপুর থেকে এখানে আসেন?’
-হ্যাঁ!
: তারপর?
-মাদারীপুরে ফিরে যাই!
: মানে, আপনি প্রতিদিন মাদারীপুর থেকে ফরিদপুর আসেন, তারপর ফিরে যান?
ছেলেটা মাথা নিচু করে বলেন, হ্যাঁ।
সনি আপু তার ছোট ভাইদের কল করতে ভুলে গেল। প্রতিদিন সকালে দুই ঘণ্টা বাসে করে এসে আবার একই সময় নিয়ে যিনি ফিরে যান, তাঁর জন্য ছোট ভাইদের ডেকে আনা অন্যায়। আপুর বান্ধবীরাও ঘটনার আকস্মিকতায় থতমত খেয়ে যায়। কারও মুখে কথা নেই। নিঃশব্দে যে যার গন্তব্যে চলে যায়।
বছর কয়েক পর পারিবারিকভাবে আপুর সঙ্গে বিয়ে হয় মাদারীপুর নিবাসী ছেলেটার। তিনি এখন আমাদের ‘দুলাভাই’!