অভ্যাসে মজবুত হাড়

হাড় মজবুত রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। মডেল: কুমকুম হাসান। ছবি: অধুনা
হাড় মজবুত রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। মডেল: কুমকুম হাসান। ছবি: অধুনা

হাড়ের মূল উপাদান আমিষ, কোলাজেন ও ক্যালসিয়াম। প্রাকৃতিক নিয়মেই ৩০ বছর বয়সের পর থেকে হাড়ের ঘনত্ব ও পরিমাণ কমতে থাকে। হাড় দুর্বল ও ভঙ্গুর হতে থাকে। ৫০ থেকে ৬০ বছরের দিকে হাড় অনেক দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই সামান্য আঘাতেও বয়স্ক ব্যক্তির মেরুদণ্ড, কটি, পাঁজর ও কবজির হাড় ভেঙে যেতে পারে। এ বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী শামিমুজ্জামান বলেন, নারী বা পুরুষ ছোটবেলা থেকেই নিয়মিত ব্যায়াম ও পুষ্টিকর খাবার বা ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেলে হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি থাকে না বললেই চলে।

হাড় হলো শরীরের মূল কাঠামো, অথচ হাড়ের গুরুত্ব আপাতদৃষ্টিতে আমরা বুঝতে পারি না। শুধু সমস্যা হলেই বুঝতে পারি। এমনকি হয়ে যেতে পারি জড় পদার্থও। কিন্তু এত গুরুত্বপূর্ণ এই উপাদানের জন্য আমরা তেমন কিছুই করি না। একটু সচেতন হলেই হাড় মজবুত করে গড়ে তুলতে পারি। কিছু দৈনন্দিন অভ্যাসই পারে হাড়কে মজবুত করে তুলতে।

যা যা করবেন

নিয়মিত ব্যায়াম

যেমন হাঁটা, জগিং, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করা এবং সব সময় কর্মক্ষম থাকা উচিত। কৈশোরে যথেষ্ট কায়িক পরিশ্রম করলে হাড়ের ঘনত্ব ও দৃঢ়তা বৃদ্ধির ফলে বার্ধক্যে হাড়ের ক্ষয় কম হয়।

পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে প্রতিদিন

মজবুত হাড়ের জন্য খাদ্যতালিকায় অবশ্যই ক্যালসিয়াম আছে এমন খাবার রাখতে হবে। স্বাদের কথা ভুলে গিয়ে নজর দিতে হবে পুষ্টির দিকে। কম চর্বিযুক্ত দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার খেতে হবে প্রতিদিন। দুধ, ডিম, কাঠবাদাম, মটরশুঁটি, ছোট মাছ, সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল রাখতে হবে খাদ্যতালিকায়। পালংশাক, সবুজ শাক, বাঁধাকপি, ব্রকোলি, লেটুস, শালগম ও শাকসবজিতে ভিটামিন কে, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম আছে; যা হাড় গঠনে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ভিটামিন ডি আছে এমন খাবার খান

ক্যালসিয়ামের সঙ্গে অবশ্যই ভিটামিন ডি গ্রহণ করতে হবে। খাবারের মাধ্যমে যে ক্যালসিয়াম দেহে নেওয়া হয়, তা হাড় দ্বারা শোষিত হয় ভিটামিন ডি-এর মাধ্যমে। যদি দেহে ভিটামিন ডি-এর অভাব থাকে, তবে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরেও হাড়ের সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা যাবে না।

দেহে ভিটামিন ডি-এর অভাব পূরণেও কাজ করতে হবে। মাছ, মাছের তেল, দুধ, সয়া দুধ ও ফলমূলে রয়েছে ভিটামিন ডি। চিংড়ি, টুনা মাছ, কমলার রস, ডিমের কুসুমে পাবেন ভিটামিন ডি। সূর্যের আলোর মাধ্যমেও দেহের ভিটামিন ডি-এর চাহিদা পূরণ সম্ভব।

গায়ে রোদ লাগান

সপ্তাহে তিন দিন ১০-১৫ মিনিট সূর্যের আলো পুরো দেহে পড়তে দিন। ভিটামিন ডি-এর সবচেয়ে বড় উৎস সূর্যের আলো। এই আলো দেহের ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণ করে এবং হাড় মজবুত করে।

কী কী করবেন না বা এড়িয়ে যাবেন

ক্যাফেইন কম খাবেন

ক্যাফেইন ক্যালসিয়াম রোধ করে। দিনে ৩০০ মিলিলিটার কফি বা দুই কাপের বেশি কফি পান করা উচিত নয়। এর চেয়ে বেশি কফি পান করলে অবশ্যই অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা উচিত।

কোমল পানীয় থেকে দূরে থাকুন

কোমল পানীয়ও হাড়ের ক্ষতি করে থাকে। গবেষণায় দেখা যায়, কোমল পানীয়তে বিদ্যমান ফসফরিক অ্যাসিড হাড় ক্ষয়ের জন্য দায়ী।

মানসিক চাপ দূরে রাখুন

মানসিক চাপের সঙ্গে হাড়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। মানসিক চাপে থাকলে দেহে নিঃসরণ হয় কর্টিসোল নামক হরমোনের, যা হাড়ের ক্ষয়ের জন্য বিশেষভাবে দায়ী। তাই মানসিক চাপ যত দূরে রাখবেন, আপনার জন্য ততই ভালো।

বন্ধ করুন ধূমপান ও মদ্যপান

ধূমপানের ফলে হাড়ের ক্ষয় বাড়তে থাকে এবং এর জন্য হাড়ের ভঙ্গুরতা বাড়ে। যাঁরা নিয়মিত ধূমপান, মদ্যপান করেন, তাঁদের দেহে খাবারের পুষ্টি সঠিকভাবে পুরো শরীরে সরবরাহ হয় না। খাবার খাওয়ার পরেও পুষ্টি সঠিকভাবে হাড়ে না পৌঁছার কারণে হাড় ক্ষয় হতে থাকে। তাই সুস্থ দেহ ও হাড়ের জন্য ধূমপান, মদ্যপান বন্ধ করে দিন।

লেখক: চিকিৎসক