অনুভূতিগুলোই গান হয়ে যায়

যুক্তরাষ্ট্রের গায়িকা টেইলর সুইফট। প্রতিবছরই গানের ভুবনের নামী পুরস্কারগুলো জুটবে তাঁর ঝুলিতে—এ যেন অবধারিত। টাইম সাময়িকীর করা তালিকা অনুযায়ী, খ্যাতি আর আয়ের বিচারে ২০১৬ সালের সবচেয়ে সফল তারকা তিনি। কেমন তাঁর মনোজগৎ?

টেইলর সুইফট
টেইলর সুইফট


ছোটবেলায় রূপকথার গল্প পড়তাম। সে গল্পে রাজকন্যার সঙ্গে রাজপুত্রের দেখা হতো। রাজপুত্র রাজকন্যার জন্য সব সুখ এনে দিত। রূপকথার গল্পে খারাপ মানুষটাকে খুব দ্রুত শনাক্ত করা যায়। তার পেছনে একটা কালো রঙের ঝালর থাকে, তাই সহজেই বুঝে নেওয়া যায়, এই চরিত্রটা মন্দ। বড় হয়ে বুঝলাম, রাজপুত্রের খোঁজ পাওয়া এত সহজ নয়। সত্যিকার পৃথিবীতে মন্দ লোকেরাও কাঁধে কালো ঝালর ঝুলিয়ে আসে না। খারাপ মানুষগুলো হয় আমুদে, হাসিখুশি, পরিপাটি। তাই কোন চরিত্রটা ভালো আর কোনটা মন্দ, সেটা বোঝা খুব কঠিন। যদিও মন্দ লোকদের প্রতি আমার আচরণটা খুব সহজ। যদি আমি আপনাকে পছন্দ না করি, আমি আপনাকে নিয়ে একটা গান লিখব। এবং অবশ্যই সেই গানটা আপনার পছন্দ হবে না।
১২ বছর বয়স থেকে আমার গান লেখার শুরু। জীবনের ভীষণ প্রিয় সময় সেটা। মনে হতো গান লেখা ছাড়া আমার বুঝি আর কিছু করার নেই। ভীষণ আবেগের একটা জায়গা ছিল এই গান। মনে হতো গানের মাঝেই আত্মতৃপ্তি, ভালো লাগা, মনের কথাগুলো বলতে পারার আনন্দ। স্কুলে আমার তেমন কোনো বন্ধু ছিল না। কেউ এসে গল্প করত না। কিন্তু এসবে আমার কোনো আফসোস ছিল না। কারণ, মনে মনে আমি নিজেকে বলতাম, ‘এটা কোনো ব্যাপার নয়। বাড়ি ফিরে তুমি বরং এই অভিজ্ঞতা নিয়েই একটা গান লিখে ফেলতে পারো।’ সারাটা জীবনই আমি এই মন্ত্র জপে গেছি। যতবার একাকিত্ব, কষ্ট, না পাওয়া ঘিরে ধরেছে; নিজেকে এই ভেবে সান্ত্বনা দিয়েছি, ‘বাহ্‌, এই অনুভূতিটা নিয়ে তো একটা চমৎকার গান হতে পারে!’
গান লেখার ভূত কখন কীভাবে যে মাথায় চেপে বসে, আমি নিজেও টের পাই না। হয়তো কোনো বন্ধুর সঙ্গে খুব জরুরি কোনো আলাপ করছি। কিংবা ভক্তদের ভিড়ে দাঁড়িয়ে আছি। হুট করে কিছু গানের কথা মাথায় ঘুরতে থাকে। দ্রুত গানটা তৈরি করতে না পারলে ভুলে যাব, এই তাড়না আমাকে ভোগায়। ব্যাপারটা কি অদ্ভুত না? ধরুন খুব সাধারণ একটা দিনে খুব সাধারণ কিছু কথা আপনার মাথায় এল। কথাগুলো দিয়ে যদি সুন্দর একটা গান তৈরি করা যায়, তাহলে সাধারণ দিনটাই অসাধারণ মনে হবে। দিনটা বদলে যাবে। কিংবা কে জানে, এক গানে জীবনটাও বদলে যেতে পারে!
এ রকম অভিজ্ঞতা আমার জীবনে বেশ কয়েকবার এসেছে। বন্ধুরাও আমার এমন আচরণের সঙ্গে অভ্যস্ত। বন্ধুদের সঙ্গে হয়তো এই মুহূর্তে আমি কথা বলছি, আবার ঠিক পরের মুহূর্তেই কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছি। নিশ্চয়ই আমার মাথায় কোনো না কোনো ‘আইডিয়া’ খেলা করতে থাকে। গত কয়েক বছরে এমন ঘটনা অজস্রবার হয়েছে। বন্ধুরা তখন কথা থামিয়ে দিয়ে মজা করে বলে, ‘ওহ, বুঝতেই পারিনি তুমি কাজ করছ!’
কয়েকটা শব্দ একটা মানুষকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিতে পারে। আবার কয়েকটা শব্দই পারে একটা ভেঙে পড়া মানুষকে জোড়া লাগাতে। আমি আশা করব, আপনারা আপনাদের শব্দগুলো দ্বিতীয় কাজটাতেই ব্যয় করবেন। কারণ, না-বলা কথা আপনাকে যতটা কষ্ট দেবে, তার চেয়ে বেশি কষ্ট দেবে সেই কথাগুলো, যা বলে আপনি কারও মনে দুঃখ দিয়েছেন।
আমি বিশ্বাস করি, দিন শেষে আমি আমার প্রথম অ্যালবামে গাওয়া সেই গানের মতো। ‘জাস্ট আ গার্ল ট্রাইয়িং টু ফাইন্ড আ প্লেস ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’। আমি সেই মেয়ে, যে বেঁচে থাকার জন্য গান লেখে। নানা দেশ ঘুরে ঘুরে গান গায়। এই জীবন থেকে আমার পাওয়া তাহলে কী? আমি এমন অনেক দেশে গেছি, যে দেশের মানুষ ইংরেজি বলতে পারে না। অথচ আমার সঙ্গে গলা মিলিয়ে নির্ভুল উচ্চারণে আমার গান গায়। এর চেয়ে বিস্ময়কর অর্জন আর কী হতে পারে!
ইংরেজি থেকে অনুবাদ:
মো. সাইফুল্লাহ
সূত্র: বায়োগ্রাফি ডট কম