অনলাইনে আম বেচাকেনা

বাড়িতে বসেই ক্রেতারা কিনছেন আমমডেল: কৃতিকা, ছবি:সুমন ইউসুফ

বাড়িতে বসেই অনলাইনে আম কিনতে পারছেন ক্রেতারা। আমের রাজ্য থেকে আম চলে আসছে বাড়ির দোড়গোঁড়ায়, বাড়তি কোনো ঝামেলা ছাড়াই।

ঢাকাসহ সারা দেশে পুরোদমে আম বেচাকেনা শুরু হয়েছে। শুধু হাটবাজারেই নয়, অনলাইনে আম কেনা এখন বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে করোনাকালে এ ধারা যথেষ্ট বেগবান এখন। আম বেচাকেনার অনলাইনভিত্তিক কিছু উদ্যোগের খোঁজ থাকছে এখানে।

স্বরে আ–তে আম

স্বরে আ–তে আম (facebook.com/স্বরে-আ-তে-আম-103730325223298) প্রতিষ্ঠানটি চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিজস্ব বাগান থেকে আম সংগ্রহ করে সরাসরি ক্রেতার কাছে পৌঁছে দেয়। স্বরে আ–তে আমের উদ্যোক্তা শুভ্র অণী বলেন, ‘আম আঁকশির মাধ্যমে বা সরাসরি গাছে উঠে হাত দিয়ে সংগ্রহ করা হয়। আমের পুষ্টিগুণ রক্ষার্থে আমরা তাজা আম সরবরাহ করে থাকি। আম দুই ইঞ্চি বোঁটা রেখে সংগ্রহ করা হয়। ফলে আমের কষ লেগে পচে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। এই পেজের বিক্রির তালিকায় আছে গোপালভোগ, ক্ষীরশাপাতি, ল্যাংড়া ও আম্রপালি আম। পাশাপাশি ক্রেতার চাহিদা অনুসারে যেকোনো আম ও সারা বছর বারোমাসি জাতের আমগুলো সরবরাহ করে থাকি।’

প্রতিষ্ঠানটিতে মোট খরচের ৫০ শতাংশ টাকা অগ্রিম পরিশোধ করে আমের ফরমাশ দিতে হয়। ক্রেতার ফরমাশ পাওয়ার পরদিনই বাগান থেকে তাজা আম সংগ্রহ করা হয়। ঢাকার বাইরে পৌঁছাতে সর্বোচ্চ দুই-তিন দিন লাগে। বাড়তি কোনো খরচ নেওয়া হয় না।

৮৫ টাকা প্রতি কেজি খরচে আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জের জিআই পণ্য ক্ষীরশাপাতি আম সারা দেশে সরবরাহ করে থাকে।

ন্যাচারাল ফুড পার্ক

সব ধরনের দেশি ফল বিক্রি করে ন্যাচারাল ফুড পার্ক (facebook.com/natural.foodpark)। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী ত্রিদিব বর্মণ জানান, যে এলাকার যে পণ্যটি ভালো হয়, চেষ্টা থাকে সেটাই ভোক্তাকে সরবরাহ করার। আমের মৌসুমে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলের হিমসাগর, ল্যাংড়া, ফজলি। নওগাঁর নাকফজলি, দিনাজপুর এবং ঠাকুরগাঁওয়ের আম্রপালি ও সূর্যপুরী। হাঁড়িভাঙার জন্মস্থান রংপুরের বদরগঞ্জের পদাগঞ্জ, সে জায়গাটিই ঠিক রাখা হয়। চেনা জাতের আম ছাড়াও পুরো আম মৌসুমে ২৫-৩০ রকমের আম ভোক্তাদের জন্য সরবরাহ করা হয়। ঢাকায় ৬ থেকে ১৪ ঘণ্টায় সরবরাহ করা হয়। ঢাকার বাইরে সময় লাগবে ২৪ ঘণ্টা।

প্রজেক্ট প্রজন্ম আম

২০০১ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের গড়া প্রতিষ্ঠান প্রজেক্ট প্রজন্ম আম (www.facebook.com/প্রজন্ম-আম-108715418056236)। বন্ধু ও পরিবারের জন্য সরাসরি রাজশাহীর আমবাগান থেকে আম সংগ্রহ ও বিতরণের উদ্দেশ্যে এই প্রকল্প শুরু হলেও এখন নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে অন্যদের মাঝেও আম বিক্রি করছে প্রতিষ্ঠানটি। মূলত রাজশাহীর বেশ কয়েকটি বাগানের মালিকের সঙ্গে চুক্তি করে প্রজন্ম আম সরবরাহ করা হচ্ছে। রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী গোপালভোগ দিয়েই শুরু হয় প্রজন্ম আমের যাত্রা। এরপর হিমসাগর, আম্রপালি, হাঁড়িভাঙা, ল্যাংড়া, আশ্বিনা ও ফজলির মতো জনপ্রিয় জাতের আম আসবে নির্দিষ্ট সময় পরপর।

রিস্টার্ট বাটন

ফেসবুক পেজ রিস্টার্ট বাটন অনলাইনে আম বিক্রি করছে। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী বাহারুল করিম জানান, রাজশাহীর বানেশ্বর থেকে আম সংগ্রহ করা হয়। তিনি জানান, গোপালভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া, আম্রপালিসহ আরও অনেক জাতের আম এখানে পাওয়া যাবে। প্রতিষ্ঠানটির ফেসবুক পেজে (facebook.com/restartbutton2020) আমের বিবরণ, দাম, কবে সেটা গাছ থেকে ভাঙা হবে, কবে সেটা সরবরাহ করা হবে, বিস্তারিত দেওয়া আছে। ক্রেতারা পেজে দেওয়া তথ্যের মাধ্যমে ফরমাশ দিতে পারবে।

বাহারুল করিম বলেন, ‘বাগান থেকে একটা তারিখ দেওয়া হয়, যেদিন আম ভাঙা হবে। আমরাও সেই তারিখ অনুযায়ী ক্রেতাদের কাছ থেকে ফরমাশ নিই। যেদিন আম ভাঙা হয়, সেদিনই পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। পরদিন সেটা ঢাকা পৌঁছালে নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে ঢাকার বাইরের শাখাগুলোতে এক দিনের বেশি লাগে কুরিয়ারে যেতে। আমের দাম নির্ভর করছে আপনি কোন গ্রেডের আম নেবেন সেটার ওপর।’

আহজাব ফুডস

দুই বন্ধু মিলে আহজাব ফুডসের (facebook.com/ahzabfoods) শুরু। প্রতিষ্ঠানটি আম সংগ্রহ করে মেহেরপুর ও রাজশাহী থেকে। পাশাপাশি সাতক্ষীরা থেকেও চাহিদা অনুযায়ী আম সংগ্রহ করা হয়। রাসায়নিক ও ফরমালিনমুক্ত আম বিক্রিই প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য। আম পাড়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ক্রেতাকে আম পৌঁছে দেওয়া হয়। হিমসাগর, ক্ষীরশাপাতি, ল্যাংড়া, আম্রপালিসহ প্রায় সব ধরনের আমই বিক্রি করে। ফেসবুকে, হোয়াটসঅ্যাপে এবং সরাসরি ফোনের মধ্যমে ফরমাশ দেওয়া যায়। সারা দেশে আম সরবরাহ করা হয়।

ফলান্ন

ছয় বন্ধু মিলে শুরু করেন ফলান্ন। রাজশাহীর বাগান থেকে সরাসরি আম নিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দেওয়া হয়। বাগানগুলোতে আম উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তাদের কাছে সরবরাহ করা পর্যন্ত কোনো ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না। সংগৃহীত আম কুরিয়ারের মাধ্যমে গ্রাহকদের ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া হয়। বর্তমানে ফলান্ন গোপালভোগ, হিমসাগর, ল্যাংড়া, আম্রপালি ও ফজলি আম বিক্রি করছে। রাজশাহীর পাইকারি বাজারের ওপর ভিত্তি করে আমের দাম নির্ধারণ করা হয়। ফলান্নের ফেসবুক পেজের (facebook.com/TasteoftheOrigin/) মাধ্যমেই আমের ফরমাশ করার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ফেসবুক পেজে মুঠোফোন নম্বর ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দেওয়া আছে। কেউ চাইলে সরাসরি ফোন ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ফলের জন্য ফরমাশ দিতে পারবেন।

ই-কামাল

ঘরে বসে আম কেনার সুবিধা দিচ্ছে কামাল অ্যাগ্রো ফার্মসের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-কামাল। এসব আম তাদের নিজস্ব বাগান থেকে সংগ্রহ করা। পর্যায়ক্রমে তাদের এখানে পাওয়া যাবে গোপালভোগ, রানিপছন্দ, কলমি, হিমসাগর, ল্যাংড়া, আম্রপালি, নাগফজলি, লক্ষ্মণভোগ, কালীভোগ, কহিতুর, ভোগলা, হাঁড়িভাঙা, মিস্রিভোগ, সূর্যপুরী, সুরমা ফজলি, ফজলি, বারি-৪, ঝিনুক (আশ্বিনা), কাটিমন, বারোমাসিসহ বিভিন্ন প্রজাতির আম। কামাল অ্যাগ্রো ফার্মের প্রধান নির্বাহী গোলাম ছরোয়ার বলেন, ‘দেড় যুগের বেশি সময় ধরে আমের জগতে আমরা রয়েছি। চেষ্টা করছি দেশের মানুষকে বিষমুক্ত আম খাওয়াতে। প্রতিবছরই আমরা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিষমুক্ত আমের মেলা করে থাকি। তবে করোনার কারণে আমরা অনলাইনে কেনাকাটাকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি। পাওয়া যাবে ই–কামালের ফেসবুক পেজে (facebook.com/ekamal.com.bd)।’

সদাই

সদাই সাতক্ষীরা, মেহেরপুর, নওগাঁ, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও দিনাজপুর থেকে আম সংগ্রহ করে। প্রতিষ্ঠানটি আমচাষির কাছ থেকে আম সংগ্রহ করে। আম পরিপক্ব হওয়ার আগেই ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজের মাধ্যমে প্রি অর্ডারের ব্যবস্থা রয়েছে। সরকারি নিয়ম মেনে আম পরিপক্ব হলে আম সংগ্রহ করে ঢাকাতে এনে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয় অথবা সরাসরি কুরিয়ার করে দেওয়া হয় (ঢাকার বাইরে)। গোপালভোগ, রানিপছন্দ, হিমসাগর, ল্যাংড়া, আম্রপালি, আশ্বিনা, ফজলি, নাক-ফজলি, হাঁড়িভাঙা ইত্যাদি আম সদাইয়ে পাওয়া যায়। ফেসবুক পেজে (facebook.com/sodaistore) অর্ডার করা যাবে।

চাহিদা জানানো ও দাম পরিশোধ

ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপভিত্তিক আরও অনেক উদ্যোগ রয়েছে, যেগুলো থেকে এখন আম কেনা যায়। আম পেলে দাম পরিশোধ (ক্যাশ অন ডেলিভারি) পদ্ধতিতে আম কেনা যায়, আবার কোনো কোনো উদ্যোগের ক্ষেত্রে অগ্রিম কিছু টাকা পাঠিয়ে দিতে হয়।