অভিযান

তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। দিনগুলো ছিল মাঞ্জা মারার ও ঝগড়া করে দ্রুত ভুলে যাওয়ার। রোজার ঈদের পক্ষপাতে আমার ড্রেসটাকে সেকেন্ড করার অপরাধ কোরবানি ঈদের আগে কোরবান করে দিয়ে আমার কাছে খেত ড্রেস হয়েও প্রথম হওয়া ড্রেস ধারি নাজু ফুফু ও তার ছোট বোন রুনুর সঙ্গে খাতির বেশি। কিছুটা হয়তো আমাদের রেডিওটা নষ্ট হওয়ায় শুক্রবার তিনটায় ঢাকা কেন্দ্রের নাটক শোনার নেশায় কিংবা গোষ্ঠীগত বড় বাড়ি ছেড়ে একক বাড়ি পাশাপাশি, তাই। বড়বাড়ি হওয়ায় বাচ্চাকাচ্চার সংখ্যাও বেশি।

মাধ্যমিকে আমরা দশ-বারোজন মেয়ে পড়ি। ঈদের দিন সব মেয়ে সেজেগুজে ড্রেসের পাল্লা দিয়ে এ ঘর ও ঘর ছাড়া কোনো কাজ নেই। কোরবানির ঈদে সুই টুকানো চান্নি থাকায় সন্ধ্যার পর শুরু হতো আবার ঘোরাফেরা। মাকে আসছি বলে রুনুর সঙ্গে বের হলাম। মা তখন আতিয়া (অধি) ফুফুকে নিয়ে মাথার চামড়া (কোরবানির পশু) নেওয়ায় ব্যস্ত, আড় চোখে দেখতেন, কিছু বলতেন না। ঈদের দিন একটু স্বাধীনতা পাওনাই। দরজায় এসে দেখি নাজু ফুফুও আছে। তিনজনে রাস্তায় উদ্দেশ্যহীন হাঁটাহাঁটি আর গল্প করা। নাজু একটা চিঠির লাইন শুনিয়ে হাসিতে গড়িয়ে পড়ছে। আমার হচ্ছে করছে এক দৌড়ে এসে তোমাকে দেখতে, কী বলিস, অতি উত্তেজনায় যার ইচ্ছেরা হচ্ছে হয়ে যায় তার সঙ্গে ইয়ে হয়। বেচারা গাবগাছ! গাব একটা নিরীহ ফল হলেও ততোধিক গো বেচারা তালতো ভাই আফছার সুন্দরী নাজুর ভাষায় হয়ে যায় গাবগাছ। আচ্ছা তুমি গাবগাছ পছন্দ কর না তাহলে বোনের বাড়ি এত বেশি যাও কেন? কিছুটা গম্ভীর হয়ে নাজু বলল তুইতো বড় হইয়ে গেছিছরে বুড়ি। চলতো তোর দাদির লাল নারিকেল গাছ থেকে নারিকেল পেড়ে খাই। আমরা সব মেয়েই মোটামুটি গাছে উঠতে পারি। আইত মোটাসোটা তুই পাড়বি। যতই জাম পাড়তে গিয়ে ডাল ভেঙে পড়তে গিয়ে চোখ খুলে দেখি নিচের ডালে আটকে গিয়ে সাহস দেখাই না কেন, এই চান্নিতে নারিকেল গাছে উঠতে কিছুতেই মন সাই দিল না। বললাম না না সঙ্গে বাঁশ ঝাড় চান্নিতে পেত্নীরা ঘুরতে বের হয়। আগেই জানতাম তুই পারবি না। চল শাহেদকে বলি।

শাহেদ আমার চাচাতো ভাই, ও বলল দিতে পারি, আমার দুই শত পঞ্চাশ হতে এখনো পঞ্চাশ বাকি তোমরা যদি দাও তাহলে বন্দুক কিনব। নাজু ফুফু ঘোষণা দিল তুই গাছে উঠবি না টাকা তুই দিবি। অগত্যা আর পঞ্চাশ হলে পাঁচশত হবে এই গল্প করার সুদ স্বরূপ আরও পঞ্চাশ কমে গেল। শাহেদ ভাই আমাদের পাহারায় রেখে দড়ি কাঁচি নিয়ে এক ছড়ি নারকেল পেড়ে দ্রুত সবাই বাড়ির পেছনে চলে গেলাম। সেখানে চীনাবাদাম গাছের স্তূপে বসে নারিকেল খেতে খেতে রুনু বলল চল ভাপা পিঠা বানাই। যেই কথা সেই কাজ এবার মিশন ভাপা পিঠা। তখন রান্না ঘরগুলো এখনকার মতো লাগোয়া থাকত না। কয়টায় শুরু করেছিলাম জানি না পিঠা খাচ্ছি হঠাৎ দাদুর কাশির শব্দ শোনা যাচ্ছে। দেখি রাত দুটো বাজে তাহাজ্জুদ পড়তে উঠে কি না এই ভয়ে বাকি কাই পুকুরে ফেলে দিয়ে যে যার ঘরে চলে গেলাম। আহ শান্তি!

কিন্তু সকালে ঘুম ভাঙল আরেক নাটকীয়তায়, ছোট ভাই মরিচ খেত থেকে মরিচ আনতে গিয়ে ছয়টি নারিকেল পেয়ে খুশি মনে বাড়ি নিয়ে আসে। টেনশনে দাদির সামনে যাই না। দাদি আমাকে অবাক করে দিয়ে বলে যাক বেশি নিতে পারে নাই। বউ নারিকেলতো ঝুনা হয়েছে জামাই আসবে ভাপা পিঠা বানাও। আমি বললাম আবার ভাপা পিঠা! দাদি বলে ভাপা পিঠা কই খাইছস। আহা ঈদ আহা দাদি!!